সুদানের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বিভাজন ও মতবিরোধের ফলে দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ।
সুদানিদের কোনো আশ্রয়স্থল নেই। সামাজিক নিরাপত্তা নেই। অধিকাংশই গাছের নিচে বসবাস করেন। তবুও রমজান মাসকে তারা বেশ গুরুত্বের সঙ্গে পালন করেন।
অন্যান্য নেক আমলের সঙ্গে রোজাদারদের ইফতার করানোর প্রতি বেশ জোড় দিয়ে থাকেন সুদানবাসী। রোজাদারদের ইফতার করানো সুদানের প্রাচীন সংস্কৃতির অংশবিশেষ। রমজান মাসে পর্যটক ও পথচারীদের ইফতার করানোর জন্য সুদানিরা রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামেন। দস্তরখানায় হরেক রকমের ইফতার সাজিয়ে সন্ধ্যায় সুদানিরা ছুটতে থাকেন সড়কের দিকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা সড়কের মাঝখানে গিয়ে যানবাহন থামান।
বলা যায়, এক প্রকার জোর করেই গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের ইফতার করান সুদানিরা। মাগরিবের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুবকরা পাগড়ি হাতে দাঁড়িয়ে যান রাস্তায় মাথায়। অত্যন্ত আনন্দ ও আবেগপূর্ণ অনুভূতি নিয়ে রোজাদারদের স্বসম্মানে নিয়ে যাওয়া হয় খোলা আকাশের নিচে ইফতার মজলিসে।
অধিকাংশ সুদানবাসী দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করলেও ইফতারিতে তাদের আয়োজনে থাকে দারুণ সব সুস্বাদু ভিন্নধর্মী খাবার। সবজি দিয়ে তৈরি অধিকাংশ খাবারই স্বাস্থ্যসম্মত।
সুদানে সাধারণত ইফতার শুরু করা হয় খেজুর দিয়ে। এর পর গোশত দিয়ে তৈরি ‘হামড়া’, ‘লাহমা’ নামক বিশেষ খাবার তারা খেয়ে থাকেন। চালের তৈরি ‘আছিদা’ এক ধরনের পিঠাও তারা খান। গোশত ও সস দিয়ে তৈরি ‘মুলাহ’ নামক খাদ্যও ইফতারিতে খাওয়া হয় এবং একই সঙ্গে ‘গাওয়া’ নামক চা জাতীয় পানীয় তারা পান করেন।
সুদানিরা ‘শোরবা’ নামক স্যুপ, গোশত দিয়ে তৈরি ‘মুহাম্মার’ নামক খাবার, দুধ দিয়ে তৈরি ‘রুসবিল হালিব’ সালাদ দিয়ে খায়। তদুপরি পায়েস, ক্ষীর, ফিরনি এগুলো তৃপ্তির সঙ্গে খেয়ে থাকেন তারা।
সুদানিরা রীতি অনুযায়ী ঘরে ইফতার করেন না। বড় ট্রেতে করে নানা রকম ইফতার ছোট ছোট বাটিতে সাজিয়ে নিয়ে বসেন খোলা আকাশের নিচে বিশেষ ইফতার মজলিসে। নিজেও খান অন্যদেরকেও শরিক করেন সেই ইফতারে। একেক জনের আনা ইফতারিতে কমপক্ষে আট-দশ জন ইফতার করতে পারেন।
সুদানিরা সাধারণত শাক-সবজির সালাদ খায়। শাক-সবজি দিয়ে তারা রকমারি খাবার ও সালাদ তৈরি করে।
সুদানি লেখিকা ‘সাহার মাবরুক’ বলেন, ‘বৃদ্ধরা সুদানের প্রাচীন খাবারে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তবে যুবক-যুবতীরা তাদের প্রাচীন খাবারে সন্তুষ্ট নন। তারা খাবারের তালিকায় কিছু নতুন ও বিদেশি খাবার চায়। ’
তিনি মনে করেন, প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় শিম, মটরশুটি ও বরবটির মতো আঁশযুক্ত সবজি ও যথেষ্ট পরিমাণে আঁশযুক্ত শষ্যদানা ও ফলমূল থাকা উচিত।
অনেকে আবার মনে করেন, সুদানের প্রাচীন খাবারই তাদের ঐতিহ্য। যারা নতুন খাবারের দাবি করছেন- তারা আসলে সুদানের সংস্কৃতির ওপর আঘাত করছেন। সংস্কৃতিকে পরিবর্তন করে দিচ্ছেন। এ জন্য তারা অবশ্য হোটেলকে দায়ী করেন।
রমজানে সুদানিদের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হচ্ছে- ভুট্টা দিয়ে তৈরি জাউ। সুদানের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানিয়ের নাম- আল আবরিয়া। এটিও ভুট্টা দ্বারাই তৈরি করা হয়। এর পর পানি মিশিয়ে তা ছেকে তৈরি হয় এই শরবত।
আল হালুমার- নামে আরেক ধরনের শরবত পাওয়া যায়- যা ভুট্টা ও অন্যান্য মশলা দিয়ে তৈরি করা হয়।
-সাসা পোস্ট অবলম্বনে
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৩ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৭
এমএইউ/