ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

রোজায় কিছুটা স্বস্তিতে থাকেন জেরুজালেমের মুসলমানরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৪ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৭
রোজায় কিছুটা স্বস্তিতে থাকেন জেরুজালেমের মুসলমানরা রোজায় কিছুটা স্বস্তিতে থাকেন জেরুজালেমের মুসলমানরা

জেরুজালেমের ছোট্ট একটি গলি। রাস্তা পাশে হাটতে গিয়ে একটু পর পরই আপনি থেমে যাবেন। রাস্তার সৌন্দর্য দেখলে আপনার মন ভরে যাবে।

রাস্তার দু’পাশে সারি সারি গাছ। ওপরে টানানো রয়েছে বিভিন্ন ব্যানার।

আরবিতে সেখানে লেখা রয়েছে বিভিন্ন বাণী। সবমিলে যেন শিল্পির তুঁলিতে আঁকা এক শহর। বন ও নৈসর্গিক প্রকৃতিতে ভরা পাহাড়ি জীবনের প্রতিকৃতি উঠে এসেছে।  

এক বৈচিত্র্যময় শহর জেরুজালেম। মধ্যপ্রাচ্যের একটি ঐতিহাসিক শহর। শহরটি ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলিমদের কাছে মহাপবিত্র। জেরুজালেম ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রচারিত ও ঘোষিত রাজধানী। তবে ফিলিস্তিনি সরকারও এই শহরে পূর্বাংশকে দেশের ভবিষ্যৎ রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেছে।  

বর্তমানে জেরুজালেম শহরটি ইসরায়েল দ্বারা শাসিত থাকা স্বত্ত্বেও বিশ্বের বেশিরভাগ রাষ্ট্র ও সংস্থা (যার মধ্যে জাতিসঙ্ঘও রয়েছে) এই শহরকে কোনো দেশের রাজধানী বলে স্বীকৃতি দেয়নি।  

জেরুজালেম বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলোর অন্যতম। এখানেই মসজিদে আকসা মসজিদ অবস্থিত। জেরুজালেমের দীর্ঘ ইতিহাসে শহরটি কমপক্ষে দু’বার ধ্বংস হয়েছে, ২৩ বার অবরোধ হয়েছে, ৫২ বার আক্রমণ হয়েছে এবং ৪৪ বার দখল এবং পুনর্দখল হয়েছে।  

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্টের তথ্য অনুযায়ী জেরুজালেমে মুসলমান মুসলমানদের বসবাসের হার ২৮ শতাংশ। সেই জেরুজালেমের অলিগলি রমজান মাসে অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়। রমজানে রাস্তার দু’পাশে বসে হরেক রকমের মন মাতানো খাবারের দোকান। রমজানে ছোট বাচ্চারা নামাজের জন্য সুন্দর সুন্দর পোশাক পরিধান করে মসজিদে যায়। সবমিলে রমজানে অন্য এক পরিবেশ বিরাজ করে জেরুজালেমে।  

পূর্ব জেরুজালেমের আল আকসা মসজিদ কম্পাউন্ডে রমজান ছাড়া অন্য মাসে প্রবেশের অনুমতি থাকে না। তবে রমজানের শেষ পর্যন্ত ইহুদি এবং অমুসলিম দর্শনার্থীদের ছাড়া সব মুসলমানদের জন্য প্রবেশ উম্মুক্ত করে দেয় ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ। আল আকসা মসজিদে মুসলিম প্রার্থনাকারী ছাড়া অমুসলিমদের প্রবেশে যে নিষেধাজ্ঞা তা শুধু রমজানেই বহাল থাকে। অন্য সময় তাদের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হয় আল আকসা মসজিদ। যদিও মুসলমানদের সেখানে যেতে ঘাটে ঘাটে বাঁধা প্রদান করা হয়। যাতে মুসলমানরা নিরুৎসাহিত হয়।

রোজায় কিছুটা স্বস্তিতে থাকেন জেরুজালেমের মুসলমানরা
পূর্ব জেরুজালেমের পুরনো অংশে আল আকসা মসজিদের অবস্থান। ১৯৬৭ সালে ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়। সেই থেকে আল আকসায় ইহুদি এবং অমুসলিমরা প্রবেশ করতে পারলেও মুসলমানদের নামাজের অনুমতি নেই রমজান ছাড়া অন্য মাসে।  

সে কারণে রমজানের আল আকসায় নামাজ আদায়ের জন্য মুসলমানদের ঢল নামে। চলতি রমজানের প্রথম জুমার আদায়ের জন্য হাজির হয়েছিলেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি মুসল্লি।

পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ফিলিস্তিনিরা যাতে পশ্চিম তীর থেকে সহজে ইসরাইল অধিকৃত জেরুজালেমে যাতায়াত করতে পারেন- সে জন্য ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ নিয়মকানুন কিছুটা শিথিল করে দেয়। বিশেষ করে জুমার নামাজ আদায় করার সুবিধার্থে এটা করা হয়।

আল আকসা মসজিদে জুমার নামাজের জন্য সব বয়সি নারী এবং চল্লিশোর্ধ ফিলিস্তিনি পুরুষদের কোনো এন্ট্রি পারমিট লাগে না। তবে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা থেকে আল আকসায় জুমার নামাজ পড়ার খুব বেশি মানুষকে আসতে দেওয়া হয় না। গাজা থেকে এবার রমজানে জন্য ৫৫ বছরের বেশি বয়সি ১০০ জন ফিলিস্তিনি নারী ও পুরুষকে অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ।

সব প্রতিবন্ধকতা এবং বিধি-নিষেধ সত্ত্বেও আল আকসায় নামাজ আদায় করা করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আসেন মুসলমানরা।

রমজানকে কেন্দ্র করে রাস্তাঘাট সাজানো জেরুজালেমবাসীর প্রাচীন ঐতিহ্য। নিজেদের ও বিদেশি দর্শনার্থীদের জন্য তারা এটি করে থাকেন।

জেরুজালেমের মুসলমানরা সামান্য কিছু মুখে দিয়ে ইফতার শেষে দ্রুত মাগরিবের নামাজে চলে যান। মাগরিবের নামাজ শেষ হতে না হতেই পরিবারের লোকেদের সঙ্গে নিয়ে অসম্পূর্ণ ইফতার খেতে বসেন।

দর্শনার্থী ও মুসাফিরদের ইফতার করিয়ে তারা বেশ আনন্দ পান। প্রতিবেশির খোঁজ-খবর নেওয়া এবং মুসলমানের সাহায্যে নিজের সর্বোচ্চ বিলিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে জেরুজালেমের মুসলমানদের দৃষ্টান্ত মেলা ভার। রমজানে তাদের এই প্রচেষ্টা শতগুণে বেড়ে যায়। অনেকেই সারামাস মেহমান সঙ্গে নিয়ে ইফতার করেন। সবার একান্ত চেষ্টা থাকে কেউ যেন রোজার মাসে খাবারে কষ্ট না পায়।

এ জন্যে সম্মিলিত ও ব্যক্তিগতভাবে তারা এ মাসে দরিদ্র মুসলমানদের বিভিন্ন ধরনের খাদ্য দিয়ে সহায়তা করেন। জেরুজালেমে ইসলামের বিজয়ের পর থেকে জেরুজালেমবাসী এই অভ্যাসের ওপর আমল করে আসছেন।  

রমজানে জেরুজালেম ও আল আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণ বিদেশি পর্যটক দ্বারা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। ফলে নামাজে মুসল্লিদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। এতে করে জেরুজালেমের মুসলিম ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা ভালো হয়। অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা থেকে তারা মুক্তি পায়। রমজানে জেরুজালেমবাসী অধিকসংখ্যক মুসলমানদের উপস্থিতির কারণে নিরাপত্তা বোধ করেন।

-সাসা পোস্ট অবলম্বনে

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২০১৬ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।