ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

‘মানুষকে দেখানোর রোজা থাকলে তা কবুল হবে না’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৭
‘মানুষকে দেখানোর রোজা থাকলে তা কবুল হবে না’ বাগেরহাটের ঐহিত্যবাহী ষাট গম্বুজ মসজিদের ইমাম ও খতিব আলহাজ্ব মাওলানা মো. হেলাল উদ্দিন ছবি: সিরাজুল ইসলাম- বাংলানিউজ

বাগেরহাট ঘুরে: মানুষকে দেখানোর রোজা থাকলে তা কবুল হবে না- বলে মত প্রকাশ করেছেন বাগেরহাটের ঐহিত্যবাহী ষাট গম্বুজ মসজিদের ইমাম ও খতিব আলহাজ্ব মাওলানা মো. হেলাল উদ্দিন।

দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে তিনি হজরত খান জাহান (রহ.)-এর স্মৃতিধন্য এ মসজিদে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন।

ষাট গম্বুজ মসজিদে বসে রমজানের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও করণীয় সম্পর্কে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেন, কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে।

যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর যাতে তোমরা আল্লাহ ভীরু হতে পারো। ’

মহান আল্লাহর দরবারে অশেষ শোকরিয়া, পবিত্র রমজান সামনে। রমজান মাস রহমত, বরকত ও মাগফেরাত নিয়ে হাজির হয়। বছরে বারো মাসের মাঝে সবথেকে গুরুত্ব পূর্ণ মাস এটি। মাহে রমজান  মুত্তাকিদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু মানুষ দেখানোর রোজা রাখলে হবে না- সকল খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রকৃত পক্ষে রোজা থাকতে হবে তবেই সফলতা অর্জিত হবে।  

খতিব মাওলানা মো. হেলাল উদ্দিন আরও বলেন, রমজান মাসে মানুষের জবান থেকে খারাপ কথা কম আসে। নানা ধরনের অনাচার থেকে আল্লাহ মানুষকে হেফাজত করেন। সমাজে বিশৃঙ্খলা কম থাকে। এই অভ্যাস বছরের বারো মাস মানুষের মাঝে প্রতিফলিত হলে রোজা পালন সফল ও স্বার্থক হবে।  
বাগেরহাটের ঐহিত্যবাহী ষাট গম্বুজ মসজিদ ছবি: সিরাজুল ইসলাম- বাংলানিউজ
তিনি বলেন, রমজানের তাকওয়া শুধু ইমাম সাহেব বা হাফেজ সাহেবের না- আম জনতার। এ কারণে অামরা দেখি, রমজানে যারা রোজা রাখেন না তারাও রোজার সম্মান করেন। অন্য ধর্মের মানুষও রমজান মাসে সংযম অবলম্বন করেন। রোজাকে সম্মান করেন। এই চেতনাটা ধরে রাখতে হবে কাজে-কর্মে।  

মাওলানা হেলাল উদ্দিন বলেন, রমজান মাস ধৈর্যের মাস, ইবাদতের মাস। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, রমজানের একটি ফরজ ইবাদত অন্য সময়ের সত্তরটি ফরজের সমান। আর রমজানের একটি নফল আমল অন্য সময়ের একটি ফরজের সমান। তাই আল্লাহ চান মুমিন বান্দা রমজান মাসে বেশি পরিমাণে নেক আমল করুক। তাই এ মাসে জাকাত দিবেন, দান-খয়রাত করবেন, কোরআন তেলাওয়াত করবেন এবং রোজাদারকে ইফতার করাবেন।

বরেণ্য এই আলেম বলেন, রোজা শুধু না খেয়ে থাকার নাম না। রোজাও রাখলাম মিথ্যা কথা বললাম, চুরি করলাম, মিথ্যা বললাম- তাহলে হবে না। জবানের রোজা, হাতের রোজা, চোখের রোজা সব রাখতে হবে। শুধু মানুষ দেখানোর রোজা রাখলে হবে না। সকল খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। তবেই সফলতা অর্জন করতে পারবেন।  

বিভিন্ন দেশে রমজান পালনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি বিভিন্ন দেশে দেখেছি, তারা অনেক খোদাভীরু। রমজান আসলে গ্রাম থেকে শুরু করে শহরের মা-বোনেরা শুধু ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থাকেন। আমাদের সেটা ধারণ করতে হবে। শরিয়া মোতাবেক রোজা পালনে মনোযোগী হতে হবে। এমন সুযোগ জীবনে আর নাও আসতে পারে।
ষাট গম্বুজ মসজিদের ভেতরের দৃশ্য ছবি: সিরাজুল ইসলাম- বাংলানিউজ
হাদিসের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেক মানুষতেই মৃত্যুর স্বাধ গ্রহণ করতে হবে। কাজেই সময় থাকতে বেশি করে ইবাদত করতে হবে। ফরজ নামাজ, ফরজ রোজা- বিশেষ করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সবাইকে আদায় করতে হবে। অনেক সময় শুনতে পাই, রোজা কিন্তু নামাজ পড়ে না। এমন হলে হবে না। নামাজ আমাদেরকে পড়তে হবে। নামাজের কথা আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বিরাশি বার বলেছেন।  

এক কথায়, রমজান মাস আমরা অবহেলায় কাটাব না। মনে মনে পণ করব যে, ৩০টি রোজা আমরা থাকব। ইফতার করব ও নামাজ আদায় করব এবং আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের চেষ্টা করব।

ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ব্যবসায়ী ভাইয়েরা রমজানে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। এটা ঠিক না। শুধু রোজাদার নয়, কোনো সময়ই কোনো মানুষকে কষ্ট দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। প্রত্যেক মুসলমান আমরা ভাই-ভাই। একে অপরকে ইবাদত-বন্দেগির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে হবে। এটা মুসলমান হিসেবেও আমাদের দায়িত্ব।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৭
এমআরএম/এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।