ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

‘তারাবিতে পঠিতব্য আয়াতের তাফসির’

আজ কিয়ামতের ভূকম্পন ও ভয়াবহতার পাঠ

মুফতি মাহফুযূল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১, ২০১৫
আজ কিয়ামতের ভূকম্পন ও ভয়াবহতার পাঠ

আজ অনুষ্ঠিত হবে ১৪তম তারাবি। আজকের খতমে তারাবিতে ১৭তম পারা তেলাওয়াত করা হবে।

আজতের তেলাওয়াতকৃত অংশে থাকছে সূরা আম্বিয়া ও সূরা হজ।

সূরা আম্বিয়া
সূরা আম্বিয়া কোরআনের ২১তম সূরা। এ সূরা মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ১১২টি।

আজকের তারাবিতে পাঠিতব্য অংশে এ সূরার উল্লেখযোগ্য বিষয়াবলী হলো-
১নং আয়াতে সাবধান করা হয়েছে কিছু লোককে। বলা হয়েছে, ওই সব লোকের হিসাবের সময় নিকটবর্তী হয়ে এসেছে। অথচ তারা অসতর্ক ও বিমুখ হয়ে আছে। এই আয়াতে মুমিন-কাফের নির্বিশেষে সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে, যারা গাফেল তাদের সজাগ হওয়ার আহবান জানানো হয়েছে।  

৩নং আয়াতে নবীর ব্যপারে মুশরেকদের আপত্তি উদ্ধৃত করা হয়েছে। তারা প্রচার করত, সে তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। তবে, কেন তোমরা তার জাদুময়ী ভাষণে আকৃষ্ট হবে? অর্থাৎ তাদের ধারণা যিনি নবী হবেন, রাসূল হবেন তিনি তো মানুষ হবেন না। তিনি অন্য কোনো সৃষ্টি হবেন। যেহেতু আমরা ভালো করেই জানি- সে মানুষ। অতএব, তিনি আল্লাহর নবী-রাসূল না। তাদের এই অযৌক্তিক আপত্তি ৭-৮নং আয়াতে খন্ডন করা হয়েছে। এ আয়াতে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, (মানুষ নবী হওয়ার ব্যপারে পৃথিবীতে আপনি প্রথম না। বরং) আমি আপনার পূর্বে যাদের কাছেই ওহি প্রেরণ করেছি তারা সবাই পুরুষ মানুষ ছিলেন। আর ওই সব রাসূলের কাউকেই এমন দেহ দান করিনি, যে দেহ খাবার পানি গ্রহণ করে না। তারা কেউ চিরস্থায়ীও না। অর্থাৎ আমি মানুষদের মধ্য থেকেই আমার নবী মনোনীত করি। প্রত্যেক নবীই মানুষ। একজন মানুষের মানবীয় যত বৈশিষ্ট্য থাকে এবং মানবদেহের যত প্রকার চাহিদা থাকে তার সবগুলোই সকল নবী-রাসূলদের ছিল।

১১নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যখনই কোনো জনপদবাসী ব্যাপকভাবে পাপাচারে নিমজ্জিত হয়েছে তখনই আমি তাদের ধ্বংস করে অন্য জাতি সৃষ্টি করেছি।

১৬-৩৩নং আয়াতে প্রাকৃতিক নিদর্শন দ্বারা একত্ববাদের প্রমাণ দেয়া হয়েছে।

৪৭নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আমি কিয়ামতের দিন নিরপেক্ষ পাল্লা স্থাপন করব। কারো প্রতি কিঞ্চিত পরিমাণ অবিচার করা হবে না। কারো আমল যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় তবুও তা উপস্থিত করা হবে। হিসাব গ্রহণ করার জন্য আমিই যথেষ্ট।

৪৮-৫০নং আয়াতে হজরম মূসা (আ.) ও হজরত হারুন (আ.)-এর কথা আলোচনা করা হয়েছে।

৫২-৭৩নং আয়াতে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর জীবন বৃত্তান্ত আলোচনা করা হয়েছে।
 
৭৪-৭৫নং আয়াতে সমকামীতাপ্রিয় নিকৃষ্ট জাতির ওপর প্রেরিত আজাব থেকে আল্লাহর নবী হজরত লূত (আ.) কে বাঁচানোর বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

সমকামীতা একটি জঘন্য অপরাধ। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে কারিমে স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে । কোরআনে কারিমে এমন সম্প্রদায়ের চূড়ান্ত পরিণতি ধ্বংস- এটা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি লূত (আ.) কে প্রেরণ করেছি । যখন তিনি তার সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা চরম অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার কাজ করছো যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বে কেউ কখনো করেনি। তোমরা কামপ্রবৃত্তি পূরণ করার জন্য মেয়েদের কাছে না গিয়ে পুরুষদের কাছে যাচ্ছ । প্রকৃতপক্ষে তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী জাতি। ’- সূরা আরাফ: ৮০-৮১

মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘অবশেষে আমার আদেশ চলে আসল, তখন আমি উক্ত জনপদের ওপরকে ধ্বংস করে দিলাম এবং তাদের ওপর স্তরে স্তরে পাথর বর্ষণ করলাম। ’ -সূরা হুদ: ৮২

অর্থাৎ ওই সম্প্রদায় চূড়ান্ত গজবে পতিত হয়েছে । আর ওই সময়টা ছিলো সূর্যোদয়ের সময় । যখন হজরত জিবরাইল (আ.) ওই জনপদটিকে ওপরে নিয়ে উল্টিয়ে জমিনে চাপা দিয়ে দেন এবং ওপর থেকে শক্ত পাথর নিক্ষেপ করেন । -তাফসিরে ইবনে কাসির

হাদিসে এমন জঘন্য কাজ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মত সম্পর্কে যে সব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ভয় করি তা হচ্ছে পুরুষে পুরুষে যৌন মিলনে লিপ্ত হওয়া। ’ -ইবনে মাজা, মিশকাত: ৩৪২১

সুতরাং এই নিকৃষ্ট কাজটি যে কোনো একটি সম্প্রদায়ের জন্য অভিশাপস্বরূপ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না! বরং এই নোংরামীর শেষ পরিণতি যে ধ্বংস তা প্রমাণে কওমে লূত (আ.) এক বিরাট ও স্পষ্ট নিদর্শন। সমকামীরা নোংরা ও বর্বর। ইসলাম তাদের বিষয়ে অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত দিয়ে রেখেছে।

৭৬-৭৭নং আয়াতে হজরত নূহ (আ.)-এর আলোচনা করা হয়েছে।

৭৮-৮২নং আয়াতে হজরত দাউদ ও হজরত সোলায়মান (আ.)-এর ঘটনা আলোচনা করা হয়েছে।

৮৩-৮৪নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, জীবনযুদ্ধের অবর্ণনীয় কঠিনতম দিনগুলোতে তিনি ধৈর্যের সঙ্গে জীবনযাপন করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে আল্লাহতায়ালা তার প্রতি রহমত বর্ষণ করেন। তার পরিবার-পরিজন তিনি ফিরে পান।

৮৫-৯১নং আয়াতে আরো কয়েকজন নবীর জীবন বৃত্তান্ত বর্ণনা করা হয়েছে।

৯৬নং আয়াতে ইয়াজুজ-মাজুজের প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে।

সূরা হজ
সূরা হজ পবিত্র কোরআনে কারিমের ২২তম সূরা। এ সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ৭৮টি।

আজকের খতমে তারাবিতে পঠিতব্য এ সূরার অংশের উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো-
১-২নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, হে মানুষ! তোমাদের প্রভুকে ভয় করো। কিয়ামতের কম্পন বড় ভয়াবহ এক ব্যপার। সেদিন তোমরা দেখবে, স্তন্যদানকারী মায়েরা তাদের দুধের শিশুর কথা ভুলে যাবে। গর্ভবতীদের গর্ভপাত হয়ে যাবে। মানুষকে দেখলে মাতাল মনে করবে। অথচ তারা মাতাল না। বরং আল্লাহর শাস্তির ভয়াবহতায় তাদের এ পরিণতি হবে।

২৬-৩৭ নং আয়াতে পবিত্র কাবা শরিফ, হজ ও কোরবানি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

৬১-৬৬নং আয়াতে আল্লাহতায়ালার ক্ষমতা, মাহাত্ম্য এবং বিভিন্ন নিয়ামতের কথা আলোচনা করা হয়েছে।

৭২নং আয়াতে ইরশাদ করা হয়েছে, যখন কোরআনে কারিমের সুস্পষ্ট বিধান শোনানো হয় তখন কাফেরদের চেহারাতে অসন্তোষের ছাপ দেখতে পাবেন।

৭৮নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম। তিনি তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলিম।

এ আয়াতে আল্লাহর বিধি-বিধানগুলোকে সুদৃঢ়ভাবে মান্য করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশেষভাবে দু’টি বিধানের উল্লেখ করা হয়েছে। নামাজ ও জাকাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘন্টা, জুলাই ০১, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।