শিশুরা আগামী দিনের কর্ণধার। যেকোনো দেশ ও জাতির অস্তিত্ব একটি আদর্শ শিশুর ওপর নির্ভর করে।
যে সন্তানটি হবে আদব-আখলাক ও শিষ্টাচারে সবার সেরা। যে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ সাধন এবং মুক্তির কারণ হবে। এমন সন্তান সবারই কাম্য। আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমল জারি থাকে। তার মধ্যে একটি হলো- দুনিয়াতে একটি নেক সন্তান রেখে যাওয়া। যদি নেক সন্তান রেখে যাওয়া যায় এবং সে যদি নেক আমল করে বাবা-মার জন্য দোয়া করে, তবে এর সওয়াব তারা কবরে পেতে থাকে। ’
সেই আদর্শ সন্তানের কল্যাণ পেতে ইসলামের অনুসরণ অনুকরণ জরুরি। ইসলামি বিধানমত শিশুটিকে লালন করতে পারলে এ সুফল লাভ করা সম্ভব। আর শিশুকে গড়ার বা প্রশিক্ষণ দেওয়ার অন্যতম মাস হলো পবিত্র মাহে রমজান। এ মাসে অন্যান্য কাজ একটু কমিয়ে শিশুর জীবন গঠনে চোখ রাখলে বেশ ফায়দা পাওয়া যাবে। এটি একটি শিশুর অধিকার এবং একজন অভিভাবকের ঈমানি কর্তব্য।
যেহেতু শিশুরা রমজান আসার আগেই রোজা উদ্যাপনের জন্য প্রহর গুনতে থাকে। পরিকল্পনা আঁটতে থাকে এবার কে কয়টি রোজা রাখবে। কোনো কোনো শিশু তো বয়সে স্বল্প হলেও সবক’টি রোজা রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। রমজানের চাঁদ দেখতে শিশুরাই বেশি আনন্দিত হয়। তারা তার পড়শি বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে তারাবি ও রোজা রাখার নানা পরিকল্পনার কথা শেয়ার করে। মাগরিবের পর থেকেই টুপি পাঞ্জাবি পরে মসজিদমুখি হয়ে যায়।
সাহরির সয়য়েও কোনো কোনো শিশুকে ডাকতে হয় না, বরং সেই তার মা-বাবা, ভাই বোনকে ডেকে তুলে দেয়। আবার কোনো শিশুকে একবার ডাক দিলেই লাফিয়ে ওঠে দ্রুত দাঁত ব্রাশ করে সবার আগে সাহরি খেতে প্রস্তুত হয়ে যায়। তাই এ রমজানেই শিশুর চরিত্র ও মানসিকতা উন্নয়নে গাইড দিতে হবে।
এতে শিশুর জীবন গঠনে অভূতপূর্ব সফলতার গ্যারান্টি রয়েছে। শিশুদের এই আশাবাদকে কাজে লাগাতে হবে। তাদের এ আগ্রহ-উদ্দীপনাকে ধরে রেখে দীন-ইসলামের অনেক কিছু শিখিয়ে দেয়া সম্ভব। যদিও আমাদের সমাজে এর বিপরীত দৃশ্যও দেখা যায়, যা নিতান্তই দুঃখজনক। যেমন, শিশুরা তারাবি পড়তে গেলে পড়া ও পরীক্ষার দোহাই দিয়ে তাদের বারণ করা হয়। তারা রোজা রাখতে চাইলে স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা করে তাদের রোজা রাখা থেকেও ফিরিয়ে রাখা হয়। অথচ সাহরির সময় অনেক শিশুকে ডেকে না তুলে দেয়ার কারণে না খেয়েও রোজা রাখতে দেখা যায়।
এ জন্য শিশুদের প্রাপ্ত বয়স হওয়ার আগেই নামাজ, রোজা ও শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া তার অভিভাবকের দায়িত্ব। আর রমজানে সিয়াম সাধনার সঙ্গে সঙ্গে এ মাসের গুরুত্ব, সংযম, উদ্দেশ্য ও উপকারিতা সম্পর্কে তালিম দিতে হবে। সেই সঙ্গে রমজানে তাদের করণীয় নির্ধারণ করে দিতে হবে।
বলতে হবে, এটি সংযমের মাস, এ মাসে কারও সঙ্গে ঝগড়া করা যাবে না, বকাবকি করা যাবে না, মারামারি করা যাবে না, মিথ্যা কথা বলা যাবে না, কারও জিনিস নষ্ট করা যাবে না এবং না বলে ধরাও যাবে না। আমানতের খেয়ানত করা যাবে না, ওয়াদা ভঙ্গও করা যাবে না। এমনকি কুসঙ্গ থেকে বিরত থাকতে, সতর খুলে খেলাধুলা করতে, কারও গাছের ফল বা ফসল নষ্ট করতেও শিশুদের নিষেধ করতে হবে। বড়দের সালাম এবং সম্মান করতে হুকুম করাও পিতা-মাতার নৈতিক দায়িত্ব।
রাতের বেলায় তারাবি পড়ার পর নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ভোরে ফজরের সময় ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তোলা। মাঝেমধ্যে শেষ রাতে ঘুম থেকে একটু আগেভাগে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য ডেকে দেয়া। সন্তানদের বুঝাবে যে, এটি অন্য মাসের মতো নয়, এ মাসের গুরুত্ব, তাত্পর্য ও মর্যাদা অনেক বেশি। এ মাসে ইবাদতের সওয়াব অনেক, ইবাদত করাও সহজ। নিজের আমল-আখলাক পরিশুদ্ধির মৌসুম এটি। এ মাসে সেই শিক্ষা গ্রহণ করলে বাকি ১১ মাসের পথচলা সহজ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৬
এমএইউ/