আজ অনুষ্ঠিত হবে ২৭তম তারাবি। আজকের তারাবিতে পবিত্র কোরআনে কারিমের ধারাবাহিক তেলাওয়াত শেষ হবে।
আজকের তারাবিতে পঠিতব্য উল্লেখযোগ্য বিষয়াদী হলো-
সূরা নাবার ৩৮-৩৯ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, সেদিন সব প্রাণী ও ফেরেশতা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। কেউ কোনো কথা বলতে পারবে না। তবে যাকে অনুমতি দেয়া হবে সে শুধু সঠিক সত্য কথাই বলবে। সেদিনের আগমন সুনিশ্চিত। অতএব যার ইচ্ছা সে তার প্রতিপালকের কাছে নিজের আশ্রয়স্থল ঠিক করে রাখুক। আমি তোমাদের এক আসন্ন আজাবের ভয় দেখাচ্ছি। সেদিন প্রত্যেকে নিজের কৃত সমুদয় আমল দেখতে পাবে। কাফেররা বলবে হায়! আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম।
সূরা নাযিয়ার ২৭নং আয়াতে পুনরুত্থানের সন্দেহ পোষণকারীদের প্রতি লক্ষ্য করে ইরশাদ করা হয়েছে, তোমাদের সৃষ্টি করা কি অধিক কঠিন কাজ না-কি আকাশ সৃষ্টি করা? তিনি তো আকাশ নির্মাণ করেছেন।
৩৭-৪১নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে আল্লাহর বিধানের নাফরমানী করবে এবং দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিবে তার বাসস্থান হবে দোজখ। আর যে ব্যক্তি তার প্রভুর সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করবে এবং নিজেকে গুনাহর কাজ থেকে বিরত রাখবে তার বাসস্থান হবে জান্নাত।
সূরা আবাসা অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট
একদা নবী করিম (সা.) মক্কার শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতাকে ইসলাম সম্পর্কে বুঝাচ্ছিলেন। তখন তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিল হিশাম ইবনে আবু জাহেল, রাবিআ ইবনে উতবা, ইবাই ইবনে খালফ, উমাইআ ইবনে খালফ এবং শাইবা। এমতাবস্থায় অন্ধ সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম (রা.) একটি কথা জিজ্ঞাসা করার জন্য সে বৈঠকে উপস্থিত হন। তিনি অন্ধ হওয়ায় বৈঠকের পরিবেশ উপলব্ধি করতে পারেননি। বৈঠকস্থলে এসেই সে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সরাসরি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে বসেন। তার এ কাজ মক্কার শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় বিঘ্ন ঘটায়। ফলে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বিরক্তবোধ করেন। তার এ বিরক্তি চেহারায়ও প্রকাশ পায়। তিনি সাহাবি আবদুল্লাহর কথার উত্তর না দিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকেন। আসলে নবী করিম (সা.) ভেবেছিলেন, আবদুল্লাহ তো আপন মানুষ। ওর প্রশ্নের উত্তর তো পরেও যে কোনো সময় দেয়া যাবে। কিন্তু মক্কার নেতৃবৃন্দকে তো সবসময় পাওয়া যায় না। তাদের বুঝানোর সুযোগ এখন ঘটনাক্রমে পাওয়া গেছে। তাই তিনি তাদের বিষয়কে অধিক গুরুত্ব দিলেন। বৈঠক শেষ করে তিনি যখন ঘরের দিকে যাচ্ছিলেন তখন ওহি অবতীর্ণের আলামত প্রকাশ পেল। ওহি অবতীর্ণ হল, ‘রাসূল মুখ ভার করলেন, মনোযোগ দিলেন না। এ কারণে যে, তাঁর নিকট এক অন্ধ ব্যক্তি এসেছে। আপনি কি জানেন, হয়তো সে সংশোধিত হত বা নসিহত গ্রহণ করত। নসিহত তার জন্য ফলপ্রসু হত। কিন্তু যারা বেপরোয়া ভাব দেখায়- আপনি আছেন তাদের ভাবনায়। অথচ তারা সংশোধিত না হলে আপনি দোষী হবেন না। যে আপনার কাছে দৌঁড়ে আসে, সে ভয়ও করে আপনি তাকে উপেক্ষা করেছেন। কখনো এরূপ করবেন না। সূরা আবাসার প্রথম ১১ আয়াতে এ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করা হয়েছে।
শিক্ষা
যারা ইসলামের বিধি-বিধান পালনের ব্যপারে চরম বেপরোয়া, প্রকাশ্যে পাপাচারে লিপ্ত থাকে তারা যত বড় ধনী ও নেতা হোক না কেন তাদের চেয়ে সে অনেক বেশি সম্মানিত ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যে গরিব ও নিরীহ কিন্তু আল্লাহর বিধি-বিধান পালনে যতœবান, সে পাপাচার থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করে। সুতরাং ধর্মীয় বিষয়ে তাতে প্রাধান্য দিতে হবে।
৩৪-৪২নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, সেদিন (কিয়ামতের দিন) মানুষ নিজের ভাই, মা, পিতা, সন্তান, স্ত্রী থেকে এমনকি সকল মানুষ থেকে পালায়ন করবে। (কেউ কারো প্রতি কোনো প্রকার সহানুভূতি দেখাতে পারবে না) প্রত্যেকেই নিজেকে নিয়ে এতো বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়বে যে, অন্যের দিকে মনোযোগ দিতে পারবে না। অনেক মুখ সেদিন দীপ্তিমান হবে, হাস্যোজ্জ্বল হবে। আর অনেক মুখ সে দিন অন্ধকার হবে। মলিনতা ছেয়ে যাবে। তারা কাফের, তারা গুনাহগার।
সূরা ইনফিতারের ১৯নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, সেদিন কোনো ব্যক্তির পক্ষে কোনো ব্যক্তির উপকার করার বিন্দুমাত্র অধিকার থাকবে না। সেদিন সকল নির্দেশ একমাত্র আল্লাহরই হবে।
সূরা তাতফিফের ১-৬নং আয়াতে মাপে কম দেয়ার নিন্দা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, মহা সর্বনাশ তাদের, যারা মাপে কম দেয়। তারা মানুষ থেকে নেয়ার সময় পুরাপুরি নেয়। কিন্তু দেয়ার সময় মাপে বা ওজনে কম দেয়। তাদের কি এ বিশ্বাস নেই যে, একটি অত্যন্ত কঠোর দিনে তাদের জীবিত করে উঠানো হবে। সেদিন সব মানুষ বিশ্ব-জগতের প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াবে।
১৪নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, বিভিন্ন অনৈতিক কার্য-কলাপের দরুণ কাফেরদের মনের যে কালো দাগ পড়েছে তা-ই তাদের হক পথ প্রাপ্তির প্রধান অন্তরায়।
সূরা ইনশিকাকের ৭-১৪নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যাদের আমলনামা তাদের ডান হাতে দেয়া হবে তাদের হিসাব সহজভাবে নেয়া হবে। সে তার পরিজনের কাছে আনন্দ মনে ফিরে যাবে। আর যার আমলনামা তার পিছন দিক থেকে দেয়া হবে সে মৃত্যুকে ডাকবে। সে দোজখে প্রবেশ করবে। অথচ এ ব্যক্তি তার দুনিয়ার জীবনে স্বীয় পরিজনদের মাঝে খুব ফুর্তিতে ছিল। সে ভেবে রেখেছিল তাকে সৃষ্টিকর্তার কাছে আর ফিরে যেতে হবে না।
সূরা বুরূজ
সূরা বুরূজে সংক্ষিপ্তভাবে একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। ঘটনাটির বিস্তারিত বর্ণনা সহিহ মুসলিমের ৭৭০৩নং হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। ঘটনায় দেখা যায়, একটি বালকের নিষ্ঠা ও ইখলাসের কারণে তার শাহাদতের বরকতে দেশের হাজার হাজার মানুষ আল্লাহর সত্য দ্বীন গ্রহণ করে। আর সে দেশের খোদাদ্রোহী শাসক আল্লাহর দ্বীন গ্রহণের কারণে নিরপরাধ সে সব হাজার হাজার জীবিত মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারে।
শিক্ষা
ইসলামের জন্য মৃত্যুবরণ বৃথা যায় না। একটি মৃত্যু হতে পারে হাজার হাজার মানুষের ইসলাম গ্রহণের উপলক্ষ। সত্যিকার ঈমানের স্বাদ যখন কোনো মানুষ উপলব্ধি করতে পারে তখন দুনিয়ার জীবন তার কাছে হয়ে যায় খুবই তুচ্ছ। আগুণে পুড়ে মৃত্যুবরণকে সে সানন্দে বরণ করে কিন্তু ঈমান ও ইসলামের ব্যপারে কোনো আপোষ করতে পারে না।
সূরা আলার ১৪-১৫নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ওই ব্যক্তি সফল- যে গুনাহ ছেড়ে পবিত্র হয়েছে এবং নিজের প্রভুর নাম নিয়ে নামাজ পড়ে।
সূরা ফজরের ১৭-১৯নং আয়াতে কাফেরদের ৪টি চারিত্রিক বৈশিষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। তারা এতিমদের সম্মান করে না। গরিবদের খাদ্য দান করতে অন্যকে উৎসাহিত করে না। ওয়ারিসদের ভাগ না দিয়ে মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ দখল ভোগ করে। তারা ধন-সম্পদের প্রতি অতি লালায়িত।
মক্কার জাবালে নূরের হেরা গুহায় সূরা আলাকের প্রথম ৫টি আয়াত দিয়ে শুরু করা হয়েছিল কোরআন অবতরণের শুভ সূচনা। ইরশাদ হয়েছে, পড়–ন। আপনার প্রতিপালকের নামে যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন। যিনি সকল মানুষকে এমন বস্তু থেকে সৃষ্টি করেছেন যা আঁকড়ে ধরে থাকে। আপনি পড়–ন। আপনার প্রভু অতি দয়ালু। তিনি কলম দিয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন যা মানুষ জানত না। সূরা অালাকের বিষয়বস্তু এটাই।
সূরা কদরে শবেকদরের ফজিলত ও মহিমা বর্ণনা করা হয়েছে। আজ সে রাত। সবার উচিৎ এ রাতের বরকত লাভে সচেষ্ট হওয়া। সূরা আসরে সময়ের শপথ করে বলা হয়েছে যার নিজেরা ঈমান আনে, নেক আমল করে এবং অন্যকে নেক আমলের ও ধৈর্যের উপদেশ দেয় তারা ব্যতীত সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ।
সূরা হুমাজাতে এমন ব্যক্তির নিন্দা করা হয়েছে যারা আড়ালে মানুষের সমালোচনা করে এবং সামনে মানুষকে অপমান করে। যারা সম্পদ জমা করে আর বারবার গুণে দেখে। তারা ধারণা করে এ সম্পদ তাদের কাছে চিরকাল থাকবে।
সূরা ফিলে হাবশার বাদশাহ আবরাহার হস্তি বাহিনীর ঘটনা আলোচনা করা হয়েছে। বাদশাহ আবরাহা বিশাল হাতি বাহিনী নিয়ে এসেছিল কাবা ঘরকে ধ্বংস করার জন্য। আল্লাহতায়ালা অতি ছোট ছোট পাখি দ্বারা একেবারে ছোট ছোট কংকর মেরে এ বাহিনীকে চরমভাবে ধ্বংস করেন। কাবাকে হেফাজত করেন।
সূরা মাউনে কাফেরদের তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। তারা আল্লাহর বিধি-বিধানকে অস্বীকার করে। এতিমকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। গরিবকে খাবার দিতে মানুষকে উৎসাহিত করে না। সেই সঙ্গে মুনাফেকদের তিনটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে। তারা নামাজ আদায়ের ব্যপারে চরম অলস। নামাজ পড়লেও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পড়ে না বরং লোক দেখানোর জন্য নামাজ পড়ে। তারা জাকাত দেয় না।
হজরত নবী করিম (সা.)-এর ছেলে কাসিম মক্কায় মারা গেলে মক্কার আছ বিন ওয়ায়েলসহ আরো অনেকে বলাবলি করতে লাগল, মুহাম্মাদ তো নির্বংশ হয়ে গেল। তার বংশের কোনো বাতি থাকল না। সে মারা গেলে তার নাম নেয়ারও কেউ থাকবে না। তার মৃত্যুর পর কে নিবে তার ধর্মের দায়িত্ব? সুতরাং অল্পকালেই এ ধর্ম বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
তাদের এ দাবির প্রেক্ষিতে সূরা কাউসার অবতীর্ণ হয়। এ সূরার মাধ্য, নবী করিম (সা.) কে আল্লাহতায়ালা জানিয়ে দিলেন, আপনি নয় বরং আপনার শত্রুদের নাম নেয়ার কেউ থাকবে না। তারাই পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
একবা মক্কার কাফেররা মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে প্রস্তাব নিয়ে আসল, ধর্ম নিয়ে আপনার ও আমাদের বিবাদ উভয়পক্ষকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। তাই আসুন, আমরা আপোষ করি। আপনি আপনার মাবুদের ইবাদত করবেন আর আমরা আমাদের উপাস্যদের পূজা করব। এছাড়া আমরা উভয় পক্ষ উভয়ের কিছু কিছু অংশ মানব। তাদের এ প্রস্তাবের উত্তরে সূরা কাফিরূন অবতীর্ণ করে পরিস্কার জানিয়ে দেয়া হয় ধর্মের ব্যপারে কোনো আপোষ নয়। মুসলিমরা কখনোই কুফরির কিছু অংশ মানতে পারবে না। মুসলিমরা তাদের দ্বীনই পালন করবে। অন্য কোনো কিছু তারা মানবে না।
ইসলামের মূল বৈশিষ্ট্য হলো- ইসলামের অনুসারীরা সব কাজ ইসলামের অনুসরণ করে করবে। তারা যখন রাষ্ট্রের দায়িত্বে থাকবে, আদলতের দায়িত্বে থাকবে, আইন তৈরির দায়িত্বে থাকবে তখনও তারা শুধুমাত্র ইসলামের অনুসরণ করবে। হজরত মুহাম্মদ (স.) প্রতিষ্ঠিতা মদিনাকেন্দ্রিক রাষ্ট্র ইসলামি রাষ্ট্র ব্যবস্থার সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ। এ রাষ্ট্রের আইন ও বিচার ছিল কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী।
মনে রাখতে হবে, কোনো রাষ্ট্র ইসলামি হওয়ার জন্য সে রাষ্ট্রের সব নাগরিবের মুসলিম হওয়া শর্ত নয়। এমনকি একটি ইসলামি রাষ্ট্র তার দেশের কোনো অমুসলিম নাগরিককে জোর করে মুসলিম বানাতে পারবে না। কোনো অমুসলিম নাগরিককে তার ধর্ম পালনে বাঁধা দিতে পারবে না। একটি ইসলামি রাষ্ট্র তার দেশের সব অমুসলিম নাগরিকের জান, মাল, ইজ্জত ও ধর্মের নিরাপত্তা দিতে বাধ্য। ইসলামি রাষ্ট্রের সব নাগরিক স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে তবে রাষ্ট্রের আইন ও বিচার কোরআন-সুন্নাহ অনযায়ী হবে। খোলাফায়ে রাশিদিনের খেলাফতকাল থেকে আজ পর্যন্ত আরব বিশ্বে খ্রিস্টানদের উসস্থিতি এ দাবির ঐতিহাসিক প্রমাণ।
সূরা নছর কোরআনে পাকের সর্বশেষ সূরা ও সর্বশেষ আয়াত। এরপর আর কোনো সম্পূর্ণ সূরা অবতীর্ণ হয়নি। এ সূরায় রাসূলে কারিম (সা.)-এর ওফাত নিকটবর্তী হওয়ার ইঙ্গিত আছে। এ সূরার শিক্ষা হলো- মৃত্যু নিকটবর্তী হলে বেশি পরিমাণে তাসবিহ ও ইস্তেগফার করা উচিৎ।
আবু লাহাবের আসল নাম ছিল আবদুল ওয্যা। সে ছিল আবদুল মোত্তালিবের অন্যতম সন্তান। গৌরবর্ণের কারণে তার ডাক নাম হয়ে যায় আবু লাহাব। কোরআনে তার আসল নাম বর্জন করা হয়েছে। সে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)- এর কট্টর শত্রু ও ইসলামের ঘোর বিরোধী ছিল এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে কষ্ট দেয়ার প্রয়াস পেত। তিনি যখন মানুষকে ঈমানের দাওয়াত দিতেন, তখন সে সাথে সাথে যেয়ে তাকে মিথ্যাবাদী বলে প্রচার করত।
একবার হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সাফা পর্বতে আরোহণ করে কোরাইশ গোত্রের উদ্দেশে ‘আবদে মানাফ’ ও ‘আবদুল মোত্তালিব’ ইত্যাদি নাম সহকারে ডাক দিলেন। এভাবে ডাক দেয়া তখন আরবে বিপদাশংকার লক্ষণরূপে বিবেচিত হত। ডাক শুনে কোরাইশ গোত্র পর্বতের পাদদেশে একত্রিত হল। তখন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘যদি আমি বলি যে, একটি শত্রুদল ক্রমশঃই এগিয়ে আসছে এবং সকাল-বিকাল যে কোনো সময় তোমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে, তবে তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে কি? সবাই একবাক্যে বলে উঠল- হাঁ, অবশ্যই বিশ্বাস করব। অতঃপর তিনি বললেন, আমি (শিরক ও কুফরের কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত) এক ভীষণ আজাব সর্ম্পকে তোমাদেরকে সতর্ক করছি। একথা শুনে আবু লাহাব বলল, ধ্বংস হও তুমি, এজন্যেই কি আমাদেরকে একত্রিত করেছ? অতঃপর সে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে পাথর মারতে উদ্যত হল। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সূরা লাহাব অবতীর্ণ হয়।
সূরা ইখলাসকে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তাৎপর্যের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এ সূরায় আল্লাহতায়ালার অস্তিত্ব ও সত্তার সবচেয়ে সুন্দর ব্যাখ্যা রয়েছে। এটি কোরআনের অন্যতম একটি ছোট সূরা। তবে ফজিলতের দিক দিয়ে এ সূরার একবার পাঠ পবিত্র কোরআনে কারিমের এক-তৃতীয়াংশের সমান।
একবার মক্কার মুশরিকরা মুহাম্মদ (সা.)-কে আল্লাহতায়ালার বংশপরিচয় জিঞ্জেস করেছিল, যার জওয়াবে এই সূরা নাজিল হয়। অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে যে, মদিনার ইহুদিরা এ প্রশ্ন করেছিল। কোনো কোনো রেওয়ায়েতে আছে যে, তারা আরও প্রশ্ন করেছিল- আল্লাহতায়ালা কিসের তৈরি, স্বর্ণ-রৌপ্য আথবা অন্যকিছুর? এর জওয়াবে সূরাটি অবতীর্ণ হয়।
সূরা ফালাক ও পরবর্তী সূরা আন নাস একই সঙ্গে একই ঘটনায় অবতীর্ণ হয়েছে। মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে, জনৈক ইহু্দি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)- এর ওপর জাদু করেছিল। ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জিবরাঈল আগমন করে সংবাদ দিলেন যে, জনৈক ইহুদি জাদু করেছে এবং যে জিনিসে জাদু করা হয়েছে, তা অমুক কূপের মধ্যে আছে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) লোক পাঠিয়ে সেই জিনিস কূপ থেকে উদ্ধার করে আনলেন। তাতে কয়েকটি গিরু ছিল। তিনি এই সূরা দু’টি পড়ে ফুক দেয়ায় গিরুগুলো সঙ্গে সঙ্গে খুলে য়ায এবং নবী করিম (সা.) সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে শয্যা ত্যাগ করেন।
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর জাদু করলে তার প্রভাবে তিনি মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়তেন এবং যে কাজটি করেননি, তাও করেছেন বলে অনুভব করতেন। একদিন তিনি হজরত আয়েশা (রা.)-কে বললেন, আমার রোগটা কি, আল্লাহতায়ালা তা আমাকে বলে দিয়েছেন। (স্বপ্নে) দু’ব্যক্তি আমার কাছে আসল এবং একজন শিয়রের কাছে ও অন্যজন পায়ের কাছে বসে গেল। শিয়রের কাছে উপবিষ্ট ব্যক্তি অন্য জনকে বলল, তাঁর অসুখটা কি? অন্যজন বলল, তিনি জাদুগ্রস্ত। প্রথম ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, কে জাদু করেছে? উত্তর হল, ইহুদিদের মিত্র মুনাফিক লবিদ ইবনে আসাম জাদু করেছে। আবার প্রশ্ন হল, কি বস্তুতে জাদু করেছে? উত্তর হল, একটি চিরুনীতে। আবার প্রশ্ন হল, চিরুনীটি কোথায়? উত্তর হল, খেজুর ফলের আবরণীতে ‘বির যরোয়ান’ কূপে একটি পাথরের নীচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। অতঃপর হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সে কূপে গেলেন এবং বললেন, স্বপ্নে আমাকে এই কূপই দেখানো হয়েছে। অতঃপর চিরুনীটি সেখান থেকে বের করে আনলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১50০ ঘন্টা, জুলাই ১৪, ২০১৫
এমএ/