ইসরাইলির নিষ্পেষণে থাকা ফিলিস্তিনি মুসলমানরাও সারা বিশ্বের মুসলমানদের সঙ্গে পবিত্র রমজান মাসের রোজা পালন করছে। তাদের মুক্তি সংগ্রামের একটি প্রয়াসও এই রমজান।
সম্প্রতি মিডলইস্ট মনিটরে প্রকাশিত কিছু ছবিতে দেখা গেছে আল আকসা মসজিদ কম্পাউন্ডের কুব্বাতুল সাখরার সামনে একদল স্কাউট ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
অারকে ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গাজার ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ইফতারের একটি জনপ্রিয় খাবার হুম্মা। এই রোজাতেও অনেকে এই খাবারটি দিয়েই ইফতার সারছেন।
অন্য ছবিতে গাজায় কয়েকটি অন্ধ ফিলিস্তিনি বালিকাকে স্কুলে পবিত্র কোরআন তেলায়াত করতে দেখা যাচ্ছে।
আসলে এই তিনটি ছবি গোটা ফিলিস্তিনের চালচিত্র।
মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান হলো- ফিলিস্তিন। মুসলমানদের প্রথম কেবলা ‘মসজিদুল আকসা’ এখানেই অবস্থিত। বহু নবী-রাসূলের জন্মস্থান এই ফিলিস্তিন। ফিলিস্তিনের বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদ থেকে রাসূল (সা.) মেরাজে গমন করেন। এ বিষয়ে কোরআনে কারিমের সূরা বনি ইসরাইলের প্রথম আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রিবেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদের হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত। যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি, যাতে আমি তাকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। ’
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জাতিগুলোর অন্যতম ফিলিস্তিনিরা। দীর্ঘ দিন ধরে তারা নির্যাতিত হচ্ছে। এর পরও তারা নিজস্ব আবাসভূমির স্বপ্ন হারায়নি। তাদের সেই স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে আল আকসা মসজিদ এবং ডোম অব রক (কুব্বাতুল সাখরা)। তবে এখানে ফিলিস্তিনিরা ইচ্ছা করলেই আসতে পারে না দখলদার ইসরাইলিদের বিধিনিষেধের কারণে। তবুও আল আকসা মসজিদের প্রতি তাদের ভালোবাসার কমতি নেই। রমজান এলে তাদের সেই ভালোবাসা আরও বেড়ে যায়।
প্রতিবেশির খোঁজ-খবর নেওয়া এবং মুসলমানের সাহায্যে নিজের সর্বোচ্চ বিলিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ফিলিস্তিনিদের দৃষ্টান্ত মেলা ভার। রমজানে তাদের এই প্রচেষ্টা শতগুণে বেড়ে যায়। অনেকেই সারামাস মেহমান সঙ্গে ইফতার করেন। সবার একান্ত চেষ্টা থাকে কেউ যেনো রোজার মাসে খাবারে কষ্ট না পায়। এ জন্যে সম্মিলিত বা ব্যক্তিগত নানাভাবে তারা এ মাসে দরিদ্র মুসলমানদের বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য দিয়ে সহায়তা করে থাকেন।
মাহে রমজানের মধ্যরাতে প্রাচীন শহর জেরুজালেমে ছেলেমেয়েরা মিলে ড্রাম বাজিয়ে এবং চিত্কার করে ঘুম থেকে মানুষকে সেহেরি খেতে জাগায়।
এখানকার ইফতারির সঙ্গে আমাদের বাংলাদেশের বেশ মিল রয়েছে। পুরনো জেরুজালেমের বাসিন্দারা চিরায়ত ঐতিহ্য অনুযায়ী তাদের জনপ্রিয় পানীয় তামারিন জুস পান করেন। তবে সাধারণত তারা ইফতার প্রথমে খেজুর দিয়ে শুরু হয়। পনির ও দই জাতীয় খাবার ইত্যাদি সেহরিতে খায়। ফিলিস্তিনিরা খুব ঘটা করে এবং আনন্দের সাথে ঈদ উদযাপন করে থাকে।
এই ফিলিস্তিনে রয়েছে ‘পৃথিবীর সর্ববৃহৎ কারাগার’ বলে খ্যাত একটি শহর। ফিলিস্তিনের এই উপকূলীয় শহরের নাম গাজা। শহরটি কৌশলগতভাবে ভূমধ্যসাগরের উপকূলীয় অঞ্চলে অবস্থিত; যা প্রাচীনকাল থেকে সিরিয়া-মিশরের ব্যবসা বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কেন্দ্র। পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতি এবং দরিদ্রতম এলাকার তকমাও রয়েছে গাজার ললাটে। এ উপত্যকা হচ্ছে ইসরাইল ও মিসরের তীরবর্তী এলাকা।
ফিলিস্তিন মানব ইতিহাসের একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ স্থান। কারণ এটি ইসলাম, খ্রিস্টান ও ইহুদি- তিন ধর্মের মানুষের কাছে পবিত্র স্থান হিসেবে স্বীকৃত। এ তিন ধর্মের লোকেরা একে তাদের আদি আবাসভূমি মনের করেন। তাই ফিলিস্তন পবিত্র ভূমি হিসেবে বিবেচিত।
কিন্তু আজ সেই পবিত্র ভূমিতে চলছে নারকীয় তাণ্ডব। সেখানে দিনের পর দিন ইসরায়েলি বোমা ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে অগণিত ফিলিস্তিনির বুক। কবে এ রক্ত বন্যা থামবে- তা কেউ জানে না। ইউরোপের দেশগুলো মুখ ঘুরিয়ে রাখে নিজেদের স্বার্থে আর মুসলিম দেশগুলো শুধু নিন্দাজ্ঞাপন করে দায় সারে।
রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাসে আমরা ফিলিস্তিনবাসীর জন্য দোয়া করি- আল্লাহতায়ালা যেন তাদেরকে স্বাধীন ও সমৃদ্ধ মুসলিম দেশ হিসেবে আগের ঐতিহ্য ফিরিয়ে দেন। আমিন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
এমএইউ/