ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

হালাল খাবার ব্যয়সাধ্য, তবু রোজা রাখেন জাপানি মুসলিমরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১০ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১৬
হালাল খাবার ব্যয়সাধ্য, তবু রোজা রাখেন জাপানি মুসলিমরা ছবি: সংগৃহীত

জাপান সূর্যোদয়ের দেশ। সূর্য উদয় হওয়ার সবচেয়ে কাছাকাছি স্থানে থাকার কারণে অনেকে একে এই নামে চিনলেও সূর্য বাদেও জাপানে রয়েছে আরও হাজারটা দেখার, শেখার এবং উপলব্ধি ও উপভোগ করার মতো বিষয়।

সারাবিশ্বের মধ্যে এই দেশে গড় আয়ু সর্বাধিক এবং শিশু মৃত্যুর হার তৃতীয় সর্বনিম্ন। বিশ্বশান্তি সূচকে এই রাষ্ট্রের স্থান সর্বোচ্চ।

বিশ্ব শান্তিতে নাম্বার ওয়ান দেশটিতে শান্তির ধর্ম ইসলামের অবস্থা কী? জবাব খুবই সহজ, জাপানে মুসলমানের সংখ্যা মাত্র দুই শতাংশ। তবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রবাসীদের কল্যাণে মুসলমানদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। একইভাবে বাড়ছে মসজিদের সংখ্যাও।

সমুদ্রবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাপানে এক সময় ইসলাম ও মুসলমানের অস্তিত্ব তেমন খুঁজে না পেলেও বর্তমানে বাড়ছে মুসলমানের সংখ্যা। জাপান সরকারের হিসাব মতে দেশটিতে ৬ লাখ মুসলমান রয়েছে। জাপানের সংখ্যগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম শিন্টো ও বৌদ্ধ। এ দু’টি ধর্মের কিছু চর্চা থাকলেও অন্যান্য ধর্মালম্বীর সংখ্যা নিতান্তই কম। এদেশে ইসলাম ধর্মের অনুসারী প্রায় সকলেই পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে আসা। তবে ভিন্নধর্মের অনুসারী হওয়ার ফলে ইসলাম চর্চার প্রচার এবং প্রসারে তেমন কোনো প্রশাসনিক বিধিনিষেধ নেই। জাপানের প্রধান প্রধান শহর যেমন- টোকিও, ওসাকা, সাপ্পোরো, কিয়োটো, নাগোয়াতে বেশকিছু মসজিদ রয়েছে।

১৯৫৬ থেকে ১৯৬০ সালের মধ্যে ভারত-পাকিস্তান থেকে একাধিক তাবলিগ জামাত ও মুসলিম স্কলার জাপানে আসেন। আধ্যাত্মিক চিন্তা সঞ্চারকারী এই আন্দোলনে বহু জাপানী শান্তির লক্ষ্যে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন।

জাপানের অবস্থান অনেকটা উত্তর মেরুর দিকে হওয়াতে সূর্যোদয় বেশ আগে হয়ে থাকে এবং দিনের দৈর্ঘ্য বেশি। ফলে রমজানের রোজা এখানে বেশ দীর্ঘ হয়ে থাকে। বরাবরের মতো প্রায় আঠারো ঘণ্টা রোজা রাখতে হয়। দেশটিতে হালাল খাবারের সরবরাহ নিতান্তই অপ্রতুল। পর্যাপ্ত কোনো হালাল খাবারের দোকান না থাকাতে রাজধানী টোকিও থেকে হালাল খাবার কিনে আনতে হয়, যা বেশ ব্যয়সাধ্য। তবুও শত প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও জাপানের মুসলমানরা পবিত্র রমজানের মর্যাদা সমুন্নত রেখে বিধিনিষেধ মেনে চলার চেষ্টা করছেন।

এদিকে ‘মড়ার ওপর খাড়ার ঘা’ হিসেবে দেড় দশক আগে ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর মুসলমানদের সম্পর্কে গৎবাঁধা যে নেতিবাচক ধারণা প্রচার করা হচ্ছে তার প্রভাব পড়েছে জাপানেও।

জাপানে মুসলমান ও মসজিদের ওপর পদ্ধতিগতভাবে নজরদারি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন। পুলিশ মসজিদে গুপ্তচর নিয়োগ করেছে। লোকজনের বাসাবাড়িতেও নজরদারি করা হচ্ছে। তারা ৭০ হাজার লোকের তথ্য সংগ্রহ করেছে বলে আলজাজিরা সংবাদ সূত্রে প্রকাশ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ মসজিদ ও অন্যান্য স্থানে গোয়েন্দা ক্যামেরা স্থাপন করেছে বলেও জানায় তারা।

এসব কারণে আমাদের দেশে যে ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশ বজায় রেখে পুরো মাস দান-খয়রাত, জিকির-আজকার, নফল ইবাদত বা তারাবির মাধ্যমে পালিত হয়, তা জাপানে সম্ভব হয়ে ওঠে না। অত্যন্ত কর্মব্যস্ততার কারণে এবং স্থান সংকুলানের অভাবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া জামাতে নামাজ আদায়ও প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় অনেকের পক্ষে।

তবে জাপানিরা অত্যন্ত অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী, ফলে রমজানের সময় কর্মক্ষেত্র থেকে সহজেই ইফতারের জন্য সময় বের করা সম্ভব হয়। সব মিলিয়ে অনুকূল-প্রতিকূল তথা মিশ্র পরিবেশে জাপানে পালিত হয় সিয়াম সাধনার মাস।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।