ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, দান মানুষের পাপ মিটিয়ে দেয়

আতাউর রহমান খসরু, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১২ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৭
রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, দান মানুষের পাপ মিটিয়ে দেয় রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, দান মানুষের পাপ মিটিয়ে দেয়

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন পৃথিবীর জন্য অনুপম আদর্শের সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত। তিনি তার জীবন ও কর্মের মাধ্যমে কল্যাণের সব পথেই পদচিহ্ন রেখে গেছেন। এ জন্য আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের জন্য রয়েছে রাসূলের জীবনে উত্তম আদর্শ।’ -সূরা আল আহজাব

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর চারিত্রিক গুণাবলীর অন্যতম দিক দানশীলতা। জন্মগতভাবে তিনি ছিলেন দানশীল ও উদার।

তিনি যখন দুধের শিশু তখনও দুধ মায়ের একটি স্তন পান করতেন এবং অপরটি দুধ ভাই আবদুল্লাহর জন্য ছেড়ে দিতেন। -সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া

নবুওয়ত লাভের পূর্ব ও পরে কখনও কেউ তার কাছে কিছু চেয়ে নিরাশ হয়নি। নবুওয়ত লাভের পূর্বে তিনি সমাজের অসহায় দুঃস্থ মানুষের সহযোগিতার জন্য হিলফুল ফুজুল নামক একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে তোলেন। হজরত জাবের (রা.) বলতেন, ‘রাসূল (সা.)-এর নিকট কিছু চাইলে তিনি কখনও না বলতেন না। ’ -আল আদাবুল মুফরাদ

হজরত আলি (রা.) রাসূল (সা.)-এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে বলেন, ‘তিনি ছিলেন মানুষের মাঝে সবচেয়ে দানশীল ও প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী। ’ -শামায়েলে তিরমিজি

রমজানে রাসূল (সা.)-এর দানের হাত আরও প্রসারিত হতো। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সবচেয়ে বেশি দানশীল। তিনি আরও দানশীল হয়ে উঠতেন যখন হজরত জিবরাইল (আ.) রমজানে তার সঙ্গে দেখা করতেন। হজরত জিবরাইল (আ.) তার সঙ্গে রমজানের প্রতি রাতে তার সঙ্গে দেখা করতেন। তারা পরস্পরকে কোরআন শোনাতেন। হজরত জিবরাইল (আ.) যখন তার সঙ্গে দেখা করতেন, তখন তিনি প্রবাহমান বাতাসের মতো কল্যাণময়ী ও দানশীল হয়ে উঠতেন। -সহিহ বোখারি

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, প্রবাহমান বাতাস যেমন সর্বশ্রেণির উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য কল্যাণকর, রাসূল (সা.)-এর আগমন ছিলো এমনই কল্যাণের বার্তাবাহক। তার দানের হাতও ছিলো- এমনই উদার ও প্রশস্ত। -ফাতহুল বারি

অর্থাৎ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সকল সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে সর্বশ্রেণির মানুষকে মুক্ত হাতে দান করতেন। রমজানে তা আরও বৃদ্ধি পেতো এবং বিস্তৃত হতো।  

আল্লামা ইবনে কায়্যিম (রহ.) হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আত্মিক প্রশস্ততা ও দানশীলতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, যখন জানা গেলো- রাসূল (সা.) কেমন দানশীল ছিলেন, তখন উম্মতের জন্য আবশ্যক হলো- হৃদয় প্রশস্ত করা এবং দানের হাত উন্মুক্ত করা। রাসূল (সা.)-এর অনুসরণ ও অনুকরণ করা। রমজানে অধিক পরিমাণে দান করা। কেননা রমজানে মানুষের প্রয়োজন বৃদ্ধি পায়। রমজানে মানুষ ধর্মীয় ব্যস্ততার দরুণ জাগতিক আয় উপার্জনে মনোযোগ দিতে পারে না। এ ছাড়াও রমজানের রয়েছে বিশেষ মর্যাদা ও সম্মান। এ মাসের পুণ্যের প্রতিদান বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়। -জাদুল মাআদ

রমজানের দান শুধু নগদ অর্থ প্রদানকেই বোঝায় না, বরং রোজাদারকে ইফতার করানো, অসহায় মানুষের ঘরে সাহরি পৌঁছানোও এমনকি নিজ পরিবারের জন্য সাধ্য অনুযায়ী ব্যয় করাও সদকা বা দানের অন্তর্ভুক্ত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানে অন্যকে ইফতার করাতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। হজরত জায়েদ বিন খালেদ জুহনি (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করালো তার জন্য রয়েছে অনুরূপ প্রতিদান, অথচ রোজাদারের প্রতিদান কমানো হবে না। ’ -সুনানে তিরমিজি

রমজানের একটি বিশেষ দান সদকাতুল ফিতর। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য নিজের এবং অধীনস্থ নাবালেগ পোষ্যের সদকা আদায় করা ওয়াজিব। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সদকা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) সদকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন রোজাদারের জন্য অশ্লীলতা ও অনর্থক কথা ও কাজ থেকে পবিত্রতা এবং নিঃস্ব ব্যক্তির জন্য খাদ্য স্বরূপ। ’ -সুনানে আবু দাউদ

সম্পদের জাকাত আদায় করার উত্তম সময় রজমান। রমজানে জাকাত আদায়ের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে রমজানে পুণ্যের কাজের প্রতিদান বাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে রমজানে জাকাত আদায় করতে উৎসাহ দিয়েছেন অনেক ইসলামিক স্কলার।
তাই আসুন! রমজানে বেশি বেশি মানুষকে সাহায্য ও সহযোগিতা করি। সামর্থ্য অনুযায়ী দান করি। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘দান মানুষের পাপ মিটিয়ে দেয়, যেমন পানি আগুন মিটিয়ে দেয়। ’ -সুনানে তিরমিজি

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।