রমজানের বিশেষ এক ইবাদত হচ্ছে তারাবি। নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সঙ্গে রাত জাগরণ করবে মহান রাব্বুল আলামিন তার আগের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।
এখানে রাত জাগরণ বলতে নামাজে রাত কাটানোর কথা বলা হয়েছে। তারাবির প্রতি সে ইঙ্গিত স্পষ্টই। তারাবি সুন্নতে মুয়াক্কাদা, তবে তা সওয়াবের আধার। রমজানে যে কোনো আমলের সওয়াব সত্তরগুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। সে হিসেবে একেকটি নফল একেকটি ফরজের সমতুল্য হয়। একেকটি ফরজ সত্তর ফরজের সমতুল্য হয়। তাই তারাবির বিনিময়ও সে অনুপাতে হবে।
অন্য সময় কোরআনে কারিমের একেক হরফের বিনিময়ে দশটি করে নেকি পাওয়া যায়। নামাজে পাওয়া যায় একশ’ করে; রমজানে তা বেড়ে ন্যূনতম সাত হাজার নেকিতে পরিণত হবে। তাছাড়া খতমে তারাবিতে কোরআনে কারিম খতম করার সুযোগ হয়। অনেকে হয়তো কোরআন শরিফ পড়তে পারেন না কিংবা পারলেও তা খতম করার সুযোগ হয়ে ওঠে না; তাদের জন্য তারাবি পুরো কোরআনে কারিম শোনা এবং নেকির পাহাড় গড়ার এক মোক্ষম সুযোগ।
দ্বীনদার মুসলমান মাত্র দীর্ঘ সময় নামাজ পড়ার সে কষ্ট সহাস্যবদনে স্বীকার করেন। তবে একটু মনোযোগ দিলে তারাবিকে আরও সুন্দর করা যেতে পারে, রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জন ও পূর্ণ সওয়াব প্রত্যাশীদের এমনটি করাই কাম্য।
দেশের সর্বত্রই সময়ের পাল্লা দিয়ে তারাবি হয়ে থাকে। অনেক হাফেজের এ প্রবণতা থাকে, ক্ষেত্রবিশেষে মুসল্লিদের প্রবণতা থাকে আরও বেশি; ফলে হাফেজকেও তাদের চাহিদার প্রতি সম্মান দেখাতে হয়। এতে করে দ্রুত পড়ার দরুন সাধারণভাবেই বহু শব্দ বা অক্ষর অস্পষ্ট থেকে যায়। তাতে সব মিলে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে দশ মিনিট সময় সাশ্রয় হয়।
তবে লক্ষ্য করার বিষয় হলো, যেখানে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে নামাজ পড়ছি, সেখানে সামান্য সময়ে এমন কি আহামরি ক্ষতি হয়ে যাবে! মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য কোরআনে কারিমের কতক অংশ অস্পষ্ট থাকা মনের অতৃপ্তি এবং নামাজের অপূর্ণতা বৈকি! অধিকন্তু ধীরে পড়ায় অধিক রাত জাগরণের কারণে আমার ছওয়াবই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে তাড়াহুড়া কেন, অধিক সওয়াব প্রত্যাশীদের ধীর ও স্থিরে তারাবি পড়াই সমীচীন। এর জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন, তারাবির ইমাম সাহেবকেও এ ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে, পাশাপাশি মুসল্লিগণেরও ঐকান্তিক সহযোগিতা একান্তভাবে প্রয়োজন হবে।
হাফেজগণের জন্য সব মুসল্লিকে খতমের প্রতি লক্ষ্য রাখা অতীব জরুরি। তাই সারা দেশের হাফেজদের তারাবি পড়ার ক্ষেত্রে দৈনিক এক সমান পড়া এবং একসঙ্গে খতম করা উচিত, তাহলে মুসল্লিদের কারও খতমে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না, না হয় বিড়ম্বনায় পড়েন অনেকেই। অনেক সময় কারও কারও নানা প্রয়োজনে বিভিন্ন মসজিদে নামাজ পড়তে হয়; সে ক্ষেত্রে প্রায়ই দু’জায়গার প্যারায় মিল থাকে না, কোথাও বেশি কোথাও কম; তখন তাদের জন্য দারুণ সমস্যায় পড়তে হয়, অথচ পুরো কোরআনে কারিম তারাবিতে শোনার নিদারুণ আশায় তারা উদগ্রীব থাকেন; এক্ষেত্রে হতাশা ছাড়া তাদের কিছুই করার থাকে না। হাফেজগণ ইচ্ছা করলেই তা এড়িয়ে যেতে পারেন।
আমাদের দেশের বেশিরভাগ মসজিদের সাধারণ নিয়ম হিসেবে সাতাশ তারিখে খতমে তারাবি শেষ হয়। তাই প্রথম ছয় দিন দেড় পারা করে পড়ে পরবর্তী সময়ে যথারীতি একপারা করে পড়লেই তা শেষ হবে, তাহলে কারও জন্য এ জাতীয় বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না। তবে কোথাও ব্যতিক্রম হিসেবে আগে শেষ করলে পূর্ব ঘোষণা থাকলে ভালো, তবেই এ সমস্যা এড়ানো সম্ভব। এ ব্যাপারে ইমাম সাহেবদের আন্তরিকতার বিকল্প নেই।
অনেক সময় তারাবি চলাকালে অনেকে নামাজ রেখে বিশ্রামের উদ্দেশ্যে পেছনে বসে থাকেন, ইমাম সাহেব রুকুতে গেলে তড়িঘড়ি করে নামাজে শরিক হন। এতে সামান্য বিশ্রামের চেয়ে মানসিক প্রশান্তিটাই বড় হয়ে কাজ করে, যিনি এমন করেন তার কাছে তাতে কোনোকিছু হারানোর আক্ষেপ থাকে না, কারণ নামাজ তো তিনি ঠিকই পড়ছেন; মূলত তাতে নামাজে কোরআন শোনার সে সওয়াব থেকে তিনি বঞ্চিত হন এবং এ সময় নামাজের রহমত, বরকত ও নেকি থেকে মাহরুম থাকেন। সওয়াব কামাতে এসে সওয়াবের মেলায় থেকে স্বেচ্ছায় অগনিত সওয়াব হাসিলের সুযোগ হাতছাড়া করা নির্বুদ্ধিতা বৈকি!
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৬
এমএ/