ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী বড় মসজিদের খতিব পীরে কামেল আল্লামা আবদুল হক। ময়মনসিংহ অঞ্চলের শীর্ষ এ আলেম হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর বিশিষ্ট খলিফা।
ময়মনসিংহ: পবিত্র রমজান মাসের নামাজের মধ্যে কোরআন তেলাওয়াতের প্রতি হরফে ৭ হাজার নেকি পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী বড় মসজিদের খতিব পীরে কামেল শায়খুল হাদিস আল্লামা আবদুল হক।
তিনি বলেন, ‘রমজান মাসে আল্লাহতায়ালা কোরআন নাজিল করেছেন। এজন্য রমজান কোরআন তেলাওয়াতের মাস। অন্য সময়ের তুলনায় এ মাসে কোরআন তেলাওয়াত বেশি করা উচিত। রমজান ছাড়া নামাজের মধ্যে কোরআনের একটি হরফ পড়লে এক’শ নেকি পাওয়া যায়। আর পবিত্র রমজানের নামাজে কোরআন তেলাওয়াতে প্রতি হরফে ৭ হাজার নেকি পাওয়া যায়। এমনিতে অজুসহ কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করলে প্রতি হরফে ২৫ নেকি পাওয়া যায়। আর রমজানে নেকির পরিমাণ ৭০ গুণ বেশি। ’
তাই চরতি রমজানে খতমে তারাবি পড়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন ময়মনসিংহের এ শীর্ষ আলেম।
‘রমজানে রোজা রাখাকে বাধ্যতামূলক ও ফরজ করা হয়েছে’ জানিয়ে তিনি বলেন, রমজানে যারা রোজা রাখে তারা মুক্তাকি ও পরহেজগার। মুত্তাকি হলো আল্লাহর দোস্ত ও বন্ধু।
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘যারা আল্লাহর বন্ধু হয় তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে ভয় বা চিন্তার কোনো কারণ নেই। যারা ঈমানদার, মুত্তাকি ও পরহেজগার তারাই আল্লাহর বন্ধু বা দোস্ত। ’
রমজান বরকতের মাস এ উদাহরণ দিয়ে ময়মনসিংহ বড় মসজিদের খতিব বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রমজান মাসে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। রমজানে লাইলাতুল কদরের রাতে ইবাদত করলে হাজার হাজার মাসের ইবাদতের সওয়াব পাওয়া যায়। ’
রমজানের পুরস্কার কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রমজান ধৈর্য্য এবং সাধনার মাস। আর এ ধৈর্য্যরে পুরস্কার জান্নাত। যারা ধৈর্য্য ধরে সঠিকভঅবে রোজা রাখবে আল্লাহতায়ালা তাদের জান্নাত দিবেন। ’
‘রোজাদারদের বেহেশতে প্রবেশের গেটের নাম রাইয়ান। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রোজাদারদের সম্মানার্থে ১১ মাস বেহেশতকে সুসজ্জিত করা হয়। ’
আল্লাহর নবী (সা.) বলেছেন, ‘রমজান মাসে কোনো ব্যক্তি যদি কাউকে কোনো ইফতার করায় তবে আল্লাহ তাকে দোজখ দেখে মুক্তি দেবেন। আর যে ব্যক্তি পেটভরে রোজাদারকে খাওয়াবে আল্লাহর নবী (সা.) তাকে হাউজে কাওসারের পানি পান করাবেন। বেহেশতে প্রবেশের আগে একবার পানি পান করলে আর কোনোদিন পিপাসা হবে না’- বলে জানান বড় মসজিদ খতিব আল্লামা আবদুল হক।
রমজানে আমল ও আখলাক সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহর নবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালার এক ফেরেশতা রমজান আসার পর থেকে সারাদিন ঘোষণা দিতে থাকে তোমরা যারা নেক আলম করতে চাও, অল্প পরিশ্রমে অধিক নেকি উপার্জন করতে চাও, তাদের জন্য নেকির সিজন হলো রমজান মাস।
এ মাসে নফল ইবাদত করলে ফরজের সমান সওয়াব পাওয়া যায়। একটি ফরজ আদায় করলে ৭০ টি ফরজ আদায়ের সওয়াব পাওয়া যায়।
আল্লাহর নবী (সা.) বলেছেন, ওই ফেরেশতা ঘোষণা দিতে থাকে রমজান মাসে যারা খারাপ কাজে লিপ্ত তারা জঘন্য অপরাধী। রমজান মাস সম্মানিত মাস। এ মাসের সম্মানার্থে সমস্ত অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
এজন্য ফেরেশতা বলতে থাকেন মিথ্যা বলা, অন্যের দোষ চর্চা করা, অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ ঘুষ, দুর্নীতিসহ সব অপরাধ থেকে বিরত থাকতে হবে।
রোজা রাখতে সরকার মুসলমানদের উৎসাহিত করতে পারে মন্তব্য করে ময়মনসিংহ বড় মসজিদের খতিব বলেন, সরকার অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে মানুষকে উৎসাহিত করবে। রেডিও, টেলিভিশন প্রচারপত্রের মাধ্যমে এ বিষয়সমূহ প্রচার করতে হবে।
সরকার যখন এটি প্রচার করবে তখন মানুষ প্রভাবিত হবে এবং অন্যায় থেকে বিরত থাকতে পারবে।
লোকদেখানো জাকাত দেওয়াকে গর্হিত কাজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষকে জানানো, শুনানো ও দেখানোর জন্য কেউ জাকাত দিলে জাকাতের সওয়াব পাওয়া যাবে না।
জাকাত গোপনে দেওয়ার কারণে দিগুণ নেকি পাবে- যোগ করেন বড় মসজিদের খতিব।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘন্টা, জুন ০৭, ২০১৬
এমএএএম/এমএ