ঢাকা, বুধবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২২ মে ২০২৪, ১৩ জিলকদ ১৪৪৫

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পর্যটনে নেপালকে ছাড়াতে পারবে বাংলাদেশ, যদি...

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৭
পর্যটনে নেপালকে ছাড়াতে পারবে বাংলাদেশ, যদি... নেপালের কাঠমান্ডু শহরে পর্যটকদের প্রধানতম আকর্ষণ পাঠান দরবার স্কয়ার। ছবি: সোহেল সরওয়ার, বাংলানিউজ

নেপাল থেকে ফিরে: ‘নিরাপত্তা, পানাহার, প্রাকৃতিক পরিবেশে আধুনিক হসপিটালিটি আর সুন্দর ব্যবহার। এ চারটি বিষয় নিশ্চিত করতে পারলে পর্যটনে নেপালকে ছাড়াতে পারবে বাংলাদেশ।’

কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বসে রোববার (১২ মার্চ) বিকেলে কথাগুলো বলেছেন দ্য স্পন্দন লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ মো. মাসুদুর রহমান।

কাঠমান্ডু ও পোখারার দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, নেপালের প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে গেলে মাউন্ট এভারেস্ট, উঁচু পাহাড় ও ছোট্ট ছোট্ট খরস্রোতা নদী আর ফেউয়া হ্রদ।

কৃত্রিম সম্পদের মধ্যে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী সব মন্দির, প্যাগোডা ও কাঠের আসবাবে অসাধারণ কারুকার্যখচিত স্থাপনা। অথচ বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, বিশ্বে অদ্বিতীয় সুন্দরবন, বিশাল কাপ্তাই হ্রদ, কুয়াকাটা, পতেঙ্গাসহ অনেক ছোট ছোট সৈকত, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি-বান্দরবানের গহিন অরণ্য, সিলেটসহ দেশজুড়ে অজস্র ঝরনাধারা, হাওর-দীঘি আর নদ-নদী। নেপাল।  ছবি: বাংলানিউজ

তিনি বলেন, আমাদের এভারেস্ট নেই। কিন্তু কক্সবাজার তো আছে। শুধু কক্সবাজারেই যদি কয়েক বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে বিদেশি পর্যটকদের জন্য একটি স্পেশাল টুরিস্ট জোন করা যায় তবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। ওই জোনে বিশ্বমানের হোটেল, পানশালা, রেস্টুরেন্ট, ক্যাসিনো, ম্যাসেজ পার্লার, স্টুডিও হল সব থাকতে হবে।    

নেপাল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, এখানে স্পেশাল টুরিস্ট বাস আছে। যে বাসে কোনো তল্লাশি নেই, পুলিশ চোখ তুলেও তাকায় না। ওই বাসের চালকদের ব্যবহার এত সুন্দর মন ভরে যায়। আমাদের পর্যটন করপোরেশন চাইলে অনুরূপ বাস-মাইক্রোবাস চালু করতে পারে। এসব গাড়ির চালকদের সিকিউরিটি মানি নিয়ে লাইসেন্স বা টোকেন ইস্যু করতে হবে। বড় বড় পর্যটন স্পটগুলো সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে, যাতে পর্যটকদের ধারণা দিতে পারে। এ ছাড়া তারা যাতে বিদেশি পর্যটকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার না করে কিংবা বিরক্তি প্রকাশ না করে।

শনিবার (১১ মার্চ) সারাংকোটে কথা হয় বিয়ানিবাজার থেকে আসা সঞ্জয় পালের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, নেপাল পর্যটকদের আকর্ষণ করছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অটুট রাখায়। পোখারা থেকে সামারকোট এসে অবাক হয়ে দেখলাম পাহাড়চূড়ায় ওঠার সিঁড়িগুলো পাকা নয়। স্রেফ পাথরের টুকরা ফেলে দেওয়া হয়েছে। কোনোটা নড়বড়ে, কোনোটা পড়ে গেছে। কিন্তু বিদেশি নারী-পুরুষরা থ্রিল অনুভব করছে। অথচ আমাদের দেশে পাহাড় কেটে সিঁড়ি পাকা করে দেওয়া হয়। আমাদের জন্য এটি একটি শিক্ষা। আবার পাঠান দরবার এলাকায় শত বছরের পুরনো সব ভবনের সূক্ষ্ম কারুকার্যখচিত আসবাব অবিকল রেখে দেওয়া হয়েছে। একই অবস্থা মন্দির-প্যাগোডায়ও। নেপাল।  ছবি: বাংলানিউজ

তিনি বলেন, এখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অটুট রেখেই সড়ক প্রশস্ত করা হচ্ছে। পাহাড়চূড়াও হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস গড়ে তোলা হচ্ছে। আদিবাসীদের ছোট্ট ছোট্ট খুপরিতে কোমর তাঁতে তৈরি পোশাক, হ্যান্ডিক্রাফটস, অলংকার বিক্রি হচ্ছে। এসব আমাদের দেশেও আছে, শুধু পরিচর্যা আর পরিকল্পনা নেই।

বাংলাদেশ ইপিজেড ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের (বেপজিয়া) জোনাল এক্সিকিউটিভ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজিজুল বারী চৌধুরী জিন্নাহ বাংলানিউজকে বলেন, নেপালের চেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে আসবে যদি তাদের নিরাপত্তা দিতে পারি। সম্প্রতি আমার একজন ইতালির বায়ার খুব করে ধরলেন রাঙামাটি নিয়ে যেতে। কিন্তু নিরাপত্তা ইস্যুতে আমি আগ্রহী হইনি। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। নেপাল।  ছবি: বাংলানিউজ

তিনি বলেন, নেপালের স্থানীয়রা পর্যটনবান্ধব। তারা বুঝে গেছে, পর্যটক মানেই ডলার, সোনার ডিম পাড়া হাঁস। আমাদের বিদেশি পর্যটকদের জন্য এখনো রাতটাই হচ্ছে বড় বিভীষিকা, চারদেয়ালে বন্দি সময়।

ফেউয়া লেকে বোটে চড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন চট্টগ্রামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউএসটিসির একজন ছাত্র। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমত বিশ্বসেরা মাউন্ড এভারেস্ট এদেশে। কিন্তু সবাই তো আর এভারেস্ট জয় করতে আসেন না। বেশিরভাগই আসেন বেড়াতে। পর্যটকদের বেশিরভাগ সময় কাটে পাহাড়ি সড়কে লং ড্রাইভে। অথচ এসব ন্যাড়া পাহাড়ের চেয়ে আমাদের তিন পার্বত্যজেলার পাহাড়ি সৌন্দর্য অনেক বেশি। আমি নিজে সড়ক পথে তিন জেলা ঘুরেছি।
নেপাল।  ছবি: বাংলানিউজ
আমার কাছে মনে হয়েছে খাগড়াছড়ির সাজেক, আলুটিলা, অরণ্যকুটির, রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদ, রাজবন বিহার, বান্দরবানের চিম্বুক, নীলাচল, নীলগিরি, বগালেক, থানচির নাফাকুম, আমিয়াকুম, লামা-আলী কদম সড়কের যে সৌন্দর্য তা যদি বিশ্বের পর্যটকেরা জানত তবে বাংলাদেশ হতো পর্যটন তীর্থ। সরকারের উচিত সারাদেশে বিচ্ছিন্নভাবে পর্যটন শিল্পের বিকাশে যে উদ্যোগ তার সঙ্গে একটি বিশেষ বিভাগ বা জেলাকে ফরেন টুরিস্ট জোন হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া। এক্ষেত্রে বৃহত্তর চট্টগ্রামই হতে পারে পর্যটনের রাজধানী। বিশ্বের পর্যটকদের নতুন ডেসটিনেশন।

** 'সম্প্রীতির শহরে অস্থির রাজনীতি, তবুও পর্যটক টানছে নেপাল'
    
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৭
এআর/টিসি/জেডএম

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।