ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

দুই মাইল দূর থেকে আব্বার ইফতারের পানি আনতাম: সুফি মিজান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৬
দুই মাইল দূর থেকে আব্বার ইফতারের পানি আনতাম: সুফি মিজান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান

চট্টগ্রাম: পবিত্র রমজান মাসে বাংলানিউজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য সমাজে যারা প্রতিষ্ঠিত তাদের শৈশব, কৈশোর ও বাল্যকালের রোজার স্মৃতি জানার চেষ্টা করেছে। আজকের আয়োজনে কথা বলেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ পিএইচপি পরিবারের চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

জীবনসংগ্রামে সফল যে ক’জন মানুষ যেখানে হাত দিয়েছেন সোনা ফলিয়েছেন তাদের অন্যতম তিনি। মায়ের ভাষা বাংলার বাইরে আরবি, ফার্সি, হিন্দি, উর্দু, ইংরেজি ভাষায় সমান দক্ষ এ মানুষটি যখন বলেন তখন অন্যরা শোনেন পিনপতন নীরবতায়। বাংলানিউজের ব্যুরো এডিটর তপন চক্রবর্তী কথা বলেছেন আজকের অতিথির সঙ্গে। সেই আলাপচারিতায় চুম্বুকাংশ পাঠকের জন্য-

ছেলেবেলার রমজান সম্পর্কে জানতে চাইলে সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানায়। গ্রামের নাম কাঞ্চন। ছোটবেলার রমজান ছিল আনন্দের। স্মৃতির মধ্যে এখনো জ্বলজ্বল করে একটি অধ্যায়। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে লক্ষ্য করেছি, আমার বাবা রমজান মাসে সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের সময় নলকূপের ঠান্ডা পানি পছন্দ করতেন। কিন্তু আমাদের গ্রামে নলকূপ ছিল না। রান্না থেকে শুরু করে খাওয়া পর্যন্ত পুকুরের পানিই ছিল ভরসা। বাড়ি থেকে দুই মাইল দূরে একটি নলকূপ ছিল। সেখানে আসর নামাজের পর থেকে লম্বা লাইন পড়ে যেত। সবাই ইফতারের জন্যে পানি নিতে আসতেন। আমিও যেতাম। লাইনে দাঁড়ানো, কাঁধে করে পানি বয়ে নিয়ে আসা সব কষ্ট প্রশান্তিতে পরিণত হতো যখন বাবা ইফতারের সময় পানি খেয়ে তৃপ্ত হতেন, দোয়া করতেন।

এখন তো আপনি নিজেই বাবা, রমজানের দিনগুলো কেমন কাটছে জানতে চাইলে সুফি মিজান বলেন, আমার সন্তান মোহাম্মদ মহসিন, ইকবাল হোসেন, আনোয়ারুল হক, আলী হোসেন, আমির হোসেন, জহিরুল ইসলাম, আক্তার পারভেজ হিরু, ফাতেমা তুজ-জোহরা মাশাআল্লাহ বাবা-ভক্ত। ছেলেরা নিজ নিজ ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু ইফতার টেবিলে একসঙ্গে বসি। তাদের মা তাহমিনা রহমানও থাকেন। এটি আমাদের পরিবারে ঐতিহ্য বলতে পারেন।

কত বছর বয়স থেকে রোজা রাখছেন? প্রশ্ন শুনে একটু হাসলেন। বললেন, আমার বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই রমজানের রোজা রেখে আসছি। ঠিক বয়স তো আর মনে নেই। এখন তো আল্লাহর রহমতে আরবি মাসের বিশেষ দিনগুলো, সাপ্তাহিক রোজা রাখি। রোজা রাখলেই যেন দেহ-মন প্রফুল্ল থাকে। ভালো লাগে। আরেকটি জিনিস ভালো লাগে। বিশ্বের সেরা সেরা মুসলিম সাধকদের, জীবন্ত কিংবদন্তিদের এদেশে আনতে পারা। মাহফিলে তাদের মুখ থেকে সাফল্যের গল্প শোনা। মানুষকে উজ্জীবিত করা।

কথায় কথায় সুফি মিজানুর রহমান শোনালেন জীবনের গল্প। এক সময়কার অল্প বেতনের চাকুরে থেকে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তা হওয়ার কথা। সুললিত কণ্ঠে হামদ-নাত, আল্লামা রুমির পঙক্তিমালা, মনীষীদের উদ্ধৃতি আর রেফারেন্সে ভরপুর তার কথামালা। তার ভাষায়, প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে আজকের এ অবস্থানে এসেছি। আমি বিশ্বাস করি, কোনো তরুণের অদম্য ইচ্ছাশক্তির পাশাপাশি যদি সততা আর অধ্যবসায় থাকে, নির্দিষ্ট সময়ের অতিরিক্ত কাজ করার মানসিকতা থাকে তবে তারাও আমার মতো সফল হবে। এদেশের যে মাটি, যে ভৌগোলিক অবস্থান এখানে বসেই বিশ্বজয় করা সম্ভব।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৬

টিসি/এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।