বরিশাল: বরিশাল বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের একটি শহর। প্রাচ্যের ভেনিস নামে পরিচিত বরিশাল কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত।
মাওলানা বেগ বলেন, রমজান মাসের ফজিলত, গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বিশদ আলোচনা রয়েছে। রমজানের গুরুত্বের প্রেক্ষিতে শেষ নবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজান মাস শুরুর প্রাক্কালে শাবানের শেষ তারিখে সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেন।
এ ভাষণের উদ্দেশ্য ছিলো, সাহাবায়ে কেরামের মাধ্যমে গোটা উম্মতের কাছে মাহে রমজানের পয়গাম পৌঁছে দেওয়া। যাতে উম্মত রমজানের ফজিলত, সেহেরির ফজিলত, ইফতারি ফজিলত, ক্বিয়ামুল লাইনের ফজিলত ও এর সওয়াবের কথা শুনে আমলের প্রতি আগ্রহী হয়।
এ বিষয়ে হাদিসে আছে। হজরত সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) শাবান মাসের শেষ তারিখে আমাদেরকে সম্মোধন করে একটি ভাষণ দেন। ওই ভাষণে তিনি বলেন, ‘লোক সকল! একটি মহান মাস তোমাদের ওপর ছায়াপাত করেছে। ’
মাসটি কেন মহান, এর বিবরণ অন্য হাদিসে আছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘এটা এমন মাস যার জন্য বেহেশতকে সারা বছর ধরে সুসজ্জিত করা হয়। এ মাসের প্রথম রাত যখন আগমন করে, তখন জান্নাতের তলদেশ থেকে একটি সুমধুর বাতাস প্রবাহিত হতে থাকে। যার প্রবাহে বেহেশতের পাতাপল্লব, ডালাপালা ও দরজার কড়াসমূহ হেলতে থাকে। এতে এমন এক মুগ্ধকর ও হৃদয়স্পর্শী সুর উত্থিত হয় যে, শ্রোতারা ইতোপূর্বে কখনও এরূপ আর শুনতে পায়নি। তখন অনিন্দ্য সুন্দর ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট হুররা আত্মপ্রকাশ করে বেহেশতের বালাখানা সমূহের মধ্যে দণ্ডায়মান হয়ে ঘোষণা করতে থাকে, আল্লাহর কোনো প্রিয়বান্দা আছে কি, যারা আমাদেরকে বিয়ে করার জন্য আল্লাহর দরবারে দরখাস্ত করবে? এরপর তারা বেহেশতের দারোগা রেদওয়ানের নিকট জিজ্ঞেস করে এটা কোন রাত্রি? উত্তরে তিনি বলেন, এটা রমজানের প্রথম রাত্রি। ’
তিনি বলেন, এ কারণেই হরজত রাসূলে কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘লোক সকল! এক মহান মাস তোমাদের ওপর ছায়াপাত করেছে। ’
মাওলানা মির্জা নূরুর রহমান বেগ আরও বলেন, রমজান মাস এমন একটি মহান মাস; যার সম্মানে জান্নাতের সব দরোজা খুলে দেওয়া হয়। একটি দরজাও বন্ধ থাকে না। জাহান্নামের সমস্ত দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। একটি দরজাও খোলা থাকে না। সুতরাং কেউ যদি এ মাহে রমজানে মারা যায় তাহলে কিয়ামত পর্যন্ত তার কবরে কোনো আজাব হবে না। যেহেতু সে এমন সময় মারা গেছে, যখন জাহান্নামের সব দরোজা বন্ধ।
এ কারণেই হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তার ভাষণের শুরুতে বলেন, ‘লোক সকল! একটি মহান মাস তোমাদের ওপর ছায়াপাত করেছে। ’
ওই ভাষণের পরের অংশে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘এটা বরকতের মাস। ’ এ মাসে একটি নফল একটি ফরজের সমান, একটি ফরজ সত্তরটি ফরজের সমান। তাই হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘বরকতওয়ালা মাস। ’ এ মাসে আমলে বরকত, রুজিতে বরকত, সময়ে বরকত, হায়াতে বরকত, শুধু বরকত আর বরকত।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মানুষের প্রত্যেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি করা হয়। একটি নেকির সওয়াব দশগুণ থেকে সাতশ’ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। ’
আল্লাহতায়ালা বলেন, কিন্তু রমজানের বিষয়টি আলাদা। কেননা, তা একমাত্র আমার জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো। বান্দা তো আমার জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে দমন করে এবং পানাহার ত্যাগ করে।
খতিব মির্জা নূরুর রহমান বেগ আরও বলেন, রমজানের ছয়টি বৈশিষ্ট্য। এ বরকতওয়ালা মাসে আল্লাহতায়ালা রোজাদারকে ছয়টি বস্তু দ্বারা সম্মানিত করেন। সেগুলো হলো-
১. রোজাদারদের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধির চেয়ে অধিকতর প্রিয়।
২. সমুদ্রের মাছও রোজাদারের জন্য ইফতার পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে।
৩. রোজাদারদের সম্মানে প্রতিদিন জান্নাতকে সুসজ্জিত করা হয়।
৪. রমজানে দুর্বৃত্ত শয়তানকে বন্দী করে রাখা হয়।
৫. রমজানের শেষরাতে রোজাদারদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়।
৬. এ মোবারক মাসে প্রতিদিন একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে, হে পুণ্যকামী! তুমি এগিয়ে চলো এবং পাপাকাঙ্খী তুমি নিবৃত হও। ’
দক্ষিণাঞ্চলের এ আলেম আরও বলেন, এরপর হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘এটা এমন বরকতের মাস। যাতে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। ’
এর পর নবী করিম (সা.) আরও বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা এর দিবাভাগে রোজা ফরজ করে দিয়েছেন এবং রাতে ইবাদাকে সওয়াবের কাজ করেছেন। ’
এ ছাড়াও কোরআনের অনেক আয়াত ও হাদিসে রমজানের ফজিলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে বিশদ আলোচনা রয়েছে। এ সবের উদ্দেশ্যে হলো, মানুষকে আল্লাহমুখি করা। ইবাদতের প্রতি আগ্রহী করা।
আল্লাহতায়ালা সবাইকে পবিত্র রমজানের ইবাদতের ক্ষেত্রে তার সন্তুষ্টি অর্জন করার তওফিক দান করুন। আমিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৬ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৬
এমএ/