ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

আজ তারাবিতে থাকছে স্ত্রী-সন্তানদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার বার্তা

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৬ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৬
আজ তারাবিতে থাকছে স্ত্রী-সন্তানদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার বার্তা

আজকে অনুষ্ঠিত হবে ২৫তম খতমে তারাবি। আজকের খতমে তারাবিতে তেলাওয়াতকৃত কোরআনে কারিমের আয়াতে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয়ের সঙ্গে থাকবে দ্বীন পালনে যত্নশীল থাকার জন্য স্ত্রী-সন্তানদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার বার্তা।

এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে উদাস না করে। যারা উদাস হবে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত। ’ –সূরা মুনাফিকুন: ৯

‘হে মুমিনগণ! তোমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে অনেকেই তোমাদের (দ্বীনী কাজের) জন্য ক্ষতিকর। অতএব, তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। তোমরা যদি তাদের মার্জনা কর, তাদের দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা কর, তাদের ক্ষমা কর তবে জেনে রাখ আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। তোমাদের সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো তোমাদের জন্য পরীক্ষা। আল্লাহর নিকট রয়েছে মহাপুরস্কার। ’ –সূরা তাগাবুন: ১৪-১৫

‘নারী, সন্তান, রাশিকৃত সোনা-রুপা, আর চিহ্নিত ঘোড়ার পাল, গবাদি পশু এবং ক্ষেত-খামারের আসক্তি মানুষের নিকট মনোরম করা হয়েছে। এ সব ইহকালীন জীবনের ভোগ্যবস্তু। আর আল্লাহর নিকট আছে উত্তম আশ্রয়স্থল। ’ –সূরা আল ইমরান: ১৪

পুরুষ মাত্রই স্ত্রীকে ভালোবাসবে, স্ত্রীর সঙ্গে থাকবে গভীর প্রণয়, সন্তানের প্রতি তার থাকবে অকৃত্রি মায়া-মমতা এটাই স্বাভাবিক। প্রেম ও মহব্বতের এ সম্পর্ক আল্লাহর বিশেষ রহমত। তার অশেষ অনুগ্রহ। এ প্রেম ও আকর্ষণ পুরুষকে কাজ করতে প্রেরণা যোগায়, পরিশ্রম করতে উৎসাহ দেয়। জগৎ সংসারের জন্য এ সম্পর্ক আবশ্যক। কিন্তু অনেক সময় স্ত্রী-সন্তানদের মায়া ও প্রেমের এ বাঁধন দ্বীনী কাজের ব্যাপারে পুরুষকে পেছন থেকে টেনে ধরে রাখে। সামনে এগুতে দেয় না। দ্বীনী কাজ করতে দেয় না। তখন স্ত্রীর প্রেম, সন্তানের ভালোবাসা হয়ে উঠে তার পরকালের স্থায়ী সুখ শান্তির জন্য ক্ষতিকর।

অনেক পুরুষ কর্ম জীবনে ঘুষ থেকে পবিত্র থাকতে চায় কিন্তু স্ত্রীর উপর্যুপরি চাপে বাধ্য হয়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। অনেক পুরুষ দাড়ি রাখতে চায় কিন্তু স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে তা পারে না। অনেকের কাছে হজ ফরজ হওয়ার পরিমাণ সম্পদ থাকার পরও সন্তানদের ভবিষ্যতের চিন্তায় হজে যাওয়ার সাহস পায় না। ধর্মীয় কাজে, ধর্মের সেবায় সম্পদ দান করার ইচ্ছা অনেকের মনেই থাকে কিন্তু স্ত্রীর কারণে সাহস পায় না। আবার অনেকেই স্ত্রীর আবদার রক্ষা করতে যেয়ে মা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, বোন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জিহাদ ফরজ হওয়ার পরও অনেক সময় অনেকে স্ত্রী-সন্তানের পিছু টানে জিহাদে যেতে পারে না। সন্তানের ব্যস্ততায় অনেকের নামাজের জামাত ছুটে যায়। শত আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও এ ধরণে অনেক নেক কাজ ছুটে যায় শুধুমাত্র স্ত্রী-সন্তানের কারণে, আবার অনিচ্ছুক থাকা সত্ত্বেও অনেক গুনাহতে জড়াতে হয় নিছক স্ত্রী-সন্তানের কারণে।

উপরোক্ত আয়াতগুলোতে মহান আল্লাহ এ ব্যাপারে পুরুষদের সতর্ক করে দিয়েছেন। স্ত্রীকে ভালোবাসতে হবে, সন্তানকে ভালোবাসতে হবে এ ভালোবাসা সওয়াবের কাজ, নবীর সুন্নত। কিন্তু এ ভালোবাসা যেন দ্বীনের অন্য কোনো কাজ বর্জনের কারণ না হয়, কোনো গুনাহে লিপ্ত হওয়ার কারণ না হয়।

স্ত্রী-সন্তানের মুখে খাবার দেওয়া দ্বীনের কাজ কিন্তু সে খাবার ঘুষের টাকা, লুটপাটের টাকা দিয়ে নয়। স্ত্রী-সন্তানকে সময় দিতে হবে, তাদের সঙ্গে গল্প করতে হবে, খেলতে হবে কিন্তু ফরজ নামাজের জামাত পরিত্যাগ করে নয়। সন্তানের ভবিষ্যত গড়তে হবে আবার আয়ের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ ইসলামের সেবায়, মানবতার সেবায়, জনসেবায় দান করতে হবে। রাতের অন্ধকারে স্ত্রীকে সময় দিতে হবে আবার তাহাজ্জুদও পড়তে হবে।

প্রতিটি মুসলিম পুরুষের দায়িত্ব তার স্ত্রী-সন্তানকে দ্বীনদার, পরহেজগার, খোদাভীরু বানানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! নিজেকে ও নিজের পরিবারস্থ লোকদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। ’ –সূরা তাহরিম: ৬

বাসার ভেতর যখন দ্বীনের মেহনত থাকবে, স্ত্রী ও সন্তানকে দ্বীনদার বানানোর মেহনত থাকবে তখন স্ত্রী-সন্তানরা পুরুষের দ্বীন পালনের জন্য ক্ষতিকর হবে না বরং তারাই হবে তার দ্বীন পালনের সহায়ক। পরিবারে দ্বীনের আবহ সৃষ্টি করার জন্য দু’টি কাজ জরুরি।

১. মাঝে মধ্যে কোনো আমলদার বুজুর্গ আলেমকে বাসায় এনে পরিবারের সদস্যদের কিছু দ্বীনী কথা শোনানো।

২. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় বাসার সবাইকে নিয়ে তালিম করা। তালিমে পাঠ করা যেতে পারে ‘আস সিরাতুন নববিয়াহ, হায়াতুস সাহাবা এবং সংগ্রামী সাধকদের জীবন ও ইতিহাস। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৬ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।