রমজান পারস্পরিক সহমর্মিতার মাস। এ মাসে আল্লাহতায়ালা বান্দার রিজিক বাড়িয়ে দেন।
রমজান মাসে যে কোনো ইবাদত করার ফজিলত অনেক বেশি। বিশেষত এ মাসে দান-খয়রাত করতে আল্লাহর রাসূল (সা.) খুব বেশি উত্সাহ প্রদান করেছেন। রোজাদারকে ইফতার করানো, গরিব রোজাদারদের প্রতি লক্ষ্য রাখা, এ মাসে শ্রমিকের শ্রম লাঘব করে দেয়া বিশেষ সওয়াবের কাজ বলে হাদিস শরীফে উল্লিখিত হয়েছে। তেমনি অভিসম্পাত রয়েছে ওইসব লোকের জন্য, যারা রমজান মাসকে মূল্য দেয় না, রোজাদারকে সুস্থভাবে রোজা রাখতে বাধা দেয়। সর্বোপরি নানাপ্রকার শোষণ ও অনাচারের মাধ্যমে সিয়ামের পবিত্র পরিবেশ বিঘ্নিত করে।
রমজান মাসে ফরজ জাকাত দেয়ার ফজিলত অনেক বেশি। এতিম-বিধবা এবং বঞ্চিত অসহায়দের জন্য আল্লাহতায়ালার তরফ থেকে বিশেষ ব্যবস্থা হচ্ছে জাকাত। এটা সচ্ছল বিত্তবানদের ওপর দরিদ্র শ্রেণীর ন্যায্য হক, অনুগ্রহের দান নয়। রমজান মাসে যদি হকদারদের সে হক পরিশোধ করে দেয়া হয়, তবে এর দ্বারা যেমন দাতার সওয়াব সত্তরগুণ বেড়ে যায়, তেমনি অসহায় হকদারদের রোজা রাখা ও ঈদের আনন্দ উপভোগের ক্ষেত্রেও বিশেষ সহায়তা হয়।
রমজানের পরিশিষ্ট হচ্ছে ঈদ এবং ঈদের সকাল বেলায় সদকাতুল-ফিতর প্রদান করতে হয়। এটা সর্বশ্রেণীর মানুষের সঙ্গে পারস্পরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করার চূড়ান্ত পর্যায়। ঈদের আনন্দে কেউ আটখানা হয়ে ফেটে পড়বে আর কেউ কঙ্কালসার নগ্নদেহে তা দূর থেকে দেখবে- এ দৃশ্য ইসলামি সমাজে থাকতে পারে না। ঈদ হচ্ছে সাফল্যের সঙ্গে রমজান অতিবাহিত করতে পারার আনন্দ। আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ দান পবিত্র কোরআনপ্রাপ্তির আনন্দ। কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক সুদৃঢ়করণের আনন্দ। কোরআনের আগমন হয়েছে এর শিক্ষা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কোরআনের শিক্ষাকে উপেক্ষা করে যদি কেউ কোরআনপ্রাপ্তির উত্সবে শরিক হতে চায়, তবে সেটা হবে একটা নগ্ন উপহাস মাত্র। যে সমাজে কেউ ১০ তলায় এবং কেউ গাছ তলায় রয়েছে, যে সমাজে একশ্রেণীর ভোগ-বিলাস আকাশচুম্বি এবং অন্য শ্রেণী ভোখা-নাঙ্গা, সে সমাজ কোরআন অনুসারী নয়। তাই ঈদের আনন্দ আকর্ষণীয় পোশাক এবং উপাদেয় খাদ্য-পানীয়ের সমারোহ নয়। ঈদের আনন্দ কোরআন প্রদর্শিত সমাজনীতির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠায়। সব শ্রেণীর মানুষের বুকে বুক মিলিয়ে আনন্দ প্রকাশ করার মতো পরিবেশ সৃষ্টিতে। বস্তুত এটাই রমজানুল মোবারকের সাধনা।
রমজান আমাদের যেসব পার্থিব কল্যাণ সাধন করে, সে তালিকাও অত্যন্ত দীর্ঘ। একমাস রোজা রাখার ফলে স্বাস্থ্যের ওপর যে কল্যাণকর প্রভাব পড়ে, সে সম্পর্কে বিশ্ববিখ্যাত বহু স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী মনোজ্ঞ আলোচনা করেছেন। শরীরের অতিরিক্ত মেদ এবং পাকস্থলীতে জমে থাকা অনেক ক্ষতিকর উপাদান রোজার মাধ্যমে অপসারিত হয়।
রোজাদার অবস্থায় অনেক হালাল বস্তুর ব্যবহারও সযত্নে পরিহার করতে হয়। এর দ্বারা যেমন আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয়াদি থেকে বিরত থাকার অভ্যাস গড়ে ওঠে, তেমনি ব্যক্তির জীবনে ত্যাগের মনোভাবও সৃষ্টি হয়ে যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, যে সমাজে ভোগের তুলনায় ত্যাগের প্রবণতা বেশি হবে, সে সমাজ পরিবেশকে বেহেশতি পরিবেশরূপে আখ্যায়িত করা বোধহয় অবান্তর হবে না। এক কথায়, রোজা তথা সিয়াম সাধনার নৈতিক, আধ্যাত্মিক এবং ধর্মীয় উপকারাদির পাশাপাশি পার্থিব কল্যাণও উপেক্ষা করার মতো নয়। সেদিক লক্ষ্য করলে সিয়াম শুধু ইবাদতই নয়, মানব কল্যাণের একটা গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমও বটে। তাই রমজানের বাকী দিনগুলো ইবাদত-বন্দেগিতে কাটিয়ে রমজানের পূর্ণ বরকত লাভে আমাদের সচেষ্ট হতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘন্টা, জুলাই ১৫, ২০১৫
এমএ/