ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

‘খোশ আমদেদ মাহে রমজান’

রমজানে জনদুর্ভোগ বাড়ে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫১ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৫
রমজানে জনদুর্ভোগ বাড়ে এমন কাজ করা থেকে বিরত থাকুন

বছর ঘুরে আবার এসেছে সিয়াম সাধনার পবিত্র মাস রমজান। এ মাসে মুসলমানরা সারাদিন রোজা রাখেন।

মন্দ কাজ এড়িয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রহমত লাভের জন্য নামাজ-বন্দেগিতে সচেষ্ট থাকেন। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও এর ব্যতিক্রম নন।

যুগ যুগ ধরে এখানে যথাযোগ্য মর্যাদায় রমজান পালিত হয়ে আসছে। রোজা শেষে সবাই মিলে ইফতার করা ও আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদের ইফতার পাঠানোর রেওয়াজও বহু পুরনো। ইফতারিতে নানা পদের ঝাল-মিষ্টি খাবার, শরবত ও ফলফলাদির সমাহার ঘটে। বিশেষ করে ছোলা ভাজা-পেঁয়াজু-মুড়ি মাখার কদর বেড়ে যায়। ফলে এ সময় মুখরোচক খাদ্য-পানীয়ের চাহিদার সঙ্গে এর বিভিন্ন উপকরণের কেনাকাটাও বেশ বেড়ে যায়। এই সুযোগে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের দাম মাত্রাতিরিক্ত বাড়িয়ে মুনাফাখোরিতে মেতে ওঠে। বাজারে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।

দুঃখজনক হলেও প্রতিবছরই এমনটি হচ্ছে। এতে রোজাদারদের নাভিশ্বাস উঠলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার চেয়ে লোকদেখানো ভূমিকা পালনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উত্সাহ চোখকে পীড়া দেয়। রমজান কৃচ্ছ্রতার মাস হলেও একশ্রেণীর মানুষের বাহুল্য খরচও মাত্রাছাড়া হয়ে ওঠে। তাদের কেনাকাটায় অসংযমী হয়ে ওঠাও বাজারকে প্রভাবিত করে। ধর্মীয় ও সামাজিক কোনো দৃষ্টিতেই এসব গ্রহণযোগ্য না হলেও এটাই যেন রীতি হয়ে উঠেছে।

এক্ষেত্রে সরকার ও সামাজিক নেতৃত্ব কারোরই যথাযোগ্য ভূমিকা নেই। রমজানের আগে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নানামুখী উদ্যোগে-আয়োজন প্রচার-প্রচারণাতেই প্রাধান্য পায়। সমাজ ও বাজারে এসবের কার্যকর প্রভাব দেখা যায় না। ফলে ব্যবসায়ীদের কূটকৌশলের শিকার হয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষতি ও দুর্ভোগ বেড়ে গেলেও করার কিছু থাকে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নড়াচড়া যেমন সুযোগসন্ধানীদের নিবৃত্ত করতে পারে না, তেমনি টিসিবি সীমিত আকারে হাতেগোনা কিছু পণ্য কিছুটা কম দামে বিক্রি করলেও বাজারে এর প্রভাব কমই দেখা যায়।

সবকিছু উচ্চমূল্যে কিনতে গিয়ে রোজাদারদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। পণ্যে ভেজালও বেড়ে যায় এ সময়। তাই আমরা সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি অনুরোধ জানাব, অন্তত রোজার মাসে অতি মুনাফা বা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে চেষ্টা করবেন। সেই সঙ্গে সরকারও আন্তরিকভাবে দায়িত্বপালন করবে।

এছাড়া রমজান মাসে যাতায়াত ও বিদ্যুত্ সঙ্কটে রোজাদারদের ভোগান্তি লাঘব করাও জরুরি। একইসঙ্গে এবার রোজার আগেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যার কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগ যাতে আর বাড়তে না পারে, সেদিকেও নজর দিতে হবে। এখনই জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ, উদ্ধার ও পুনর্বাসন তত্পরতা জোরদার না করলে বন্যা-উপদ্রুত অঞ্চলের রোজাদারদের দুর্ভোগ অসহনীয় হয়ে উঠবে।

দিনের বেলা খাদ্য-পানীয় বর্জনের পাশাপাশি রোজাদারদের বাকসংযমীও হতে হবে। সংযমের মাসে যদি মানুষের জিহ্বা সংযত না থাকে, তবে সেটা রোজা পালনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে সবার সংযত আচরণ কাম্য।

আসন্ন রমজানে সবার মতো আমরাও আশা করব, সরকার দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনের চলমান সমস্যাগুলো সহনীয় করে তুলবে, যাতে অন্তত রমজান মাসটা মানুষ একটু স্বস্তিতে কাটাতে পারে। আমরা একইসঙ্গে আশা করি, সমাজে নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রত্যেকেই রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় সচেষ্ট হবেন, রোজাদারদের সহযোগিতা করবেন এবং মানুষ যাতে অন্তত বাড়তি কষ্ট না পায়, সেটা নিশ্চিত করবেন। সবাইকে রমজানের শুভেচ্ছা। সেই সঙ্গে পবিত্র রমজান মাসকে সাদর সম্ভাষণ, খোশ আমদেদ মাহে রমজান, অাহলান সাহলান ইয়া মাহে রমজান।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘন্টা, জুন ১৭, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।