রমজানের শেষ দশকে শবেকদরের খোঁজে হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইতিকাফ করতেন। একাধিক হাদিসে বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে।
মাসয়ালা: মহিলাদের নামাজের স্থান তাদের ঘরের অন্দরমহল, মসজিদ নয়। কিন্তু মহিলারা সওয়াবের ক্ষেত্রে ঘরে নামাজ পড়ে ও ঘরে ইতিকাফ করে পুরুষদের মসজিদে নামাজ পড়ার সমপরিমাণ সওয়াবের অধিকারী বলে সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এ অর্থে মহিলাদের ঘরকে মসজিদের সাদৃশ্য আখ্যা দেওয়া হয়েছে। যেন মহিলারা বেশি সওয়াব হাসিল করার আশায় মসজিদে আসার জন্য উদগ্রিব না হয়। মসজিদে গিয়ে শেষ ১০ দিন ইতিকফ সুন্নতে মোয়াক্কাদার হুকুম পুরুষদের জন্য, মহিলাদের জন্য নয়। সুতরাং মহিলারা চাই ঘরে ইতিকাফ করুক চাই মসজিদে পুরুষদের দায়িত্ব আদায় হবে না। তবে পুরুষদের মধ্যে একজনও যদি মসজিদে ইতিকাফ করে তাহলে গ্রামবাসীর পক্ষ হতে তা আদায় হয়ে সবাই দায়মুক্ত হয়ে যাবে। -সহহি বোখারি, হাদিস: ২০৩৩, উমদাতুল কারী: ১১/১৪৮, বাদায়েউস সানায়ে: ২/১১৩, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৩/১৪৫
মাসয়ালা: মহিলারা ঘরে নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের জন্য নির্ধারিত স্থানে ইতিকাফ করবেন। যদি আগে থেকেই ঘরে নামাজের জন্য কোনো স্থান নির্ধারিত না থাকে তাহলে ইতিকাফের জন্য একটি স্থান নির্ধারিত করে নেবেন। সেখানেই ইতিকাফ করবেন। হেদায়া: ১/২৩০, আলমগীরি: ১/২১১
মাসয়ালা: রমজানের (শেষ দশকের ইতিকাফ পুরুষের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া, তবে নারীদের জন্য তা মুস্তাহাব।
মাসয়ালা: বিবাহিত নারীকে রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ বা অন্য সময়ের নফল ইতিকাফের জন্য স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। স্বামীর অনুমতি ছাড়া ইতিকাফ করা অনুচিত। স্বামীদের উচিত, যুক্তিসঙ্গত, গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া স্ত্রীদের ইতিকাফে বাধা না দেওয়া। তাদের ইতিকাফের সুযোগ দেওয়া। এতে কিন্তু উভয়ই সওয়াব পাবেন। শামী: ৩/৪২৯, আলমগীরি: ১/২১১
মাসয়ালা: স্বামী স্ত্রীকে ইতিকাফের অনুমতি দেওয়ার পর আর বাধা দিতে পারবেন না। বাধা দিলেও সে বাধা মানা স্ত্রীর জন্য জরুরি নয়। -শামী: ৩/৪২৮, আলমগীরি: ১/২১১
মাসয়ালা: ইতিকাফ অবস্থায় (রাতেও) স্বামী-স্ত্রী মেলামেশা করা যাবে না। করলে ইতিকাফ ফাসিদ হয়ে যাবে। -সূরা বাকারা: ১৮৭, বাদায়ে: ২/২৮৫, শামী: ৩/৪৪২
মাসয়ালা: মহিলাদের ইতিকাফের জন্য হায়েজ-নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া শর্ত। হায়েজ, নেফাস অবস্থায় ইতিকাফ সহিহ হয় না। -বাদায়ে: ২/২৭৪, আলমগীরি: ১/২১১
মাসয়ালা: মহিলাদের ইতিকাফে বসার আগেই হায়েজ-নেফাসের দিন-তারিখ হিসাব করে বসা উচিত। যাতে ইতিকাফ শুরু করার পর পিরিয়ড শুরু হয়ে না যায়। তবে কারও রমজানের শেষ দশকে পিরিয়ড হওয়ার নিয়ম থাকলে তিনি পিরিয়ড শুরু হওয়া পর্যন্ত নফল ইতিকাফ করতেই পারেন।
মাসয়ালা: ওষুধ-বড়ি খেয়ে পিরিয়ড বন্ধ রেখে রোজা রাখলে, ইতিকাফ করলে রোজা ও ইতিকাফ সহিহ হবে।
মাসয়ালা: ইতিকাফ শুরু করার পর পিরিয়ড শুরু হয়ে গেলে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। পরে শুধু একদিনের ইতিকাফ রোজাসহ কাজা করতে হবে। -আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/৫০২
মাসয়ালা: মহিলারা ঘরের যে স্থানটিকে ইতিকাফের জন্য নির্ধারিত করবেন তা মসজিদের মতো গণ্য হবে। মানবিক প্রয়োজন ছাড়া তারা সেখান থেকে বের হতে পারবেন না। মানবিক প্রয়োজন ছাড়া সে স্থানের বাইরে গেলে ইতিকাফ ফাসিদ হয়ে যাবে। -আলমগীরি: ১/২১১, বাদায়ে: ২/২৮২
মাসয়ালা: মানবিক প্রয়োজন বলতে বুঝায়, প্রস্রাব-পায়খানা। সুতরাং ইতিকাফ অবস্থায় মহিলারা প্রস্রাব-পায়খানার জন্য ইতিকাফের স্থান থেকে বের হতে পারবেন। অজুর জন্য বাইরে যেতে পারবেন।
মহিলারা খুব কমই ইতিকাফ করেন। অথচ ইতিকাফ অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। মহিলাদের জন্য ইতেকাফ খুব সহজও। কারণ তারা ঘরেই ইতিকাফ করবেন। ফলে সংসারের খোঁজখবরও নিতে পারবেন। সংসার ঠিক রেখে তাদের ইতিকাফও হয়ে যাবে। সুতরাং এমন সুযোগ হাতছাড়া করা মোটেই উচিত নয়। নারীদের মধ্যে ইতিকাফের ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা উচিত। পুরুষদের উচিত নারীদের ইতিকাফের জন্য উদ্বুদ্ধ করা এবং সুযোগ তৈরি করে দেয়া। তাহলে পুরুষরাও সওয়াব পাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৬
এমএইউ/