ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

মেসির দেশ আর্জেন্টিনায় উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয় রমজান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫২ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৬
মেসির দেশ আর্জেন্টিনায় উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয় রমজান

বাংলাদেশিদের মানসপটে দেশ হিসেবে আর্জেন্টিনার চিত্রটা ভিন্নভাবে আঁকা। সদ্য সমাপ্ত মহাদেশীয় ফুটবল উৎসব ‘কোপা আমেরিকা’র রানার্সআপ মেসির দেশটিতে মোট জনসংখ্যার মাত্র ২.৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় এক মিলিয়ন মুসলিম বসবাস করেন।

ল্যাটিন আমেরিকান দেশগুলোর মাঝে সবচে’ বেশি মুসলমান বাস করে ম্যারাডোনার দেশটিতে।

মাহে রমজান বেশ উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয় দেশটিতে। দক্ষিণ আমেরিকার খ্রিস্টান প্রধান দেশগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনায় মুসলিমরা সবচেয়ে বেশি সম্মানের সঙ্গে মাহে রমজান পালন করতে পারেন বলে জানান দেশটির মুসলিম অধিবাসীরা।

রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে মুসলিমদের উপস্থিতি বেশি হওয়ায় সেখানে মুসলিমদের রমজান প্রস্তুতি ও রমজানের কার্যক্রম সহজেই চোখে পড়ে। এ শহরে অবস্থিত আহমদ মসজিদ, আল তাওহিদ মসজিদ, রে ফাহাদ বা পার্লামো মসজিদে মুসলিমরা রমজানের তারাবিসহ অন্যান্য ইবাদত পালন করেন। গত পাঁচ বছর যাবত রাজধানীর ‘কিলমিস’ এলাকায় আফ্রিকান বংশোদ্ভূত একদল স্বেচ্ছাসেবক মানুষকে সাধারণভাবে ইসলামের দাওয়াত ও কোরআনে কারিম শিক্ষা প্রদান করে থাকেন। রমজান মাসে তারা কোরআন ও হাদিসের বিশেষ পাঠদান করে থাকেন।

ইফতার ও সেহরিতে আরব সংস্কৃতির প্রাধান্য দেখা যায়। যেমন ইফতার আয়োজনে মিষ্টান্নের প্রাধান্য, খেজুর, দুধ ও সিমের উপস্থিতি। তবে অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীরা রমজানে নিজ সংস্কৃতি চর্চায় বিশেষ মনোযোগ দেন। ‍

আর্জেন্টিনা পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের এমন দেশগুলোর একটি, যেখানে দিবসের সময় খুবই সংক্ষিপ্ত। তাই সেখানে বসবাসকারী মুসলিমদের জন্যে রোজা রাখার সময় একেবারেই অল্প। সেহেরি থেকে ইফতার পর্যন্ত মাত্র ৯ ঘণ্টা সময় রোজা রাখতে হয় তাদের।

ইতিহাস অনুসন্ধান করে জানা যায়, আর্জেন্টিনায় মুসলমানদের আগমন অনেকটা ব্রাজিলের মতোই। যখন আর্জেন্টিনা স্প্যানিশ এবং পর্তুগিজ কলোনী ছিল, তখন বহু পশ্চিম আফ্রিকান কালো মানুষদের ধরে আনা হতো দাস হিসেবে আর্জেন্টিনায় কাজের জন্য। এর মধ্যে আফ্রিকার মরক্কোর বহু বাসিন্দা ছিল, আর স্বভাবতই তারা ছিল মুসলিম। এরপর উনবিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন সময় আরবদেশ লেবানন ও সিরিয়ার অনেকেই অভিবাসনে পাড়ি জমান সাউথ আমেরিকার এই দেশটিতে। তাদের মধ্যে যেমন ছিল মুসলিম তেমন ছিল খ্রিস্টান-ইহুদি আরব। এখনকার আর্জেন্টাইন মুসলিম সমাজের প্রায় সবার শরীরেই কোনো না কোনোভাবে আফ্রিকান বা আরব রক্ত আছে।

রমজানের ছোঁয়ায় নতুনভাবে নতুন উদ্যমে জেগে ওঠেন আর্জেন্টাইন মুসলিমরা। কিছু কিছু মসজিদ বিশেষ শিডিউল ঘোষণা করে। তারাবির নামাজের পর সামান্য বিরতি দিয়ে সেহরির আগ পর্যন্ত মসজিদে তারাবি ও তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকে। যেসব মুসলিম সারা বছর বাড়িতে ইবাদত করেন, তারা রমজানে এসব মসজিদে আসেন। আর্জেন্টিনার মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘দ্য ইসলামিক সেন্টার অফ আর্জেন্টিনা (সিআইআরএ)। ’ আহমদ মসজিদে সেহরির সময় আসা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য সিআইআরএ কর্তৃক সেহরির ব্যবস্থা থাকে। তবে যারা বাড়িতে বসে ইবাদত করে এবং সেহরি খায় তাদের জন্য সিআইআরএ বিশেষ টেলিভিশন অনুষ্ঠান প্রচার করে।

সংস্থাটি রমজানের প্রতিদিন মুসলিমদের নৈতিক ও আত্মিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং আলোচনার আয়োজন করে থাকে। মুসলিমদের জন্য প্রতিদিন ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর পর্বেরও আয়োজন করা হয়। যেখানে একজন মুসলিম ইসলাম সম্পর্কে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করে মুফতিদের কাছ থেকে তার উত্তর জেনে নিতে পারে। অমুসলিমদের মধ্যে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে তারা বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়। এ মাসে অনেক মুসলিম অসহায় ও দরিদ্র মানুষের জন্য চ্যারেটি কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

আর্জেন্টিনার জনগণ ও সরকার মুসলমানদের প্রতি সহনশীল। আশার দিক হচ্ছে, গোটা দুনিয়ার মতোই মসজিদগুলোতে ক্রমেই মুসল্লির সংখ্যা বাড়ছে। এটা যেমন ইসলাম থেকে দূরে চলে যাওয়া মুসলমানদের নতুন করে আলোর পথে ফিরে আসার নজির; তেমনি অনেক অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করে শান্তির পতাকাতলে আবদ্ধ হচ্ছেন ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫১ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।