ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

হিরোশিমার ইফতারে থাকে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ভিড়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১০ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০১৬
হিরোশিমার ইফতারে থাকে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ভিড় ছবি: সংগৃহীত

জাপানের হিগাশি-হিরোশিমা শহরটি গড়ে উঠেছে হিরোশিমা শহরের ৪৫ কিলোমিটার পূর্বে হিরোশিমা ইউনিভার্সিটিকে কেন্দ্র করে। শহরের প্রায় দুই লাখ জনসংখ্যার মধ্যে প্রবাসীর সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার।

বলা বাহুল্য, এরা কোনো না কোনোভাবে হিরোশিমা ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যুক্ত। তারা এসেছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে। তাদের মুখের ভাষা আলাদা; ভিন্ন তাদের সংস্কৃতি। এদের মধ্যে ইসলাম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা প্রায় ২০০ জন।

উল্লেখ্য, হিরোশিমা প্রিফেকচারের সবচেয়ে বড় ইসলামিক কালচারাল সেন্টার অবস্থিত হিগাশি-হিরোশিমায়। রমজান মুসলমানদের শুধু ইবাদতের মাসই নয়; আনন্দেরও মাস। সারাদিন রোজা রাখার পর সবাই একত্রিত হয়ে ইফতার করার যে আনন্দ, আর কোনো কিছুর সঙ্গে তার তুলনা হয় না। হিগাশি-হিরোশিমায় আসার পর জেনেছি, পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে এই সেন্টারে সব প্রবাসী মুসলমান একত্রিত হয়ে ইফতার করেন। ভিনদেশী সব মুসলমান পাশাপাশি বসে ইফতারের মধ্য দিয়ে শুধু মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধকেই সুসংহত করেন না; সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানও হয় এর মধ্য দিয়ে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও প্রবাসী মুসলমানদের সম্মিলিত ইফতার হচ্ছে প্রতিদিন।

একটা বিষয় লক্ষ করছি, আমাদের দেশে ইফতারের খাবারের যে বাহুল্য দেখা যায়, সেটা এখানে নেই। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী, মুসল্লিরা এখানে ইফতার করেন খেজুর ও পানি দিয়ে। এরপর তারা জামাতে মাগরিবের নামাজ আদায় করেন। তারপর সেন্টারের নিচতলায় একত্রিত হয়ে সবাই রাতের খাবার গ্রহণ করেন। এ খাবারেরও আয়োজন করা হয় বিশেষভাবে। প্রতিদিন দায়িত্ব থাকে একেক কমিউনিটির। দায়িত্ব তালিকা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় আগেই। তালিকা অনুযায়ী নির্ধারিত দিনে প্রত্যেক কমিউনিটি সব প্রবাসী মুসলমানের খাবারের আয়োজন করে। নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী তারা পরিবেশন করে নিজ দেশের খাবার। এর মধ্য দিয়ে এখানকার মুসলমানদের ভিন দেশের খাবার ও স্বাদের সঙ্গে পরিচয় লাভের সুযোগ ঘটে।

ইন্দোনেশিয়ানরাই এখানে সবচেয়ে বড় মুসলিম কমিউনিটি। তাদের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১২০ জন। এর পরের অবস্থান বাংলাদেশ কমিউনিটির। এ কমিউনিটির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫০ জন। এছাড়াও রয়েছে আফগান, আরব ও মালয়েশিয়ান কমিউনিটি। খাবার আয়োজনের সার্বিক খরচ ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কমিউনিটির হলেও হিরোশিমা ইসলামিক সেন্টারও কিছু খরচ বহন করে। মুসলমান ছাড়াও এ শহরে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। যেহেতু বিভিন্ন কমিউনিটি আয়োজনের দায়িত্বে থাকে, সেহেতু তাদের দেশের অন্য ধর্মাবলম্বীরাও অংশগ্রহণ করে খাবারে; আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রেও তারা অংশগ্রহণ করেন সাগ্রহে। প্রতিদিন অসংখ্য ভিনধর্মের মানুষ অতিথি হিসেবে আসেন এই সেন্টারে। তারা আসেন ইসলাম ধর্ম ও মুসলমান সমাজ সম্পর্কে জানতে। তাদের জানানোর জন্য পর্যাপ্ত প্রচেষ্টা করা হয় সেন্টারের পক্ষ থেকে।

বলে রাখা ভালো, রাতের খাবারের পর থেকে এশার নামাজের আগ পর্যন্ত সময়ে প্রচার করা হয় ইসলামিক বিষয়াদির ওপর বক্তব্য ও তথ্যচিত্র। এসব শোনা ও দেখার মাধ্যমেও অন্য ধর্মাবলম্বী অতিথিরা জানতে পারেন ইসলাম ও মুসলমান সমাজ সম্পর্কে।

এখানে এই সুন্দর আয়োজনের ব্যবস্থা একদিনে হয়নি। এজন্যও পেরোতে হয়েছে অনেক বাঁধা-বিপত্তি। হিরোশিমা ইসলামিক কালচারাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত হিরোশিমা ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশি সহকারী অধ্যাপক মাফিদুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, তিন বছর যাবত আমরা এভাবে একসঙ্গে রমজান পালন করে আসছি। যদিও প্রথম দিকে আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়েছে, কিন্তু সেটা সফলতার সঙ্গে মোকাবেলা করেই আজ আমরা এই পর্যায়ে এসেছি।

রমজানে হিগাশি-হিরোশিমায় ভিন দেশের নানা স্বাদের খাবার গ্রহণের সুযোগ হচ্ছে, এখানে বাসকারী বাংলাদেশিদের। কিন্তু তারপরও ইফতার শেষে মনের অজান্তেই কেউ কেউ বলে ফেলেন, ছোলা আর বেগুনি হলে ইফতারিটা আজ আরও ভালো হতো! ছোলা কিংবা বেগুনি নয়; ইফতার করতে বসে দেশ আর স্বজনদের কথাই যে তাদের বেশি মনে পড়ে!

লেখক: জাপানের হিরোশিমা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।