মুমিনের পাথেয় সংগ্রহ করার অপূর্ব সুযোগ নিয়ে আবারও স্বমহিমায় হাজির পবিত্র রমজান। রমজানের মূল সাধনা হলো সিয়াম।
সিয়াম তথা রোজা পালন করতে হয় রমজানে। রমজান কোরআনের মাস। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান তো সে মাস যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছ। ’ -সূরা বাকারা: ১৮৫
কোরআন নাজিলের মাসেই আমাদেরকে পালন করতে হয় রোজা। কারণ কোরআন ও রমজানের মধ্যে রয়েছে এক সুগভীর সম্পর্ক। আল কোরআন জ্ঞানের নাম। আর রোজা হলো সেই জ্ঞানের ওপর চলার হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ। কোরআন হলো আইন, আর রমজান হলো ব্যক্তি ও সমাজজীবনে সেই আইন বাস্তবায়নের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
সুশৃঙ্খল জীবনের জন্য জানতে হয় এবং মানতে হয়। মানবজীবনকে পরিপাটি, সুশৃঙ্খল ও শান্তিময় করতে প্রথমেই আমাদেরকে জানতে হবে কী কী আমাদের জন্য উপকারী এবং কী কী আমাদের জন্য ক্ষতিকর। কোন কর্মপদ্ধতি ভুল আর কোনটা শুদ্ধ। কোনটায় প্রভূত কল্যাণ আর কোনটা শুধুই মরীচিকা; কল্যাণের আবেগী স্লোগান থাকলেও তা অকল্যাণকর। মানবতার জন্য এই জ্ঞানের সর্বপ্রধান উৎসই হলো পবিত্র কোরআন। কোরআন মানুষকে তার সুবিশাল জ্ঞানভান্ডার থেকে বিশ্ব মানবতাকে ভালো-মন্দের জ্ঞান সরবরাহ করে মানুষকে ছেড়ে দেবে রমজানের হাতে। রমজান তাকে সিয়াম নামক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হালাল-হারামের চর্চায় অভ্যস্ত করে তুলবে। মানার প্রশিক্ষণ দেবে হাতে-কলমে। আল্লাহর আইনের প্রতি মানুষকে শ্রদ্ধাশীল করে তুলবে তিলে তিলে।
সিয়ামের সংজ্ঞা বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করে দেয়। রোজার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘পানাহার, সহবাস ও সব ধরণের গুনাহের কাজ ছেড়ে দেওয়াই রোজা’। শুধু পানাহার ত্যাগ করে গুনাহের কাজ না ছাড়লে তা কিছুতেই রোজা হবে না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পানাহার বর্জনের নাম সিয়াম নয়; সিয়াম হলো অনর্থক ও অশ্লীল কথা এবং কাজ বর্জন করা। -বায়হাকি: ৪/২৭০
অর্থাৎ রোজার মাধ্যমে পবিত্র কোরআনে নিষিদ্ধ জিনিসগুলো ছেড়ে দেওয়ার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। নিজেকে বিরত রাখতে হবে সব ধরনের মিথ্যা ও পাপাচার থেকে। কোরআনের শান্তির সমাজ গড়ার মিশন বাস্তবায়নের মতো যোগ্য ও তাকওয়া সম্পন্ন (মুত্তাকি) নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, হরজত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাপ, মিথ্যা কথা, অন্যায় কাজ ও মূর্খতাসুলভ কাজ ত্যাগ করতে না পারবে তার পানাহার ত্যাগ করাতে আল্লাহতায়ালার কোনো প্রয়োজন নেই। -সহিহ বোখারি: ৫/২২৫১
রোজা পানাহারকে নিয়ন্ত্রণ করে আর অপরাধ প্রবণতাকে করে সমূলে উৎপাটন। রমজান শেষে পানাহার চালু হবে বটে কিন্তু অপরাধ থেকে বেঁচে থাকার যে বাস্তব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা হয়েছিল তা চলবে সারা বছর।
রোজা অপরাধের হাত-পা মজবুতভাবে বেঁধে দেবে তাকওয়ার রশি দিয়ে। আল্লাহর ভয় (তাকওয়া) থাকলে রাতের অন্ধকারেও অন্যায় থেকে বিরত থাকা সম্ভব। মানুষের অন্তরে তাকওয়া বিধৌত সেই অদৃশ্য পাহারাই বসাবে রোজা। জীবনের বদভ্যাসগুলো পরিবর্তনের এই মহান সুযোগ যেন অবহেলায় নষ্ট না হয়। নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক, জুতো, ঈদ মার্কেট আর বন্ধু-বান্ধবের ঈদ কার্ডই যেন আমাদের টার্গেট না হয়। টার্গেট হোক নিজেকে আদর্শ মানুষ হিসেবে প্রশিক্ষিত করার। শুধু দৈহিক নয়; আমাদের আচরণকে নিয়ন্ত্রণের শপথ হোক রমজানে।
লেখক: খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ, বোর্ড বাজার, গাজীপুর
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৩ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৬
এমএ/