ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

ক্যাবল কারে আগ্নেয়গিরির চূড়ায় (পর্ব-২)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৮
ক্যাবল কারে আগ্নেয়গিরির চূড়ায় (পর্ব-২) ছবি-বাংলানিউজ

[পূর্বপ্রকাশের পর]
বিচিত্র পাথরের রাজ্য দেখতে দেখতে এগিয়ে চলেছি। গন্তব্য টেইডে ন্যাশনাল পার্কের ক্যাবল কার বেসক্যাম্পের দিকে। পথের চারপাশে ছোট বড় নানারকম পাথর। এগুলো আসলে আগ্নেয়গিরি থেকে বেরিয়ে আসা লাভা, কালের বিবর্তনে পাথরের রূপ ধারণ করেছে। অনেক পাথর এখনও শক্ত লাভার রূপেই আছে, লোহার মতো রং তাদের। কিছু পাথরের রং নীলচে ও হলদেটে।

গাইড বললেন, এই রঙিন পাথরগুলো সারা পৃথিবীতে শুধু এখানেই পাওয়া যায়। লালচে কালো পাথুরে এই মরুভূমি দেখে মনে হচ্ছিলো বুঝি পৃথিবীতে নয়, মঙ্গলগ্রহে চলে এসেছি।

বাসের ভিতর পিনপতন নীরবতা। সবাই মোবাইল আর ক্যামেরা বাগিয়ে ছবি তোলায় ব্যস্ত। এরইমধ্যে পৌঁছে গেলাম ক্যাবল কার বেসক্যাম্পে। কেবল কারের টিকিট আমরা আসার পথে বাসেই কেটে নিয়েছিলাম। সুতরাং, দেরি না করে নেমে পড়লাম ক্যাবল কারে ওঠার জন্য। ছবি-বাংলানিউজ

গাইড বললেন, এখানে আমরা ৪৫ মিনিট সময় পাবো। এরমধ্যেই সব দেখা শেষ করে আবার বাসে ফিরতে হবে, এরপর রওয়ানা হবো অন্য গন্তব্যে। তাই তাড়াতাড়ি এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু দেখা গেলো, ক্যাবল কারে ওঠার জন্য বিশাল লাইন!
 
এখানে মাত্র দু’টি ক্যাবল কার যাত্রী নিয়ে চলাচল করে, একেকটিতে ১২-১৫ জন যাত্রী ধরে। ওপরে যেতে সময় লাগে আট মিনিটের মতো। ভীষণ উত্তেজনা অনুভব করছিলাম, সেই সঙ্গে ভয়ও করছিলো। কারণ, আমার উচ্চতাভীতি আছে।

তাছাড়া এতো উঁচুতে আগে কখনো উঠিনি। আগের দিন অনলাইনে পড়ছিলাম অল্টিচ্যুড সিকনেসের কথা, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেকটা ওপরে  গেলে বাতাসের কম চাপের জন্য মানুষ অসুস্থ বোধ করে। ভাবছিলাম সেরকম কিছু হবে না তো! কিন্তু  ক্যাবল কারে ওঠার আসাধারণ  অভিজ্ঞতা নেওয়ার লোভও সামলাতে পারছিলাম না।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১১ হাজার ৫শ ফুট ওপরে এই বেসক্যাম্প। এখানে আবহাওয়া ভীষণ ঠাণ্ডা। মাথার ওপর জ্বলজ্বলে সূর্য থাকা সত্ত্বেও বাতাস একটুও গরম নয়। সবাই উপযুক্ত শীতের কাপড় পড়ে এসেছে।

অনেকক্ষণ উত্তেজনাকর অপেক্ষার পর ক্যাবল কার এলো এবং যাত্রী নিয়ে রওয়ানা হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই কেবল কার সাঁই করে বেশ কিছুটা ওপরে উঠে গেলো। ভয়ে চোখ বন্ধ করে রইলাম কিছুক্ষণ। চোখে রোদ লাগতে তাকিয়ে দেখলাম অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য।

ছবি-বাংলানিউজচারপাশে লালচে পাথুরে পাহাড়ি ভূমি। একই রঙের পাহাড় লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। একপাশে পাহাড়ের গায়ে বিশাল অগভীর গর্ত। এসব কেন এভাবে সৃষ্টি হয়েছে, কে জানে! এ যে আমাদের চেনাজানা পৃথিবী, সেটা মনেই হচ্ছিলো না। মনে হচ্ছিলো, যেন অন্য কোনো গ্রহে চলে এসেছি।

এটি বেশ বিখ্যাত শ্যুটিং স্পট, অনেক হলিউড সিনেমার শ্যুটিং এখানে হয়েছে। এ পার্কে ‘স্টার ওয়ার্স’ সিনেমার শ্যুটিং হয়েছিলো। এ সিনেমায় বোঝানো হয়েছিল এটা অন্য কোনো গ্রহ। সত্যিই, না দেখলে বোঝা যায়না যে জলমাটির এই পৃথিবীতে এতটা বৈচিত্র্যও থাকতে পারে।

চলবে...

** আগ্নেয়গিরি চূড়ার দ্বীপ টেনেরিফ

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৮
এনএইচটি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।