ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

রমজানে নারীদের জন্য বিশেষ ১০ আমল

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৩ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৬
রমজানে নারীদের জন্য বিশেষ ১০ আমল

রোজার দায়িত্ব-কর্তব্য ও আমলের দিক থেকে নারীদের বিষয়টি একটু আলাদা। কেননা পুরুষরা বাইরের নানা দিক সামাল দিতে গিয়ে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও রমজানের পরিপূর্ণ দাবি পূরণে অনেকাংশে ব্যর্থ হয়।

সাধারণত মহিলাদের বাইরের ব্যস্ততা কম থাকে। বাইরে বেরুলেও বেশি সময় বাইরে থাকতে হয় না। ঘরোয়া পরিবেশেই কাটে রোজার দিনগুলো। ফলে তাদের পক্ষে রমজানের পূর্ণ ফায়েজ ও বরকত লাভ করা অনেকাংশে সহজ। যেহেতু নারীদের জন্য কিছুটা বাড়তি সুযোগ রয়েছে, তাই তাদের জন্য উচিত হলো রমজানের প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে জীবনের সফলতার দ্বার উন্মোচন করা।

কাঙ্ক্ষিত সফলতা পেতে হলে নারীদের রমজান মাসে কিছু জিনিসের প্রতি গভীরভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

এক. ইবাদতের ক্ষেত্রে একটি ভারসাম্য আনতে হবে। রমজানে প্রতিটি ইবাদতেই সত্তর গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। রোজাই হচ্ছে রমজানের প্রধান ইবাদত। তবে রোজার চেয়ে নামাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। রোজা রাখার ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে- এটা অবশ্যই প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু অনেকেই আছেন রোজা রাখেন কিন্তু নামাজ ঠিকমত পড়েন না- এটা খুবই অন্যায়। অন্য সময় তো নামাজ পড়বেনই, রমজানে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়বে। তাছাড়া অন্যান্য ইবাদতের মাত্রাও বাড়িয়ে দিতে হবে।

দুই. বাকসংযম করতে হবে। অধিক বাকপ্রবণ বলে মহিলাদের একটি বদনাম আছে। পরচর্চা, কুত্সা, নিরর্থক বিষয় নিয়ে মাতামাতি ইত্যাদি তাদের চিরায়ত অভ্যাস। কিন্তু এগুলো রোজার জন্য খুবই ক্ষতিকারক। না খেয়ে উপোস থাকার যেমন রোজার অংশ তেমনি বাকসংযমও। তাই রমজানে মহিলাদের জন্য উচিত হলো যথাসম্ভব বাকসংযম করা।

তিন. চলাফেরা ও চালচলনে শালীন হতে হবে। জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকা ও এ ধরনের যে কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন না হওয়া রোজার একটি অংশ। মহিলাদের খোলামেলা চালচলন তাদের নিজেদের রোজার পবিত্রতার জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি পর পুরুষের রোজা নষ্ট কিংবা হালকা করার জন্যও দায়ী। এজন্য রমজানের দিনে মহিলাদের বাইরে বের হতে হলে শালীনতার সঙ্গে বের হওয়া উচিত।

চার. অধিকহারে দান-সদকা করা। কেননা অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় রমজানে দান-সদকার ফজিলত অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে নারীদের রয়েছে দারুণ সুযোগ। সংসারের নিয়ন্তা হিসেবে তারা ইচ্ছে করলে এ মাসে গরিব-দুঃখীর দিকে সহানুভূতির হাত প্রসারিত করতে পারেন। এর দ্বারা আল্লাহর বিশেষ কৃপা কুড়ানোর আশা করা যায়।

পাঁচ. সবার সঙ্গে মার্জিত আচরণ করা। রোজা রাখলে ক্ষুধা লাগবে, পিপাসা পাবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এর প্রভাব যেন কোনোভাবেই আচরণে প্রকাশ না পায়। সাংসারিক কাজের ঝামেলার কারণে অনেক মহিলা রোজা রেখে মেজাজ খারাপ করে রাখেন।

ছয়. রোজা রেখে অহেতুক কাজ বর্জন করা উচিত। হাদিসে রোজাদারকে নিরর্থক কাজ থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ করা হয়েছে। রোজা রেখে অনেকের দিন কাটতে চায় না- এই অজুহাতে বিভিন্ন আজেবাজে কাজে সময় ব্যয় করেন। কিন্তু এটা সমীচীন নয়। কেননা রোজাদারের সারাদিন হবে ইবাদতের শামিল। বাহ্যিক কোনো ইবাদত না করলেও তার ধ্যান-ধারণা থাকবে ইবাদতের প্রতি। রোজার পবিত্রতা নষ্ট করে এমন কোনো কাজ যেন না হয়।

সাত. সংসারের শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রতি খেয়াল করা। বছরের অন্যান্য সময় থেকে যেহেতু রমজানের রুটিন কিছুটা ভিন্ন সেজন্য সাংসারিক কাজকর্ম কিংবা পারিবারিক ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। তা নিরসন করার দায়িত্ব মহিলাদের ওপর। অন্যের সুবিধার কথা চিন্তা করে, নিজে কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করে হলেও সংসারের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।

আট. বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা। রমজান হচ্ছে কোরআন নাজিলের মাস। এ মাসের সঙ্গে কোরআনের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। রমজানে কোরআন তেলাওয়াতের সওয়াব অনেক গুণ বেশি। যারা কোরআন পড়তে পারেন তারা বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করবেন। আর যারা কোরআন পড়তে পারেন না, তারা এ মাসে তা শিখে নিতে পারেন।

নয়. অপচয় রোধ করা। রমজানে যত খুশি খরচ কর, তাতে কোনো বাধা নেই- এ ধরনের একটি কথা আমাদের সমাজে প্রচলিত। এর ওপর ভিত্তি করে প্রত্যেকটি পরিবারেই খরচের মাত্রা বেড়ে যায়, যা অপচয়ের গণ্ডি স্পর্শ করে। কিন্তু মূলত এ কথাটি ঠিক নয়। রমজান সংযমের মাস হিসেবে সব কিছুতেই সংযমতা আনতে হবে।

দশ. শেষ দশকে ইতিকাফ করা। ইতিকাফ রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল। মহিলারাও ইচ্ছে করলে ইতিফাক করতে পারেন। তবে তা অন্দরমহলে পূর্ণ পর্দা বজায় রেখে। এর দ্বারা রমজানের দাবি যেমন ভালোভাবে আদায় করা যায় তেমনি মহিমান্বিত রাত শবেকদরের ফয়েজ ও বরকত লাভে ধন্য হওয়া যায়। তাই নারীদের জন্য এ সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১২১ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।