হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক নফল কাজ কখনো করতেন, কখনো ছেড়ে দিতেন। কিন্তু মদিনায় হিজরত করার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কখনো রমজান মাসের শেষ দশ দিনের ইতিকাফ ছাড়েননি।
ইতিকাফকারীর সবচেয়ে বড় ফায়দা হলো দু’টি-
এক. গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। সাধারণত মানুষ অন্য সময় যে সব গুনাহের কাজ করে থাকে মসজিদে অবস্থানকালে তা করে না।
দুই. নেক কাজ করা ছাড়াও নেক কাজের সাওয়াব পাওয়া।
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ দশদিন ইতিকাফ করবে, তাকে দু’টি হজ ও দু’টি ওমরা পালন করার সওয়াব দান করা হবে। ’ -শোয়াবুল ঈমান, হাদিস: ৩৬৮০
অন্য হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন ইতিকাফ করবে। আল্লাহতায়ালা ওই ব্যক্তি ও জাহান্নামের মাঝে তিন খন্দক দুরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। যা দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে পূর্ব পশ্চিম দিগন্ত থেকেও বেশি দূরত্ব সম্পন্ন হবে। ’ -শোয়াবুল ঈমান, হাদিস: ৩৬৭৯
ইতিকাফের শর্তসমূহ
মাসয়ালা: শরিয়তে সংজ্ঞায় মতে যেটাকে মসজিদ বলা হয়, সেখানে অবস্থান করা। তবে ইতিকাফের জন্য উত্তম স্থান হলো জুমা মসজিদ। অতঃপর মহল্লার যে মসজিদে নামাজির সংখ্যা বেশি হয়।
মাসয়ালা: সুন্নাত ও ওয়াজিব ইতিকাফে রোজা রাখা।
মাসয়ালা: জানাবাত থেকে পাক হওয়া, অর্থাৎ স্ত্রী সহবাস, স্বপ্নদোষ, মহিলারা মাসিক ও নেফাস বন্ধ হওয়ার পর ওয়াজিব গোসল করে পবিত্র হওয়ার পূর্বে ইতিকাফের জন্য মসজিদে প্রবেশ করা নাজায়েয।
মাসয়ালা: মহিলাদের জন্য মাসিক ও নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া। -বাদায়েউস সানায়ে: ২/১০৮
ইতিকাফকারীর করণীয়-বর্জনীয় কাজসমূহ
মাসয়ালা: ফরজ ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ সঠিকভাবে আদায় করার চেষ্টা করবে এবং বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াতসহ নফল আমল করার চেষ্টা করবে। রাতে যতক্ষণ পর্যন্ত আগ্রহ থাকবে ততক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত, জিকির এবং নফল নামাজে ব্যস্ত থাকবে। শুয়ে যেতে মনে চাইলে সুন্নত মোতাবেক কিবলামুখী হয়ে শুয়ে যাবে। দোয়া-মোনাজাতসহ জীবনের সব গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে এবং নিজের যাবতীয় নেক উদ্দেশ্যসমূহ পূরণের, উম্মতের হেদায়েতের এবং সব ধরণের ফেতনা থেকে হেফাজতের দোয়া করবে।
মাসয়ালা: আর কদরে ফলিজলত লাভের নিমিত্তে বেজোড় রাতসমূহে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সব ধরণের নফল আমল করার চেষ্টা করবে।
মাসয়ালা: ইস্তেগফার, দরূদ-শরিফ এবং সকালবেলার মাসনূন দোয়াসমূহ পাঠ করবে।
মাসয়ালা: কাজে-কর্মে, কথা-বার্তায়, উঠা-বসায় অন্যের কষ্টের কারণ হতে পারবে না। মসজিদ পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
মাসয়ালা: কিছু কাজ আছে যা করা সর্বাবস্থায় হারাম। তবে ইতিকাফ অবস্থায় করা আরো মারাত্মক যেমন, পরনিন্দা, চোগলখুরি, মিথ্যা বলা, ঝগড়া করা, কাউকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেওয়া, অন্যের দোষ-ত্রুটি তালাশ করা, কাউকে অপমানিত করা, অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি। এসব কাজ পরিপূর্ণভাবে পরিহার করা।
মাসয়ালা: মনে রাখতে হবে যে, মসজিদে বিনা প্রয়োজনে দুনিয়াবী কথাবার্তা বলার দ্বারা নেকি নষ্ট হয়ে যায়।
মাসয়ালা: ইতিকাফকারীর জন্য কোনো প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ডেকে দ্বীনি কথাবার্তা ছাড়া সাধারণ কথাবার্তা বলা মাকরূহ। আর আড্ডার মজলিস জমানো নাজায়েয।
মাসয়ালা: ইতিকাফ অবস্থায় রচনা উপন্যাস এবং নোংরা বই-পুস্তক পড়া অবশ্যই পরিহারযোগ্য। মোবাইলে ইন্টারনেটে গুনাহের উপকরণসমূহ থেকে অবশ্যই বেঁচে থাকবে। ইতিকাফ ইবাদতের জন্য। ইবাদত বিনষ্টের জন্য নয়।
মাসয়ালা: মসজিদের ভেতরে বিনিময় নিয়ে কোনো কাজ করা জায়েয হবে না। এটা দ্বীনি কাজ হোক বা দুনিয়ার কাজ হোক।
মাসয়ালা: মালামাল উপস্থিত করে মসজিদে ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসা করতে পারবে না, হ্যাঁ, প্রয়োজনে মালামাল উপস্থিত না করে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৬
এমএইউ/