ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

‘রোজাকে রোজার মতো পালন করলে সমাজের চিত্র পাল্টে যেতো’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৫ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৭
‘রোজাকে রোজার মতো পালন করলে সমাজের চিত্র পাল্টে যেতো’ পীরে কামেল আল্লামা মুফতি রুহুল আমীন

ভোররাত থেকে সূর্যাস্ত অবধি না খেয়ে থাকার নাম রোজা হলেও এর তাৎপর্য আরও ব্যাপক এবং বিস্তৃত।

এ বিষয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম, গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মহাপরিচালক, পীরে কামেল আল্লামা মুফতি রুহুল আমীন। কথা বলেছেন মুফতি এনায়েতুল্লাহ

আলাপচারিতায় মুফতি রুহুল আমীন বলেন, কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদার বান্দারা! শোনো, রোজা তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে; যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল।

যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। ’

কোরআনে বর্ণিত এই আয়াতের শিক্ষা হলো, রোজাপালনকারীকে তাকওয়া অর্জনকারী হতে হবে। আর তাকওয়া অর্জনকারী মুত্তাকি হলেন ওই ব্যক্তি যিনি আল্লাহকে ভয় করেন। অন্যের কল্যাণ করেন। সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখেন। সর্বদা ন্যায়ের পথে থাকেন। কারো কোনো ক্ষতি করেন না। অন্যায়ের প্রতিবাদ এবং তা প্রতিরোধে সচেষ্ট থাকেন। সমাজের মানুষকে ভালোবাসেন। প্রয়োজনে সহায়তা করেন। এমন মানুষই মুত্তাকি। এমন মানুষ কোনো সমাজে বেশিরভাগ হতে পারলে সে সমাজের চিত্রটা কীরূপ হতে পারতো; ভেবে দেখেছি কেউ?

পীরে কামেল মুফতি রুহুল আমিন আরও বলেন, যারা প্রকৃত রোজাদার তারা রোজা পালনে কোনো ধরনের কষ্টানুভব করেন না। বরং আনন্দের সঙ্গে পবিত্র মাসটি উদযাপন করেন। সারাদিন সিয়াম পালন করে চোখে-মুখে কিছুটা মলিনতা লক্ষ্য করা গেলেও অন্তর থাকে সংযমের অনাবিল আনন্দানুভূতি ও আত্মতৃপ্তিতে উদ্বেল।

সারাদিনের সিয়াম সাধনা, নিয়মিত নামাজ আদায়, যথাসময়ে সাহরি-ইফতার গ্রহণ, তারাবিতে অংশ নেওয়ার মধ্যে যে কী পরমানন্দ ও নৈকট্যানুভব তা একজন বেভুল বেরোজাদারের কল্পনাতীত। এই আনন্দটা বাকী মাস ধরে রাখার ও সেমতে চলার শিক্ষা দেয় রমজান।  

বিশিষ্ট এই ইসলামি চিন্তাবিদ বলেন, সংযম সাধনার এ পবিত্র মাসে সামর্থবান মুসলমানরা সাধারণত জাকাত আদায় করেন। রোজা শেষে ঈদের আগে আগে প্রদান করেন দুস্তদের হক সদকায়ে ফিতর। অভাবী মানুষ যাতে ঈদের উৎসবে অংশ নিতে পারেন তার জন্যই এই ফিতরা প্রদানের অনন্য ব্যবস্থা। এমন চমৎকার ব্যবস্থা অন্যকোনো সমাজে দেখা যায় না। তাই তো বলা হয়, তবে যে মুসলনমান সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও সিয়াম পালন করে না, সে হতভাগ্য।
পীরে কামেল আল্লামা মুফতি রুহুল আমীন
গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মহাপরিচালক বলেন, প্রকৃত রোজা মানুষকে পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করে যদি সে সিয়াম আন্তরিক হয়ে থাকে। আর যদি তা লোকদেখানো হয় তাহলে সে রোজায় কোনো ফায়দা নেই। অবশ্য অনেক ইবাদত রয়েছে যেগুলো মানুষ দেখলে বোঝে। যেমন নামাজ আদায়, দান-খয়রাত করা, হজ পালন করা। এসব ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য হলেও এগুলো আদায়কালে লোকে দেখেন। কিন্তু রোজা এমন ইবাদত, যা আল্লাহ ছাড়া অন্যরা তেমন টের পান না- এটাই হচ্ছে অন্য ইবাদত ও সিয়ামের মধ্যকার ফারাক।
 
মুফতি রুহল আমিন বলেন, রোজা পালন মানে শুধু ভোররাত থেকে সূর্যাস্ত অবধি পানাহার ও স্বামী-স্ত্রীর সান্নিধ্য থেকে বিরত থাকবার নাম নয়। রোজাদারের দায়িত্ব অনেক। প্রকৃত রোজাদার আল্লাহতায়ালার হুকুমে দিনের বেলা পানাহার ও স্ত্রী সান্নিধ্য থেকে দূরে থাকার সঙ্গে সঙ্গে সকল প্রকার অশ্লীলতা, অপকর্ম, মিথ্যাচার, অবৈধ লেনদেন, চোগলখোরি, বাটপারি, মুনাফাখোরি, ষড়যন্ত্র ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে না পারলে রোজা পালনের কোনো সার্থকতা নেই।

তিনি বলেন, যারা সিয়াম পালন করেন আবার মিথ্যা বলেন, ওজনে কম দেন, মুখ খারাপ করেন বা অন্যকে গালমন্দ করেন তাদের রোজা দুর্বল হয়, ত্রুটিপূর্ণ হয়। একজন মুসলমান অন্যের অকল্যাণ করা তো দূরে থাক তার চিন্তাও করতে পারেন না। অথচ আমাদের সমাজে রোজা পালন করা হয়, নামাজ আদায় করা হয়, একটু পরপরই সুন্দর সুন্দর দৃষ্টিনন্দন মসজিদ দেখা যায়, মাদরাসার সংখ্যাও অনেক, আলেম-ওলামাও অসংখ্য। কিন্তু ইসলামের প্রতিফলন নেই। হিংসা, বিদ্বেষ, ঝগড়া, মারামারি, কাটাকাটি বেড়েই চলেছে- এটা কেন?

কোরআন মানলে, রোজা রোজার মতো পালন করলে এমনতো হওয়ার কথা নয়? এ বিষয়গুলো উপলব্ধি করতে হবে। তাহলে খোদাভীতি অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সুদৃঢ় ও নিবিড় হবে। সেই চেষ্টাটাই সবার আগে দরকার। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৬ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।