ছয় মিলিয়নের অধিক মুসলিম অধ্যুষিত ফ্রান্সের মুসলমানরা পবিত্র রমজানকে মিষ্টি বিতরণের মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানায়। মুসলিম যুবকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকে রমজান মাসের।
ফ্রান্সে তিনভাবে রমজানের চাঁদ দেখার প্রচলন আছে। ১. তুরস্ক সরকারের পক্ষ হতে চাঁদ দেখার ঘোষণার মাধ্যমে, ২. সৌদি আরব ও মিশরের চাঁদ দেখার ঘোষণার মাধ্যমে ও ৩. প্যারিসস্থ ফ্রঁন্সেস ইসলামি সংস্থার ঘোষণার মাধ্যমে।
রমজান মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ফ্রান্সের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় প্রাণচাঞ্চল্য বেড়ে যায়। বিশেষ ধরণের খেজুর ও হালুয়ার বিকিকিনি চলে দেদার। বিভিন্ন দোকান থেকে কোরআন তেলাওয়াত ও ইসলামি সংগীতের সুমধুর সুর ভেসে আসে। হাট-বাজার এক নতুন আমেজ পরিগ্রহ করে।
ফ্রান্সের মুসলমানরা এ মাসে কাবাব, খোরমা ও চনাবুট দিয়ে তৈরি এক প্রকার হালুয়া খেতে পছন্দ করে। এছাড়া পুদিনার চা, সিরকা ও ‘কাস্কি’ (গম ও গোশতের তৈরি এ প্রকার পশ্চিমা খাদ্য) রমজানের বিশেষ খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাহরিতে বার্গার ও বার্গার জাতীয় খাদ্য বেশি পছন্দ করে।
রমজান মাসে ফ্রান্সের মুসলিম অধিবাসী এবং বিভিন্ন দেশের মুসলিম অভিবাসীরা পরস্পরের কাছে আসার সুযোগ লাভ করে। সাধারণত তারা সবাই সপরিবারে মসজিদে ইফতারি করে। ইফতার অনুষ্ঠানে অভিবাসীরা নিজ নিজ দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি করে নিয়ে আসে। মসজিদে তারাবির নামাজ আদায় করে ঘরে ফেরে। রমজান মাসে এখানকার মুসলিমরা দু’হাত খুলে দান করেন। তারা অনুন্নত ও দুর্দশাগ্রস্থ মুসলিম অঞ্চলের জন্য দান করতে বেশি পছন্দ করে। যেমন, ফিলিস্তিন ও আফ্রিকার দরিদ্র্য অঞ্চলের জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ দান করে তারা।
ফ্রান্সের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে এক হাজার ছয়শ ৮৫টির অধিক মসজিদ ও ইবাদতখানার সন্ধান পাওয়া যায়। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ মসজিদ ও ইবাদতখানায় প্রতিদিন আনুমানিক দেড়শ’র অধিক মুসলমান সমবেত হন। এসব মসজিদের মধ্যে বিশটি মসজিদ এতো বিশাল যে, সেখানে এক হাজার মুসল্লি একসাথে নামাজ পড়তে পারেন।
প্যারিস ছাড়াও ফ্রান্সের অন্যান্য এলাকায় অবস্থিত মসজিদগুলো রমজান উপলক্ষ্যে বেশ জমজমাট হয়ে উঠে। মুসল্লিতে থাকে টইটম্বুর। এলাকার প্রায় সকলে মসজিদে নামাজ আদায় করে। ইফতারের সময় মসজিদে পানি, চা, মিষ্টান্ন ও খেজুরসহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য গবিরদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
অবশ্য মসজিদে ইফতার আয়োজনে কেবল মুসলমানরাই নয়; অন্যান্য ধর্মের লোকজনও অংশ নিয়ে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘন্টা, জুন ২৩, ২০১৬
এমএইউ/