ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

দুধভাত খাওয়ার লোভে রোজা রাখতে চাইতাম: এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৪ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৬
দুধভাত খাওয়ার লোভে রোজা রাখতে চাইতাম: এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ছবি: সোহেল সরওয়ার- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: পবিত্র রমজান মাসে বাংলানিউজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য সমাজে যারা প্রতিষ্ঠিত তাদের শৈশব, কৈশোর ও বাল্যকালের রোজার স্মৃতি জানার চেষ্টা করেছে। আজকের আয়োজনে কথা বলেছেন চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী

তিনবারের নির্বাচিত চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন এখনও ‘চট্টগ্রামবাসীর অভিভাবক’ হিসেবেই স্বীকৃত। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলানিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট রমেন দাশগুপ্ত কথা বলেছেন আজকের অতিথির সঙ্গে। সেই আলাপচারিতায় চুম্বুকাংশ পাঠকের জন্য-

দুধভাত খাওয়ার লোভে রোজা রাখতে চাইতাম
আমার মা-বাবা, পরিবারের সবাই খুব পরহেজগার ছিলেন। বাল্যকাল থেকেই আমার পিতামাতা ধর্মীয় অনুশাসনের শিক্ষা আমাদের দিয়েছেন। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, নামাজ পড়া এসব শিক্ষা আমি ছোটবেলায় বাবা-মার কাছেই পেয়েছি। তারা ছোটদের রোজা রাখতে দিতেন না। বলতেন, ছোটরা রোজা রেখে ভেঙে ফেললে গোনাহ হয় না। এদিকে বাড়িতে যারা রোজা রাখতেন তারা সেহেরিতে দুধ‍ভাত খেতেন। দুধভাতের প্রতি খুব লোভ ছিল আমার। অন্যান্য খাবারের চেয়েও দুধভাতের প্রতি আমার বেশি আগ্রহ ছিল। রাতে আমাকেও প্রতিদিন দুধভাত দেওয়া হতো, কিন্তু সবার সঙ্গে বসে খাওয়ার লোভ সামলাতে পারতাম না। সেজন্য সবার সঙ্গে বসে দুধভাত খাওয়ার লোভে রোজা রাখতে চাইতাম।

বড়রা বলতেন- কলাগাছে কামড় দিলে আবার রোজা হবে
বয়স তখন চার কি পাঁচ। দুধভাত খাওয়ার লোভে রোজা রেখেছি। বড়রা দুপুরে জোর করে ভাত খাইয়ে দিত। আমি যদি বলতাম, রোজা ভেঙে যাবে, তারা বলতেন- কলাগাছে কামড় দিয়ে এলে আবার রোজা শুরু হবে। কি আর করা, ভাত খেয়ে ফেলতাম। পরে কলাগাছে কামড় দিয়ে আসতাম, সন্ধ্যায় আবার সবার সঙ্গে বসে ইফতারি করতাম। পরে বুঝেছিলাম, আসলে আমাকে খাওয়ানোর জন্য কলাগাছে কামড় দিলে রোজা শুরু হবে বলে মিথ্যা কথা বলত। যেমন- আমার মা বলতেন পোকায় খাওয়া আম খেলে সাঁতার শিখতে পারব। এটা শুনে পোকায় খাওয়া আম আমরা ফেলে দিতাম না, পোকায় খাওয়া অংশটুকু কেটে ফেলে বাকিটা খেতাম। বিষয়টা ছিল সেরকমই।

রোজা রেখেছি আবার ভেঙেছি
স্কুলে যখন ফোর কি ফাইভে উঠেছি, তখন ঘরে রোজা রাখা বাধ্যতামূলক করে দিল। রোজা রাখতেই হবে। শেষ রাতে উঠে সেহেরি খেয়ে সারাদিন রোজা রেখে ইফতার করতে হবে। আমি তো বেশি দুষ্টু ছিলাম, স্কুলে কম যেতাম, মাঠে খেলতাম। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরতাম। ধরেন, হঠাৎ পানির তৃষ্ণা পেল, ঢকঢক করে পানি খেয়েনিলাম। গাছে কোনো ফল দেখলাম, তাড়াতাড়ি পেড়ে নিয়ে খেয়েনিলাম। তবে কারও সামনে নয়, গোপনে। বাসায় সবাই ভাবত, আমি রোজা আছি। ইফতারির সময় ঠিকই গিয়ে হাজির হতাম। এভাবে রোজা রেখেছি আবার ভেঙেছিও।

সারাজীবন রোজা রেখেছি, এটা বলতে পারব না
পাকিস্তান আমলে ও বঙ্গবন্ধু মারা যাওয়ার পর আন্ডারগ্রাউন্ড পলিটিক্স করতে হয়েছে অনেকদিন। সেসময় রোজা কখন আসত, কখন ঈদ আসত তা হিসেব করার সময় পাইনি। এ সময় অনেকবার রোজা ভাঙতে হয়েছে। আন্দোলন, সংগ্রাম করেছি। খাওয়া-দাওয়ার ঠিক ছিল না। হঠাৎ পানির তৃষ্ণায় ছটফট করছি, পানি খেয়ে ফেলেছি। গোছালো জীবনযাপন করতে পারিনি, নিয়ম মেনে রোজা রাখব কিভাবে? তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৩০ দিনে ৩০টা রোজাই রেখেছিলাম, সেটা মনে আছে। রোজা রেখে কোনো অপারেশনে গিয়েছিলাম কি না, সেটা এখন মনে পড়ছে না। তবে যুদ্ধের সময় রোজা রেখেছিলাম এটা মনে আছে। আমি বলতে পারতাম, সারাজীবন রোজা রেখেছি, কিন্তু সেটা বলব না। মিথ্যা কথা বলে রোজার মাসে আল্লাহর কাছে গোনাহগার হতে পারব না। রোজা রেখেছি, রোজা ভাঙতে হয়েছে এটাই সত্য।

এখন আর রোজা ভাঙি না
এখন আমার শরীরে নানান অসুখ। ডাক্তার নিষেধ করেছে রোজা রাখতে। তারপরও আমি এখন রোজা ভাঙি না। যে কদিন বাঁচব, যতদিন পারব রোজাটা রাখতে চাই। যেদিন শরীর আর সাপোর্ট করবে না সেদিন দেখা যাবে। অনেকেই রোজা রাখেন, তাদের অনেক বিষয়ে ভণ্ডামি করতে দেখি। নামাজ পড়ে না, মাথায় টুপি দেয় না, ধর্মীয় অনুশাসন মানে না। আবার অনেকে রোজা রাখে না, অথচ বড় বড় ইফতার পার্টি দেয়। অনেকে রোজা রাখছে কিন্তু ইচ্ছে করে মানুষের পকেট কাটার জন্য কাপড়চোপড়, সেমাই, ছোলা-তেলের দাম বাড়াচ্ছে। অধিক মুনাফা করছে। তবে এই রোজা কি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে? মাথায় টুপি দিচ্ছে, আল্লাহ আল্লাহ করছে অথচ ইয়াবা এনে যুবসমাজকে নষ্ট করছে। তরুণদের হাতে ইয়াবা, অস্ত্র তুলে দিয়ে তাদের ভুলপথে পরিচালিত করছে। তাদের রোজা কি আল্লাহ গ্রহণ করবে?

তাই সবাইকে বলব, আসুন, রোজা রাখি, নামাজ পড়ি, তারাবির নামাজ পড়ি, ঈদের নামাজ আদায় করি, নিজেকে সঠিক পথে আনার জন্য এই মাসটা কাজে লাগাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৬
আরডিজি/আইএসএ/টিসি/এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।