ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

বাংলানিউজকে মাওলানা কাসেমী

রমজানে সবাই সবার জন্য বেশি বেশি দোয়া করুন

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫০ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৫
রমজানে সবাই সবার জন্য বেশি বেশি দোয়া করুন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হাফেজ মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান কাসেমী। বিশিষ্ট আলেম ও ইসলামি চিন্তাবিদ।

তিনি শাহ মাখদুম রুপোষ দরগা মসজিদ, রাজশাহীর খতিব ও শাহ মাখদুম কেন্দ্রীয় ঈদগাহের ইমাম। সিল্কসিটি রাজশাহীর ধর্মীয় অঙ্গনে তার রয়েছে সরব উপস্থিতি। গত ১২ জুন শুক্রবার জুমার নামাজের পর বাংলানিউজের মুখোমুখি হয়েছিলেন। কথা বলেছেন রমজান ও ঈদের বিভিন্ন প্রসঙ্গে। তার সেই কথোপথনের নির্বাচিত অংশ বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য উপস্থাপন করা হলো। কথা বলেছেন বাংলানিউজের ইসলাম পাতার সম্পাদক- মুফতি এনায়েতুল্লাহ

মুক্তির বার্তাবাহী রমজান
রমজানুল মোবারক প্রতি বছর আসে উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য রহমত, মাগফেরাত ও কবর আজাব মুক্তির সুমহান বার্তা নিয়ে। এ মাসে আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় বান্দাদের জন্য খুলে দেন ফজিলতের অগণিত দ্বার। এ জন্য আমাদের সবার উচিত মহিমান্বিত এ মাসের প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা। রমজান মাসের ফজিলত ও বরকত সম্পর্কে হজরত রাসূলে কারিম (সা.)-এর অসংখ্য হাদিস রয়েছে।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর বরাতে বর্ণিত, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন রমজান মাস আরম্ভ হয়, তখন থেকে ঊর্ধ্ব জগতের (তথা রহমতের) দ্বারগুলো খুলে দেয়া হয় (সে মতে বেহেশতের দরজাগুলোও খুলে দেয়া হয়) এবং জাহান্নামের সমুদয় দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় (অধিক দুষ্ট-ক্ষতিকর, নেতৃস্থানীয়)। শয়তানগুলোকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।

হাদিসের এই বর্ণনায় ঊর্ধ্ব জগতের দরজাগুলো খুলে দেয়ার উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য এক বর্ণনায় রহমতের দরজা খোলার উল্লেখ আছে এবং আরেক বর্ণনায় বেহেশতের দরজা খোলার উল্লেখ আছে। সব বর্ণনার মূল তাত্পর্য একই। রমজান মাসে বিশেষরূপে অতিমাত্রায় এবং কোনো নির্দিষ্ট সময়ের বিশেষত্ব লক্ষ্য না করে সর্বদা আল্লাহর রহমত ও নেয়ামতের প্রধান কেন্দ্র বেহেশতের দরজাগুলোও রমজান মাসের সম্মানার্থে খুলে রাখা হয়।

রমজানের বিশেষত্ব
রমজান মাসের বিশেষত্ব হিসেবে বিশ্ববাসীর প্রতি যেমন রহমত অবতীর্ণ করার ব্যবস্থা রাখা হয়, তেমনি রহমতের বিপরীত আল্লাহতায়ালার গজব ও আজাবের কারণ তথা শয়তানি আন্দোলন ও কার্যকলাপ কম করার ব্যবস্থাও করা হয়, বড় শয়তানগুলোকে বন্দি করে রাখা হয়।

পবিত্র রমজানে পাপাচারের কারণ
আল্লাহতায়ালা সর্বশক্তিমান। শয়তানি আন্দোলন ও কার্যকলাপ সমূলে উচ্ছেদ করার ইচ্ছা করলে মুহূর্তের মধ্যে তিনি তা করতে পারেন। কিন্তু এতে জাগতিক জীবনের পরীক্ষার উদ্দেশ্য পণ্ড হয়, তাই আল্লাহতায়ালা তা করেন না। এ জন্যই ইবলিসের সাধারণ অনুচররা এবং মানুষের আকৃতিতে শয়তান প্রকৃতির ব্যক্তি ও মানুষের নফসে আম্মারা তদুপরি ১১ মাস শয়তানি আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া প্রভৃতির সক্রিয়তা বন্ধ করা হয় না। ফলে দেখা যায়, মানুষ রমজানে বিভিন্ন পাপাচার লিপ্ত। অবশ্য আল্লাহতায়ালা রমজান মাসের সম্মানার্থে স্বীয় বান্দাদের বিশেষ সুযোগ প্রদানার্থে নেতৃস্থানীয় বড় শয়তানগুলোকে বন্দি করে ফেলেন। ফলে আল্লাহর প্রতি ধাবিত হওয়ার পথ ধরা সহজ হয়ে যায়। মানুষ যেন এই সুবর্ণ সুযোগ হেলায় না হারায়।

সুযোগ নষ্ট করা যাবে না
রমজান মাসে পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার তরফ থেকে একজন ফেরেশতা আল্লাহর বান্দাদের প্রতিদিন এই আহ্বান জানাতে থাকে, ‘হে সত্যান্বেষী! সুপথের পথিক দ্রুত সম্মুখ পানে অগ্রসর হও; উন্নতি লাভ করো। হে কুপথগামী (হেলায় এ সুযোগ হারিও না)। এ পবিত্র রমজান মাসে স্বীয় আত্মসংশোধন ও পবিত্রতা লাভে সচেষ্ট হও এবং কুকার্য থেকে ক্ষান্ত হও, সতর্ক হও’ অর্থা‍ৎ যেহেতু পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহতায়ালার রহমতের দরজাগুলো সর্বদা খোলা থাকে, রহমত লাভ করা সহজ-সুলভ হয়, তাই এ সুযোগের প্রতিটি মুহূর্তকে স্বীয় উন্নতির সম্বলরূপে গ্রহণ করা দরকার। নিজ নিজ জীবনের উন্নতি সাধনে অগ্রসর হওয়া, অগ্রণী হওয়ার চেষ্টা করা, যেরূপ কোনো ব্যবসায়ী স্বীয় ব্যবসার জন্য মৌসুম-সুযোগ ও মার্কেট, মেলা বা প্রদর্শনীকে উন্নতির বিশেষ সহায়ক ও সম্বলরূপে গ্রহণ করে থাকে।

রমজানেই ক্ষমালাভের সুযোগ
আল্লাহতায়ালা বড় মেহেরবান ও করুণাময়! তাই তিনি স্বীয় বান্দাদের পুরো রমজানে ক্ষমালাভের সুযোগ দিয়ে রেখেছেন এবং বারবার ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। এ আহবান শুধু এক দু’বার নয়, বরং প্রতিটি দিনই এই আহ্বান আসতে থাকে। যাদের রুহানি শ্রবণশক্তি আছে, তারা সরাসরি সেই আহ্বান শুনতে পারেন। যারা সেই স্তরে পৌঁছতে পারেননি, আল্লাহতায়ালা তাদের সত্য রাসূলের মারফত সেই আহ্বানের সংবাদ পৌঁছে দিয়েছেন। সুতরাং রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও ফজিলতপূর্ণ। তাই এ মাসের প্রতিটি ক্ষণ যাতে আল্লাহর ইবাদতে অতিবাহিত হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। রমজান মাসে যাতে অবশ্যই কোনো ফরজ ইবাদত নষ্ট না হয়, সে বিষয়ে যেমনি সচেতন থাকতে হবে, তেমনি নফল ইবাদতগুলোও বেশি বেশি আদায় করতে হবে।

রমজান যেভাবে কাটানো দরকার
নফল ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে মহত্তম ইবাদত হলো কোরআনে কারিমের তেলাওয়াত, যে সব ফাজায়েলের কারণে রমজান মাস এত বরকতপূর্ণ মাসে পরিণত হয়েছে, তার মাঝে অন্যতম একটি কারণ এই যে, এই মাসে আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে তার প্রিয় রাসূল (সা.)-এর ওপর কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। কোরআন নাজিলের মাস এই রমজানে সবার উচিত বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা। অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে রমজানের পালিত ইবাদতের সওয়াব ও প্রতিদান অনেক অনেক বেশি। হাদিসে এসেছে- অন্য যে কোনো সময়ের ফরজের যে সওয়াব রমজানের নফল পালনে সে সওয়াব পাওয়া যায়। সুতরাং ফরজ আদায়ের পাশাপাশি অধিক পরিমাণে নফলও আদায় করা দরকার।

রমজানের নিয়মিত সব ইবাদত পালনের পাশাপাশি সব ধরনের পাপাচার ও গুনাহ থেকেও আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। এ মাসে যাতে একটি গুনাহও না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, বিশেষত রোজা অবস্থায় যাতে কোনো গুনাহ না হয় এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

অন্তত একজনকে ইফতার করান
মাহে রমজান ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহানুভূতির শিক্ষা দিয়ে থাকে। এ মাসের কারণে মানুষ ক্ষুধা ও তৃষ্ণার জ্বালা বুঝতে পারে। এ জন্য এক মুমিনের হৃদয় ধাবিত হয় অন্য মুমিনের সুখ-দুঃখের খবর সন্ধানে। যার বাস্তব রূপ প্রকাশ পায় ইফতারের মাধ্যমে। রাসূলে পাক (সা.) ইরশাদ করেন, রমজান মাসে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহগুলো মাফ হয়ে যাবে। সে দোজখ থেকে মুক্তি পাবে আর সে রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে, কিন্তু এতে রোজাদারের সওয়াব থেকে কিছুই ঘাটতি হবে না অর্থাৎ রোজাদারের সওয়াব কমবে না। এরূপ সওয়াব আল্লাহতায়ালা এমন ব্যক্তিকে দেবেন, যে শুধু এক পেয়ালা দুধ অথবা একটি খেজুর বা সামান্য পরিমাণ পানি দ্বারাও কাউকে ইফতার করাবে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তি মিটিয়ে খাওয়াবে আল্লাহ তাকে হাউজে কাওসার থেকে এমন শরবত পান করাবেন যাতে সে কখনও তৃষিত হবে না। এভাবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -বায়হাকি

তাই রোজাদারদের প্রতি আবেদন থাকবে, সম্ভব হলে রোজাদারকে বেশি বেশি ইফতার করানোর চেষ্টা করবেন, অন্তত একজনকে হলেও ইফতার করাবেন- এর অফুরন্ত সওয়াব।

রমজানে বেশি বেশি দোয়া করুন
রমজান দোয়া কবুল ও পুণ্য অর্জনের মাস। এ মাসে অবারিত রহমত-বরকতের পাশাপাশি দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে নিজেকে পাক-সাফ করে নেয়া যায়। মানবজাতির কল্যাণ ও মুক্তির জন্য এবং যে কোনো বিপদ-মসিবত থেকে উত্তরণে দোয়ার বিকল্প নেই। আমাদের ওপর আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এটা এক বড় ধরনের নিয়ামত ও অনুগ্রহ যে, তিনি আমাদের তাঁর কাছে দোয়া করার অনুমতি দিয়েছেন এবং দোয়া কবুলেরও ওয়াদা করেছেন। এ মর্মে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমার কাছে দোয়া কর, আমিই তোমাদের দোয়া কবুল করব। ’ -সূরা মুমিন : ৬০

হাদিসে তিন ব্যক্তির দোয়া কবুল হওয়ার কথা এসেছে, তার একটি হলো রোজাদারের ইফতারের আগ মুহূর্তের দোয়া। রমজানে মহানবী (সা.) বেশি বেশি আল্লাহর দরবারে দোয়া ও প্রার্থনার তাগিদ দিয়েছেন। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য হাসিল করা সহজ। তাই আমাদের উচিৎ হলো, সবাই সবার জন্য দোয়া করা। আমরা তো জানি না, কখন কার দোয়া কবুল হয়!

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘন্টা, জুন ২৯, ২০১৫
এমএ/

** পীর-আউলিয়াদের পূণ্যভূমি রাজশাহী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।