ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

ফিতরা আদায়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হোক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৮ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৭
ফিতরা আদায়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হোক ফিতরা আদায়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হোক

রমজান রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের মাস। রমজানের প্রতিটি ভালো কাজে ৭০ গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। ফলে এ মাসে বেশি বেশি দান-সদকা করে থাকেন অনেকে। 

কিন্তু রমজানের রোজাকে ত্রুটিমুক্ত ও অসহায়-গরিবদের ঈদকে আনন্দময় করতে ‘সদকাতুল ফিতর’ আদায়ের মতো ওয়াজিব বিধানে খুব কম মানুষই গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। বিষয়টি কোনোভাবেই কাম্য নয়।

 

ইতোমধ্যে ১৪৩৮ হিজরি সালের ফিতরার পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছে। জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৬৫  টাকা আর সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯৮০ টাকা নির্ধারণ করেছে জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটি।

ফিতরা আদায়ের দু’টি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও দ্বিতীয় সীমা হিসাব করে ফিতরা আদায় করেন- এমন লোক খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অধিকাংশ মানুষই সর্বনিম্নটা হিসাব করে ফিতরা আদায় করেন।  

বলা যায়- সমাজের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত- সবাই গতানুগতিক নির্ধারিত (সর্বনিম্ন) পরিমাণেই ফিতরা আদায় করে দায় সারার চেষ্টা করেন। অথচ বিষয়টি এমন নয়!

সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা জাকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক ‘সা’ খানা, অথবা এক ‘সা’ গম, অথবা এক ‘সা’ খেজুর, অথবা এক ‘সা’ পনির, অথবা এক ‘সা’ কিসমিস দ্বারা। ’

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, সাহাবি হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.)-এর যুগে আমরা সদকাতুল ফিতর দিতাম এক ‘সা’ খাদ্যবস্তু। তিনি বলেন, তখন আমাদের খাদ্য ছিল যব (বার্লি জাতীয় খাবার বিশেষ), কিসমিস-মোনাক্কা, পনির ও খেজুর। -সহিহ বোখারি: ১/২০৪-২০৫

বর্ণিত দু’টি হাদিস থেকে বোঝা যায়, খাদ্যবস্তু তথা চাল, আটা, খেজুর, কিসমিস, পনির ও যব ইত্যাদি পণ্যগুলোর যে কোনো একটির মাধ্যমে ফিতরা প্রদান করা যায়। তবে আটা বা চালের ক্ষেত্রে পরিমাণ হতে হবে এক ‘সা’ বা পৌনে দুই সের। আর খেজুর, কিসমিস, পনির ইত্যাদির ক্ষেত্রে পরিমাণ হবে এর দ্বিগুণ তথা ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম।
 
এখানে বলার বিষয়টি হলো- উল্লেখিত পণ্যগুলোর বাজার মূল্য এক না। এক ‘সা’ চাল বা আটার মূল্য যদি ৬০ টাকা হয়, খেজুরের হিসাবে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য হয় ১৬৫০ টাকা, কিসমিসের মাধ্যমে আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য দাঁড়ায় ১২০০ টাকা, পনির দিয়ে আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ১৬০০ টাকা এবং যব দিয়ে আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ২০০ টাকার মতো আদায় করতে হয়।

এত সহজেই অনুমেয়- পণ্য হিসাবে এর পরিমাণটাও দ্বিগুণ, তিনগুণ বা তারচে’ও বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু ধ্রুবতারার মতো সত্য হলো- আমাদের সমাজের সর্বস্তরের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা তাদের ফিতরা আদায় করতে সর্বনিম্ন মূল্যের চাল বা আটাকেই বেছে নেন। এতে তাদের ফিতরা হয়তো আদায় হয়ে যাবেড়- কিন্তু যে অর্থে ফিতরা দেয়া হয়, তথা গরিবের ঈদকে আনন্দময় করা- সেটি কি অর্জন হবে?

আমাদের ৬৫/৭০টাকার মাধ্যমে একজন গরিব লোক কি স্বাচ্ছন্দের সঙ্গে ঈদ উৎযাপন করতে পারেন? তাহলে ধনীরাও কেন ফিতরা আদায়ে চাল-আটাকে বেছে নিচ্ছি? আমরা যারা অঢেল সম্পদের মালিক, নিজেদের ঈদ উৎযাপনে যারা হাজার হাজার (কখনও লাখ) টাকা ভাঙতে কার্পণ্য করি না- আমরা কেন খেজুর, পনির, কিসমিস ইত্যাদির হিসাবে একটু বেশি ফিতরা দিচ্ছি না? অথচ মানবতা ও ধর্মের দাবি ছিল এটাই!

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।