ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

হ্যানয় ওল্ড কোয়ার্টার-ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতির মিশেল

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৯
হ্যানয় ওল্ড কোয়ার্টার-ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতির মিশেল

ভিয়েতনাম ঘুরে এসে: ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণের নাম ‘ওল্ড কোয়ার্টার’। শত বছরের ঐতিহ্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতির মিশেলে এখনো নিজের আধিপত্য ধরে রেখেছে হাজার বছর পুরনো শহরটি। ভিয়েতনামে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সামিনা নাজ-এর সাক্ষাৎকার শেষে আমার গন্তব্য ছিল সেখানকার থাং লং ওয়াটার পাপেট শো থিয়েটার। দেশে থাকতে ট্রাভেলার আশরাফুজ্জামান উজ্জ্বল ভাই বিশেষ করে বলেছিলেন এখানকার ‘ওয়াটার পাপেট শো’ এর কথা। ওল্ড কোয়ার্টারে যাবো শুনে রাষ্ট্রদূত গাড়িতে করে নামিয়ে দিলেন থিয়েটারের সামনে। পুরো ওল্ড কোয়ার্টারের সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ কাহিনী থাকছে এখানে।

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
প্রায় এক বর্গ কিলোমিটারের কিছু বেশি জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে ওল্ড কোয়ার্টার। ১০১০ সালের দিকে লি বংশের রাজত্বকালে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে ব্যবহৃত হতো এই ওল্ড কোয়ার্টার।

সিটাডেল অব থাং লাং বা হ্যানয় সিটাডেলের বাইরে এর অবস্থান। সেসময়ে ওল্ড কোয়ার্টারের ছিল ৩৬টি সড়ক এবং প্রতিটি নির্দিষ্ট একটি করে পণ্য বিকিকিনির বাজার বলে প্রসিদ্ধ ছিল। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রেঞ্চদের দখলে থাকা শহরটির ওপর জাপানি আগ্রাসনে বেশকিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৯৫ সালে দেশটির সরকার ওল্ড কোয়ার্টার হিসেবে উত্তরে হাং ডাউ স্ট্রিট; দক্ষিণে হাং বং স্ট্রিট, হাং গাই স্ট্রিট, চাউ গো স্ট্রিট এবং হাং থুয়াং স্ট্রিট; পূর্বে ট্রান কোয়াং খাই স্ট্রিট এবং ট্রান নাথ স্ট্রিট এবং পশ্চিমে ফুং হাং স্ট্রিট এর মধ্যে এর সীমানা নির্ধারণ করে দেয়। তবে এর বাইরেও আদি ওল্ড কোয়ার্টারের কিছু সড়ক আছে এখানে।

ওয়াটার পাপেট শো

ওয়াটার পাপেট শো বা পানির ওপর পুতুল নাচের এই আয়োজন হ্যানয়ের ওল্ড কোয়ার্টারে খুবই বিখ্যাত। প্রতিদিন এক ঘণ্টা বিরতিতে শো অনুষ্ঠিত হয় এখানে। তিনটি ক্যাটাগরিতে প্রতিজনের প্রবেশমূল্য পড়বে ২ লাখ, দেড় লাখ এবং ১ লাখ ভিয়েতনাম ডং। বাংলাদেশি মুদ্রায় যথাক্রমে প্রায় ৭৩০ টাকা, ৫৪০ টাকা এবং ৩৬৫ টাকা।

ওয়াটার পাপেট শো।  ছবি: শাওন সোলায়মানবাংলাদেশের পুতুল নাচের মতো ভিয়েতনামেও পুতুল নাচ অতীত ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রায় ৪৫ মিনিটের পুতুল নাচে দেশটির ইতিহাস এবং সংস্কৃতি বিশেষ করে গ্রামীণ জীবনযাত্রার চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়। পুতুল নাচের সময় যেসব কথা এবং গান শিল্পীরা পরিবেশন করেন সেগুলো ভিয়েতনামের স্থানীয় ভাষায়। তাই সেসব হয়তো বুঝতে না পেরে ঘুমিয়ে গেলে সুরের মূর্ছনা থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন।

হোয়ান কিয়েম লেক
ভিয়েতনাম মিথোলজির অবিচ্ছেদ্য অংশ হোয়ান কিয়েম লেক। প্রচলিত আছে, রাজ শাসনামলের সময় এক বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষায় লেকটিতে থাকা এক কচ্ছপের শরণাপন্ন হয়েছিলেন তখনকার এক রাজা। কচ্ছপ তাকে একটি বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন তলোয়ার দেয় যা দিয়ে যুদ্ধ জয় করে দেশকে রক্ষা করেন তিনি। রাজা যখন তলোয়ারটি কচ্ছপকে ফিরিয়ে দিতে চাইলে কচ্ছপ সেটি আর ফেরত নেয় নি। বরং এই তলোয়ার যতদিন টিকে থাকবে ততদিন ভিয়েতনাম টিকে থাকবে এমন বার্তা দিয়ে লেকের জলে হারিয়ে যায় ওই কচ্ছপ।

হোয়ান কিয়েম লেক দিনে দেখতে যেমন দেখায়।  ছবি: শাওন সোলায়মানএখানকার এক ট্যুরিস্ট গাইড মিস্টার মিন লো মো বলেন, সাধারণ কচ্ছপ আর এখানকার কচ্ছপের মধ্যে পার্থক্য আছে। হোয়ান কিম লেকের কচ্ছপগুলোর ওপরের খোলস বেশ নরম।

সেই ঘটনার কিছু দিন পর ওই কচ্ছপের মরদেহ পাওয়া গেলে লেকের ভেতরে একটি দ্বীপ বানিয়ে মন্দির করে কচ্ছপটির মরদেহ রাখা হয়। এখনো লেকটিতে ওই কচ্ছপ প্রজাতির কচ্ছপ পাওয়া যায়।

হোয়ান কিয়েম লেক রাতে দেখতে যেমন দেখায়।  ছবি: শাওন সোলায়মানএসবের বাইরেও ওল্ড কোয়ার্টারে ঘুরে দেখার জন্য আছে রোমান ক্যাথলিক চার্চ সেইন্ট জোসেফ ক্যাথেড্রেল, বাচ মা টেম্পল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন কারাগার হোয়া লো প্রিজন, অপেরা হাউজ ইত্যাদি।

এছাড়াও সোভিয়েতদের নির্মিত ডং জুয়ান মার্কেটও আছে এখানে। অনেকটা নিউ মার্কেটের হকার্স মার্কেটের মতো। আছে অপেরা হাউজ। আর এসব কিছুই একে অপরের থেকে কমবেশি এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে। হাঁটতে কষ্ট হলে খুবই অল্প ভাড়ায় নিতে পারবেন সাইকেল বা বাই সাইকেল।

...বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৯
এসএইচএস/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।