ময়মনসিংহ: ফজিলতে ভরপুর রমজান মাসের অন্যতম আমল রোজা নিয়ে একেকজনের স্মৃতি একেক রকম। সেই রোজার স্মৃতি নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ধর্মমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান।
শৈশব থেকেই সব রোজা রাখতেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। শৈশবে রোজা রাখা ছিল ভীষণ শখের বিষয়। এমনকি চৈত্র্যের প্রখর খরতাপে ক্লান্ত হলেও রোজা ভাঙতাম না। অবশ্য সঠিক সালের কথা এখন আর মনে নেই। কিন্তু মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় কয়েকটি রোজা ভেঙেছিলাম- অপকটে জানান মন্ত্রী।
স্মৃতিকাতর হয়ে প্রবীণ এ নেতা বলেন, ‘জীবনের প্রথম রোজার কথা এখন আর খেয়াল নেই। সম্ভবত যখন আমার বয়স ৬ কী ৭ বছর তখন থেকেই সব রোজা রাখতাম। বাবা-মা বরাবরই রোজা রাখতে বারণ করতো। মনে আছে চৈত্র মাসে প্রকৃতি অগ্নিরুপ নিতো। রোজা রাখতে গিয়ে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়তো। কিন্তু এরপরেও রোজা ভাঙতাম না। ’
শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা রাখেন প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান। তখন চলছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। পরীক্ষার সময় রোজা রাখলে ঠিকমতো পড়াশুনা হবে না, এমন চিন্তায় বাবা-মা’র জোরাজুরিতে কয়েকটি রোজা ভেঙেছিলাম, বলেন ধর্মমন্ত্রী।
বাজারে এখন দামি বাহারি ইফতার সামগ্রীর ছড়াছড়ি। রোজার মাসকে ঘিরে ইফতারিতে সুস্বাদু ও মুখরোচক খাবারের তালিকাও দিন দিন হচ্ছে দীর্ঘ। কিন্তু আমাদের শৈশবকালে এমনটি ছিল না।
স্মৃতিকাতরতায় আচ্ছন্ন বর্ষীয়াণ মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সময় ইফতার ছিল একেবারে সাধাসিধে। মা-বাবা’র সঙ্গে বসে বুট, বড়া ও মুড়ি খেতাম। সেই সময় ইফতার করে অনেক আনন্দও পেতাম। এখন তো আধুনিক ইফতারি সামগ্রীর শেষ নেই। কিন্তু সেই স্বাদ আর অানন্দ হারিয়ে গেছে। ’
ঈদের আগের রাতে এখন আতশবাজি রীতিমতো ফ্যাশন হয়ে উঠেছে। অথচ ইসলামে আতশবাজি নিষিদ্ধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সময়ে ঈদের আগের রাতের আনন্দও ছিল বেশ নির্মল। ঈদের চাঁদ দেখে আত্মীয়-স্বজন ও পাড়ার মুরুব্বিদের সঙ্গে দেখা করতে যেতাম। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলতাম, ‘চাঁদ উঠেছে। কাল ঈদ। ’
‘চাঁদ দেখে আমরা খুব আমোদ-ফূর্তি করতাম। বাবা-মাকে এবং মুরুব্বিদের সালাম করতাম। আমাদের মুখ থেকে চাঁদ ওঠার খবর শুনে মুরুব্বিরাও আমাদের অনেক আদর করতেন-’ বলতে থাকেন ধর্মমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, ঈদের দিন সকালে আম্মার ব্যস্ততার অন্ত ছিল না। সেই স্মৃতিকথা তুলে ধরে বলেন, ঈদের দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে মা রান্নাবান্না শুরু করতেন। আমরা মাংস, পোলাও খাওয়ার পর সেমাই খেতাম। আকুয়া গ্রামের বাড়িতে মাঠ পড়তাম। আব্বা আর বড় ভাইয়ের হাত ধরে ঈদগাহে যেতাম। আহ, সে কী আনন্দ। ’
ওই সময় মুরুব্বিদের ঈদের দিন সকালে সালাম করলেও সেলামি জুটতো না। ঈদের সেলামির প্রচলন হয় অনেক পরে। হারানো দিনের সেই স্মৃতিচারণ করে মন্ত্রী বলেন, ‘মুরুব্বিরা আদর করতেন অনেক। কিন্তু তারা আমাদের কোনো সালামি দিতেন না। তবুও খুশি মনেই বাবা-চাচাদের সালামের পর দলবেঁধে মুরুব্বিদের সালাম করতাম। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৬
এমএএএম/এমএইউ/