ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

‘তারাবিতে পঠিতব্য আয়াতের তাফসির’

আজ পাঠ জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনা

মুফতি মাহফুযূল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০১৫
আজ পাঠ জান্নাত-জাহান্নামের বর্ণনা

আজ অনুষ্ঠিত হবে চলতি রমজানের ২২তম তারাবি। আজকের তারাবিতে ২৫তম পারা তেলাওয়াত করা হবে।

সূরা হামীম সাজদার ৪৭নং আয়াত থেকে শুর হয়ে সূরা শেষ হবে। এরপর সূরা আশ শুরা, সূরা যুখরুফ, সূরা দোখান, সূরা জাসিয়া সম্পূর্ণ তেলাওয়াত করা হবে।

সূরা হামীম সাজদার আজকের পঠিতব্য অংশের উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
৪৭নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহর জানার বাইরে কোনো ফল তার খোসা থেকে বের হয় না, কোনো নারী গর্ভধারণ করে না। কোনো গর্ভবতী সন্তান প্রসব করে না।

৫১নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আমি যখন কোনো মানুষকে কোনো নেয়ামত দেই তখন সে আমার থেকে দূরে সরে থাকে। আর যখন কোনো বিপদে পড়ে তখন অনেক লম্বা লম্বা দোয়া করতে থাকে।

সূরা আশ শুরা
সূরা আশ শুরা পবিত্র কোরআনে কারিমের ৪২তম সূরা। এটা মক্কি সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৫৩টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-

২০নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি আখেরাতের ফসল চায় আমি তার ফসল বৃদ্ধি করি। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার ফসল চায় আমি তাকে দুনিয়া থেকে সামান্য অংশ দেই। আখেরাতে তার জন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।

২৫নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, তিনি স্বীয় বান্দাদের তওবা কবুল করেন। সকল গুনাহ মাফ করেন। তোমরা যা কর তিনি তা সম্পর্কে অবগত।

৩৬-৪১নং আয়াতে তদের পরিচয় দেয়া হচ্ছে যাদের জন্য রয়েছে আখেরাতের চিরস্থায়ী কল্যাণ। তারা ঈমান গ্রহণ করে। তারা প্রভুর ভরসা রাখে। তারা কবীরা গুনাহ ও অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকে। তারা কারো ওপর রাগান্বিত হলে তাকে ক্ষমা করে। তারা প্রভুর বিধানের সামনে নিজেকে সমর্পণ করে। তারা যতেœর সঙ্গে নামাজ আদায় করে। তারা পরামর্শ করে কাজ করে। তারা দান করে। তাদের কেউ কষ্ট দিলে সাধারণত তারা ক্ষমা করে তবে কদাচিৎ প্রতিশোধ নিলেও সমপরিমাণ নেয়।

৩৯-৪১নং আয়াতে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে, কারো থেকে কেউ কষ্ট পেলে সে যদি কষ্ট দাতা থেকে সমপরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করে নেয় তবে কোনো অন্যায় হবে না। আর যদি কেউ কষ্ট পাওয়ার পরও মাফ করে দেয় এবং আপোষ করে সৌহাদ্য ও সম্প্রীতির সম্পর্ক বজায় রাখে তবে তার পাওনা আল্লাহর জিম্মাদারিতে থাকবে।

৪৯নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ হলেন নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সার্বভৌমত্বের মালিক। তিনি সৃষ্টি সূত্রে এসব কিছুর একক মালিক। তিনি যাকে ইচ্ছা কণ্যা দান করেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র দান করেন।

সূরা যুখরুফ
সূরা যুখরুফ কোরআনে কারিমের ৪৩তম সূরা। এটা মক্কি সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৮৯টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-

৬৮নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, হে আমার বান্দারা! আজ তোমাদের কোনো ভয় নেই। তোমাদের চিন্তিত হওয়ারও কিছুই নেই। অর্থাৎ যারা আমার নিদর্শনসমূহের প্রতি ঈমান এনেছিলে এবং আমার আইনের সামনে নিজেকে সমর্পণ করে দিয়েছিলে তোমরা ও তোমাদের স্ত্রীগণ আজ পরম উল্লাসের সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ কর। সেখানে তোমাদের কাছে আনা হবে সোনার জগ ও গ্লাস। তোমাদের মন যা চাবে তোমরা তা-ই সেখানে পাবে। তোমাদের চোখ জোড়ানোর মতো সবকিছুই সেখানে পাবে। তোমরা এ জান্নাতে চিরকাল থাকবে। আজ তোমাদের বানানো হলো এ জান্নাতের মালিক। তোমাদের খাবারের জন্য এখানে থাকবে নানা জাতের ফল-মূল।

সূরা দোখান
সূরা দোখান কোরআনে কারিমের ৪৪তম সূরা। এটা মক্কি সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৫৯টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় হলো-

৪০নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, নিঃসন্দেহে মিমাংসার দিন তাদের সবার জন্য নির্ধারিত সময়। সে দিন এক অঞ্চলের লোক অপর অঞ্চলের লোকের কোনো কাজে আসবে না। তারা কেউ সাহায্যও প্রাপ্তও হবে না। তবে হ্যাঁ যার প্রতি আল্লহ সদয় হবেন।

৪৩-৪৯নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, জাক্কুম (এক প্রকার ফল) গুনাহগারদের খাদ্য হবে। গরম পানির মতো পেটের ভিতর ফুটতে থাকবে। ফেরেশতাদের নির্দেশ দেয়া হবে, একে ধরে টেনে হেঁচড়ে জাহান্নামের মাঝে নিয়ে যাও। অতঃপর তার মাথায় গরম পানি ঢাল। তাকে বলা হবে, শাস্তি ভোগ কর। তুমি তো দুনিয়াতে অনেক দাপটের ও ক্ষমতার অধিকারী ছিলে।

সূরা জাসিয়া
সূরা জাসিয়া পবিত্র কোরআনে কারিমের ৪৫তম সূরা। এট মক্কি সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৩৭টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয়-

৯-১০নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যারা আমার (আল্লাহর) বিধান নিয়ে বিদ্রুপ করে তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। তাদের সামনে দোজখ রয়েছে। তাদের কর্ম ও তাদের অনুসরণীয় নেতারা তাদের কোনো উপকারে আসবে না।

২১নং আয়াতে পরকাল থাকার যুক্তি দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, যারা গুনাহর কাজ করছে তারা কি মনে করছে যে, আমি তাদের সে সব লোকের সমকক্ষ করে রাখব যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে। (মৃত্যুর পরে কারোরই কিছুই হবে না!) তাহলে তাদের সকলের জীবন-মৃত্যু সমান হয়ে যাবে।

কিয়ামত না থাকলে ঈমানদারদের জীবন-মৃত্যু এ কারণে সমান হবে যে, তারা জীবিত অবস্থায় অনেক সুখ ও সম্ভোগ থেকে বিরত থাকছে আবার মৃত্যুর পরেও তারা কোনো সুখ পাবে না। পরকাল না থাকলে গুনাহগারদের জীবন-মৃত্যু এ কারণে সমান হবে যে, তারা গুনাহর কাজ করে জীবিত থেকেও কোনো শাস্তি ভোগ করল না আবার মৃত্যুর পরেও কোনো শাস্তি পাবে না।

২৪নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, তারা দাবি করে থাকে, এ দুনিয়ার জীবন ব্যতীত পরবর্তীতে আমাদের আর কোনো জীবন নেই। কালের প্রবাহে আমাদের মৃত্যু সংঘটিত হবে। এ দাবির স্বপক্ষে তাদের কাছে কোনো প্রমাণ নেই। তারা অনুমান করে এ দাবি করছে।

২৬নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছ, আল্লাহ তোমাদের জীবিত করেছেন, তোমাদের প্রাণ নিয়ে নিবেন। কিয়ামতের দিন আবার তোমাদের একত্রিত করবেন। সে দিনের ব্যপারে কোনো সন্দেহ নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৪ ঘন্টা, জুলাই ০৯, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad