রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের রমজান মাসে দিনের বেলায় যেমন রোজা ফরজ, তেমনিভাবে রাতের বেলায় তারাবির নামাজও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তারাবির নামাজের অনেক ফজিলত।
তারাবি নামাজের নিয়ত
তারাবি নামাজের নিয়ত অন্যান্য নামাজের ন্যায়। অন্তরে শুধু সুন্নতে মোয়াক্কাদা তারাবির নামাজের নিয়ত করে তাকবির বলবে।
তারাবির নামাজের শুরুতে একবারে বিশ রাকাতের নিয়ত করার দ্বারা নামাজ সহিহ হয়ে যাবে। তবে প্রত্যেক দুই রাকাতের শুরুতে ভিন্ন ভিন্ন নিয়ত করা উত্তম। -ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৬৫
তারাবিতে কোরআন খতম
তারাবির নামাজে পূর্ণ কোরআন শরিফ খতম পড়া বা শুনা সুন্নাত। দু’জন হাফেজ উভয়ে পালাক্রমে শুনে এবং পড়ে তারাবিতে কোরআনে কারিমের খতম করলে খতমের সুন্নত অবশ্যই আদায় হয়ে যাবে। -রদ্দুল মুহতার: ২/৪৬
তারাবির নামাজের কোরআন তেলাওয়াত অন্যান্য নামাজের তেলাওয়াত থেকে সামান্য দ্রুত হওয়ায় কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু এত বেশি দ্রুত হওয়া যে কোরআনের শব্দই স্পষ্ট না হয় বৈধ নয়। -রদ্দুল মুহতার: ১/৫৪১, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/১১৭
তারাবির নামাজে কোরআন শরিফ খতম পূর্ণ করার জন্য তারাবিতেই সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করা জরুরি, অতএব ছুটে যাওয়া অংশ তারাবির নামাজেই পড়তে হবে, অন্যথায় খতম পূর্ণ হবে না এবং পূর্ণ খতম শোনার সওয়াব পাওয়া যাবে না। -আল মুগনি, ইবনে ক্বুদামা: ২/১২৫
খতম তারাবি চলাকালীন তন্দ্রার কারণে বা বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে সাউন্ডবক্স বন্ধ থাকায় কেউ তেলাওয়াতের কোনো অংশ শুনতে না পেলেও পরিপূর্ণ খতমের সাওয়াব পেয়ে যাবে। -আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল: ৩/৬৮, নিজামুল ফাতাওয়া: ৫/৯৪
একজন হাফেজ এক মসজিদে তারাবিতে কোরআনে কারিম খতম করার পর অন্য মসজিদে ২য় খতম করতে পারবে। দ্বিতীয় মসজিদের মুসল্লিদের জন্য এটি প্রথম খতম হলেও তাদের ইক্তিদা ও খতমে কোরআনের সওয়াবে কোনো ব্যাঘাত হবে না। -মাজমুআতুল ফাতাওয়া: ১/২২৪
খতমে কোরআনের উত্তম পদ্ধতি হলো, ১৯তম রাকাতে সূরা নাস পর্যন্ত এবং ২০তম রাকাতে পুনরায় সূরা বাকারার শুরু থেকে ‘মুফলিহুন’ পর্যন্ত তেলাওয়াত করা। -তিরমিজি, হাদিস: ২৯৪৮, ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া: ৪/৩৮৩
তারাবির মাঝে ও শেষের আমল
তারাবির নামাজের চার রাকাত পর বিরতিতে কোনো নির্দিষ্ট আমলের নির্দেশ নেই। তাই ওই সময় চুপ করে বসে থাকলেও কোনো ক্ষতি নেই। তবে নিঃশব্দে কোরআন-হাদিসে বর্ণিত যেকোনো জিকিরে মশগুল থাকা ভালো।
তারাবির বিশ রাকাত শেষে আমাদের দেশে প্রচলিত যে দোয়া পড়া হয় তা সুন্নত নয়। তবে জরুরি মনে না করে পড়লেও কোনো আপত্তি নেই। তবে তা সুন্নত আমলের ন্যায় নিয়মতান্ত্রিক আমল বানিয়ে নেওয়া ঠিক নয়।
তারাবির জামাতে মহিলাদের অংশগ্রহণ
মহিলাদের জন্য তারাবির নামাজ ও অন্যান্য সব নামাজ ঘরে একাকি পড়াই শরিয়তের বিধান। এর বিপরীত করা জায়েয নয়। -আল বাহরুর রায়েক: ১/৬২৭, রদ্দুল মুহতার: ২/৪৬
বিশুদ্ধ হাদিসে রয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মহিলাদেরকে মসিজেদ না এসে ঘরে নামাজ আদায় করার নির্দেশ দিলেন তখন একজন মহিলা সাহাবি রাসূল (সা.)-এর খেদমতে এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার মন চায় আপনার পিছনে নামাজ পড়তে, আমাকে অনুমতি দিন। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তদুত্তরে যা বললেন তার মর্ম হলো, আমি তোমার আগ্রহের মূল্যায়ন করি, তা সত্ত্বেও মসজিদে নববিতে এসে পঞ্চাশ হাজার রাকাত সওয়াব পাওয়া এবং আমার পিছনে নামাজ পড়া থেকে তোমার ঘরে একা নামাজ পড়াই উত্তম।
তাই রাসূল (সা.)-এর অবর্তমানে তার প্রিয় সাহাবিগণ বিশেষ করে হজরত ওমর ও হজরত আয়েশা (রা.) মহিলাদের মসজিদে যেতে নিষেধ করেছেন। যার অনুসরণে দেড় হাজার বছর পর্যন্ত কোনো আলেম মহিলাদেরকে মসজিদে এসে নামাজ পড়ার জন্য উৎসাহিত করেননি এবং এর জন্য কোনো ব্যবস্থাও করেননি। -সহিহ বোখারি, হাদিস: ৮৬৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৭০৯০
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৬
এমএ/