আজ অনুষ্ঠিত হবে ১৩তম তারাবি। আজকের খতমে তারাবিতে ১৬তম পারা তেলাওয়াত করা হবে।
সূরা কাহাফের আজকের তিলাওয়াতকৃত অংশের উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
৬০-৮২ নং হজরত খিজির (আ.)-এর সঙ্গে হজরত মূসা (আ.)-এর সাক্ষাতের বৃত্তান্ত আলোচনা করা হয়েছে। এ ঘটনা সম্পর্কে বিশেষ কয়েকটি আলোচনা-
আল্লাহতায়ালা তাদের দু’জনকে পৃথক দু’টি জ্ঞান দান করেছিলেন। হজরত খিজির (আ.) কে দিয়েছিলেন জাগতিক কার্যাবলীর রহস্য সম্পর্কীয় জ্ঞান। এ জ্ঞানের নাম আসারে কাউনিয়্যাহ। আর হজরত মূসা (আ.) কে দিয়েছিলেন আল্লাহতায়ালার বিধি-নিষেধ সম্পর্কীয় জ্ঞান। এ জ্ঞানের নাম শরিয়ত।
উপরোক্ত দু’টি জ্ঞানের মধ্যে শরিয়তের জ্ঞান শ্রেষ্ঠ। কেননা এ জ্ঞান দ্বারা একজন মানুষ আল্লাহকে সন্তুষ্টি করার পথ খোঁজে পায়। কিন্তু জাগাতিক কার্যাবলীর রহস্য সম্পর্কীয় জ্ঞান দ্বারা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার পথ পাওয়া যায় না। শরিয়তের জ্ঞান আখেরাতের নাজাতের জন্য দরকার। কিন্তু পরকালীন নাজাতের জন্য জাগতিক কার্যাবলীল রহস্য সম্পর্কীয় জ্ঞানের কোনো দরকার নেই। যে জ্ঞান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ও আখেরাতের নাজাত লাভের জন্য আবশ্যক সে জ্ঞানই সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞান।
আল্লাহতায়ালা হজরত মূসা (আ.) কে হজরত খিজির (আ.)-এর কাছে শিষ্যত্ব বরণ করে জ্ঞানর্জের জন্য পাঠাননি। হজরত খিজির (আ.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্যও পাঠাননি। কেননা, যুগের নবীই হলেন তার যুগের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। তবে পাঠিয়েছিলেন এ দীক্ষা দেয়ার জন্য যে, জ্ঞানের বহু শাখা আছে। একজন মানুষ যত বড়ই হোক না কেন- কোনো শাখাতে তার জ্ঞান যতো সমৃদ্ধই হোক না কেন জ্ঞানের অন্য অনেক শাখাতে সে অজ্ঞই থেকে যায়। যদিও এ অজ্ঞতা মানুষ হিসাবে তার জন্য কোনো দোষণীয় নয় বা অযোগ্যতা নয়। তবে সীমাবদ্ধতা অবশ্যই। একজন বিদ্যানের জন্য শোভনীয় হলো নিজের এ সীমাবদ্ধতাকে মনে রেখে কথায় সংযত ও ব্যবহারে বিনয়ী থাকা।
এ আয়াতের শিক্ষা হলো আমাদের কোনো পীর, শায়েখ, উস্তাদ শরিয়ত বিরোধী কোনো কাজ করলে তার প্রতিবাদ করা যাবে। হজরত খিজির (আ.)-এর সঙ্গে তুলনা করে এখানে নীরব থাকা যাবে না এবং ইলহামে শরিয়ত বিরোধী কোনো ইঙ্গিত পাওয়া গেলে আমাদের কারো জন্য তা করা ও মানা জায়েজ হবে না। কেননা, তিনি মূসা (আ.) সরাসরি আল্লাহ কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ছিলেন, তার পরও তিনি এসবের প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু এ উম্মতের কোনো পীর, শায়েখ, ওলি আল্লাহ কর্তৃক সরাসরি নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত নয়। তাই শরিয়তের মাপকাঠিতেই সবাইকে ও সবার কাজকে মেপে দেখতে হবে। এটাই এই আয়াতসমূহের শিক্ষা।
৮৩-৯৮নং আয়াতে বাদশাহ যুলকারনাইনের বিশ্ব বিজয়ের ঘটনা আলোচনা করা হয়েছে।
৯৪-৯৮নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইয়াজুজ-মাজুজ সম্প্রদায়কে প্রতিরোধ করার জন্য তিনি একটি প্রাচীর নির্মাণ করেন। ইয়াজুজ-মাজুজ ও প্রাচীর সম্পর্কে কোরআনে ও হাদিসে দশটি তথ্য পাওয়া যায়। যথা-
১. প্রাচীরের নির্মাতা ছিলেন আল্লাহ ভক্ত, ২. তিনি প্রতাপশালী ছিলেন, ৩. প্রাচীরটি লোহা নির্মিত, ৪. দু’প্রান্ত দু’টি পাহাড়ের সঙ্গে মিলিত, ৫. এ প্রাচীরের কারণে অপরপাশের ইয়াজুজ-মাজুজ সম্প্রদায় বাকি পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। তারা এ পাশে আসতে পারছে না, ৬. নবী করিম (সা.)-এর আমলে এ প্রাচীরে তারা সামান্য ছিদ্র করতে সক্ষম হয়েছিল, ৭. তারা প্রতিদিন ঘষে এ প্রাচীর ক্ষয় করার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রতিরাতে আল্লাহর হুকুমে তা আগের মতো হয়ে যায়। যেদিন আল্লাহ ইচ্ছা করবেন সেদিন আর আগের অবস্থায় ফিরে আসবে না। ফলে পরেরদিন তারা প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম হবে, ৮. ইয়াজুজ-মাজুজ মানুষ প্রজাতের। কিন্তু তাদের শক্তি ও সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি হবে, ৯. তাদের আবির্ভাব ঘটলে হজরত ঈসা (আ.) তার সহচরদের নিয়ে তুর পাহাড়ে চলে যাবেন। বাকিরা নিজ নিজ গৃহে বা শক্ত দূর্গে আশ্রয় নিবে ও ১০. তাদের সবাই একসঙ্গে বিশেষ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে।
১১০নং আয়াতে আল্লাহতায়ালা নবী মুহাম্মাদ (সা.) কে নির্দেশ দিচ্ছেন, তুমি বল আমিও তোমাদের মতোই একজন মানুষ। তবে আমার ও তোমাদের মাঝে পার্থক্য হলো- আমাকে নবী হওয়ার সুউচ্চ মর্যাদা এবং গুরুদায়িত্ব দান করা হয়েছে।
এ আয়াত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, আমাদের নবী মানুষ ছিলেন। মানুষ যে প্রাক্রিয়ায় ও যে উপদানে সৃষ্টি হয় তিনিও সে প্রক্রিয়ায় ও সে উপাদানে সৃষ্টি হয়েছিলেন। তবে আমাদের ও তার মাঝে বিশাল এক তফাৎ আছে। যা কখনো লংঘন হবার নয়। তিনি নবী আর আমরা তার উম্মত, তার অনুসারী। তিনি ওহি নিয়ন্ত্রিত কিন্তু আমাদের কাছে ওহি আসে না, আসবেও না। একজন মানুষের যত ধরনের প্রাকৃতিক প্রয়োজন হয়ে থাকে তার সবগুলোই তার ছিল। তিনি ক্ষুধা অনুভব করতেন ও খেতেন, মল-মূত্র ত্যাগ করতেন, যৌন চাহিদা মিটাতেন, অসুস্থ্য হতেন, চিকিৎসা গ্রহণ করতেন, ক্লান্ত হতেন, নিদ্রার কোলে ঢলে পড়তেন, ঘর্মাক্ত হতেন ইত্যাদি।
সূরা মারইয়াম
সূরা মারইয়াম পবিত্র কোরআনে কারিমের ১৯তম সূরা। এ সূরা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ৯৮টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
১-১৫নং আয়াতে অতি বৃদ্ধ নবী দম্পতির ঘরে হজরত ইয়াহইয়া (আ.)-এর জন্মের আলোচনা করা হয়েছে।
১৬-৪০নং আয়াতে হজরত মরিয়ম (আ.)-এর গর্ভধারণ ও হজরত ঈসা (আ.)-এর জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা করা হয়েছে।
৪১-৫০নং আয়াতে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে তার পিতার মূর্তি ও একত্ববাদ বিষয়ক আলোচনা উদ্ধৃত হয়েছে।
৫১-৫৭নং আয়াতে হজরত মূসা (আ.)-এর বৃত্তান্ত আলোচনা করা হয়েছে।
৫৮-৯৮নং আয়াতে কাফেরদের বিভিন্ন ধারণা, আপত্তি, প্রশ্ন ইত্যাদির জবাব দেয়া হয়েছে। ইসলামের বিভিন্ন বিশ্বাসকে যৌক্তিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
সূরা ত্বোয়া-হা
সূরা ত্বোয়া-হা পবিত্র কোরআনে কারিমের ২০তম সূরা। এ সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ১৩৫টি।
এ সূরায় আল্লাহর একত্ববাদ, দুনিয়ায় নবী প্রেরণের উদ্দেশ্যে ও পরকাল বিষয়ক আলোচনা প্রাধান্য পেয়েছে। উক্ত তিনটি বিষয়কে এ সূরায় জোরালোভাবে উপস্থাপনের জন্যÑ
৯-৯৮নং আয়াতে হজরত মূসা (আ.)-এর জীবন বৃত্তান্ত অনেকটা বিস্তৃতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
১১৫-১২৭নং আয়াতে অভিশপ্ত ইবলিশ কর্তৃক হজরত আদম (আ.) কে ধোঁকা দেয়ার ঘটনা আলোচনা করা হয়েছে।
১২৮-১৩৫নং আয়াতে নবী করিম (সা.) কে সান্তনা প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৬ ঘন্টা, জুন ৩০, ২০১৫
এমএ/