ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

আজ তারাবির পাঠ আল্লাহর নৈকট্য লাভে একনিষ্ঠ ইবাদত জরুরি

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৬ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৬
আজ তারাবির পাঠ আল্লাহর নৈকট্য লাভে একনিষ্ঠ ইবাদত জরুরি

চলতি রমজান মাসের দ্বিতীয় দশক মাগফেরাতের আজ শেষ তারাবি। আজকের খতমে তারাবিতে কোরআনে কারিমের যে অংশ তেলাওয়াত করা হবে, তাতে থাকবে পরকাল নিয়ে বিশেষ আলোচনা।

আর আখেরাত ও মাগফেরাত পরষ্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। মাগফেরাতের প্রকাশ ঘটবে আখেরাতে। সুতরাং বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বৈকি। আখেরাত বিষয়ে সূরা ইয়াসিনের ৭৪-৭৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য উপাস্য গ্রহণ করছে এ আশায় যে, তারা (পরকালে সে সব উপাস্যদের থেকে) সাহায্য পাবে। কিন্তু সে সব উপাস্য তাদের সাহায্য করার কোনো সামর্থ্য রাখে না। বরং সে সব উপাস্যদের (আখেরাতে) উপস্থিত করা হবে তাদের বিপক্ষরূপে। ’

মক্কার কাফেররা আল্লাহকে বিশ্বাস করলেও পরকালকে বিশ্বাস করত না। পরকালকে অস্বীকার করার জন্য তারা বিভিন্ন যুক্তির আশ্রয় নিত। তাদের সে সব যুক্তি খন্ডন করতে যেয়ে সূরা ইয়াসিনের ৭৭ থেকে ৮৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষ কি দেখে না, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি শুক্রবিন্দু থেকে? এর পরেও সে (আমার পুনরায় সৃষ্টি করার সামর্থ্য নিয়ে) প্রকাশ্য বিতর্ক করে। সে আমার সম্পর্কে উদাহরণ দেয়। অথচ সে নিজের সৃস্টির কথা ভুলে যায়। সে বলে, যখন হাড় পচে গলে যাবে তখন কে পারবে তাতে প্রাণ সঞ্চার করতে? বলুন, তখনো তিনিই তাতে প্রাণ সঞ্চার করবেন যিনি প্রথমবার তাতে প্রাণ সঞ্চার করেছিলেন। তিনি প্রত্যেকটি সৃষ্টি সম্পর্কে সম্যক পরিজ্ঞাত। তিনি তোমাদের জন্য সবুজ গাছ থেকে আগুন উৎপন্ন করেন। তোমরা তা দ্বারা আগুন জ্বালাও। যিনি আকাশ ও পৃথিবী (একবার) সৃষ্টি করেছেন তিনি কি (দ্বিতীয়বার) ওগুলোর অনুরূপ সৃষ্টি করতে সামর্থবান নয়? হ্যাঁ, নিশ্চয়ই তিনি মহাস্রষ্টা ও সর্বজ্ঞ। তার ব্যাপার শুধু এই যে, তিনি যখন কোনো কিছু করার ইচ্ছা করেন তখন বলেন, ‘হও’। ফলে তা হয়ে যায়। অতএব, পবিত্র ও মহান তিনি যার হাতে প্রত্যেক বিষয়ের সার্বভৌম ক্ষমতা এবং তারই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে। ’

সূরা যুমারের ৩ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা বলে, আমরা তো এদের পূজা এ জন্য করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর সান্নিধ্য এনে দিবে। ... যে মিথ্যাবদী ও কাফের আল্লাহ তাকে সৎপথে পরিচালিত করেন না। ’

এ আয়াত দ্বারা দিবালোকের ন্যয় পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে যে, মক্কার কাফেররা আল্লাহকে স্বীকার করত। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করত। এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আবেগেই তারা আল্লাহর ওলিদের ইবাদত করত। অতএব, আজকেও যদি কেউ জীবিত বা মৃত ওলির খানকা বা দরগা বা মাজার তাওয়াফ করে। সেখানে সিজদা করে। সেখানে প্রাণী উৎসর্গ করে। ওলির নামে বা মাজারের নামে মান্নত করে। ওলির নামের জিকির করে। আর দাবি করে যে, এ ওলি আল্লাহর কাছে আমার জন্য সুপারিশ করবে তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ওলির খানকায় বা দরগায় এগুলো করছি তবে তারাও এ আয়াতের আলোকে কাফের প্রমাণিত হবে। যে যুক্তিতে মক্কার কাফেররা আল্লাহকে বিশ্বাস করার পরে কাফের ছিল সে যুক্তিতে এরাও আল্লাহকে বিশ্বাস করার পরে কাফের থাকবে।

আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য একনিষ্ঠভাবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে হবে। তওয়াফ করতে হবে আল্লাহর ঘরকে। প্রাণী উৎসর্গ করতে হবে আল্লাহর নামে। সিজদা করতে হবে আল্লাহকে। মান্নত ও জিকির করতে হবে আল্লাহর নামে। আনুগত্য করতে হবে আল্লাহর আইনের। জ্ঞানীদের কাছে যেতে হবে জ্ঞানার্জনের জন্য, পীর-দরবেশ বা অলি আল্লাহদের কাছে যেতে হবে আমল শেখার জন্য। তারা মারা গেলে তাদের কবরে যাওয়া যাবে তাদের মাগফেরাতের ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে। এর বেশি কিছু নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।