মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশের নাম ওমান। অনেক বাংলাদেশি দেশটিতে কর্মরত।
ওমানের ধর্মমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মদ আসসালেমি ও বদর বিন সাউদ আল বুসাদিসহ সরকারের অন্য কর্তাব্যক্তিরা দেশজুড়ে রমজানের পবিত্রতা ও রোজাদারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখেন। মহিমান্বিত রমজান মাস পালনে ওমানে মাস দুয়েক আগ থেকে চলে প্রস্তুতি। একে অপরে দেখা হলেই ‘শাহরু আলাইকা মুবারাকা’ (রমজান তোমার জন্য বরকতময় হোক) বলে কুশল বিনিময় করেন। সালাম, কালাম, ত্বয়াম ও কিয়ামের স্বর্গীয় চর্চায় ওমানিরা রমজানের দিনগুলো কাটান।
ঠিক যেন সেই হাদিসের বাস্তব অনুশীলন- যা বর্ণনা করেছেন হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)। ‘তিনি বলেন, একজন লোক এসে হজরত রাসূলুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসলামে উত্তম কাজ কোনটি? তিনি বললেন, অন্যদেরকে খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকলকে সালাম দেয়া। ’ –সহিহ বোখারি: ১২
রমজান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওমানের বিভিন্ন রাস্তার পাশে কিংবা বাজারে-মার্কেটে দেখতে পাওয়া যায় সারি সারি তাঁবু। এসব তাঁবু রোজাদারদের ইফতার করানোর জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়। সেখানে সর্বোৎকৃষ্ট ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়। অনেক প্রবাসী এসব তাবুতে ইফতার করেন।
ওমানিরা রমজানের আগে থেকেই রমজান উপলক্ষে প্রয়োজনীয় তৈজষপত্রের পাশাপাশি খাদ্যদ্রব্য কেনাকাটা করে রাখেন। অনেকস্থানে দফ বাজিয়ে রমজানকে স্বাগত জানিয়ে মিছিলও বের করা হয়।
ওমানের বিখ্যাত মসজিদ জামে আকবর (সুলতান কাবুস) মাসকাট, আলী হাসান মসজিদ, জামে সালাম বারাকা, আবু বকর সিদ্দিক মসজিদ, ইমাম শাফেয়ি (রহ.) মসজিদসহ অধিকাংশ মসজিদে ২০ রাকাত তারাবি পড়া হলেও কোনো কোনো মসজিদে ১২ রাকাত তারাবি নামাজ পড়তেও দেখা যায়।
রমজানে কিয়ামুল লাইলের পাশাপাশি ওমানে দান-খয়রাতের পরিমাণ বেড়ে যায়। এখানকার মানুষ ব্যক্তিগতভাবে এবং বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বেশি পরিমাণে দান করেন। দানের সময় শর্ত জুড়ে দেন, যেন তার নাম প্রকাশ না হয় এবং রসিদ নেওয়ার সময় রসিদে নাম পর্যন্ত লেখান না। রসিদে লেখা হয় একজন দাতা কিংবা আবদুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা)।
আর ঈদ! ওমানিরা বহু মুসলিম দেশের মতো তিন দিন ধরে ঈদুল ফিতর উদ্যাপন করেন। নতুন চাঁদ ওঠার সন্ধ্যায় বহু ওমানি পরদিনের কাজকর্মের জন্য তৈরি হতে গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন। ঈদ উপলক্ষে ওমানের পুরুষরা ভেড়ার মাংস আর সাদা চালের ভর্তার একটা মিশেলে আরসিয়াহ নামে এক বিশেষ ধরনের খাবার রান্নার করেন। মহিলা ও শিশুরা নতুন পোষাকের সঙ্গে মেহেদিতে হাত রাঙায়।
ঈদের দিন সকালে নতুন পোশাক পরে ফজরের নামাজ আদায় করে এবং আরসিয়াহ দিয়ে নাশতা সারে। ভেড়া, ছাগল কিংবা গরু জবাই এর ভেতর দিয়ে শুরু হয় ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন। বিকেলে তান্নুর আল শোয়া নামে পরিচিত তন্দুরে ঝলসানো মাংস তৈরির বিশেষ আয়োজন শুরু হয়। শিক কাবাবের মতো এই খাবারটিকে ওমানিরা মাশাকিক বলে। ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিনকে এই উৎসবের খাবারের সম্মানে আল-মাশাকিক বলে ডাকা হয়। বহু ওমানি এই দিনে মধু আর ডিম দিয়ে তৈরি এক ধরনের ডেজার্ট উপভোগ করে। এদিন চুল্লি থেকে ধীরে ধীরে ঝলসানো মাংস বের করে খাওয়া হয় বলে ঈদুল ফিতরের তৃতীয় দিনকে অনেক ওমানিরা আল শোয়া ডাকে।
ঈদের সময় অনেক দোকানি ক্রেতাদের বিভিন্ন জিনিস উপহার দিয়ে থাকেন। রাস্তাঘাটে পথচারীরা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বিভিন্ন প্রাচীন খেলার অায়োজন হয়। এমনকি অনেক সময় অচেনা শিশুদের মধ্যেও খেলনা ও বিভিন্ন ধরনের উপহার বিতরণ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৪ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০১৬
এমএইউ/