ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

অভাবের তাড়নায় পান্তা ভাতে সাহরি, স্যালাইনে ইফতার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২১ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৭
অভাবের তাড়নায় পান্তা ভাতে সাহরি, স্যালাইনে ইফতার চরাঞ্চলের দু’একজন জোতদার কৃষক ছাড়া প্রায় সবাই ইফতারের সুস্বাদু খাবার থেকে বঞ্চিত

সিরাজগঞ্জ: ‘হ্যাশ রাইতে পান্তা দিয়্যা সেহরি খাইয়্যা রোজা থাহি। হন্ধ্যাবেলা ওই পান্তা খাইয়্যাই এফতার করি। রাইতে শাক-পাতা দিয়া গরম ভাত রাইন্ধ্যা কিছু খাই। আর কিছু ভাতে পানি ঢাইল্যা পান্তা কইরা থুইয়্যা দেই। এইভাবেই আমরা রোজা থাহি।’

সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার যমুনার চরাঞ্চল কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বেড়াবাড়ী চরের সত্তোর্ধ বয়সী বিধবা আনোয়ারা বেগম। কেমন কাটছে রমজান মাস? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

 

তিনি বলেন, ‘বছরের ব্যাবাক দিনের মতোই আমাগোরে রোজার দিনও কাটে। সারাদিন অন্যের বাড়ীর কাজকর্ম কইরা দিলে এক-দেড় সের চাল পাই। এ দিয়্যে ভাতের যোগাড় হয়। আর চরের শাক-পাতা তুইল্যা নিত্যিদিন তরকারির অভাব মিটাই। ’

একই ইউনিয়নের ছোট কয়ড়া গ্রামের মো. ফজেল। দিনভর যমুনার চর থেকে শাক-পাতা তুলে তা নিয়ে শহরে বিক্রি করেন। এভাবেই চলে তার সংসার।

রমজানের ইফতার আর সাহরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শহর থিইক্যা ৫ ট্যাহা দিয়্যা স্যালাইন কিনা আনি। সন্ধ্যায় পরিবার নিয়্যা স্যালাইন দিয়াই এফতার করি। রাইতে ভাত খাই। আর বেইন্যা রাইতে (সাহরি) পান্তা খাই। ’

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) কাওয়াকোলা ও মেছড়া ইউনিয়নের বেড়াবাড়ী, ছোট কয়ড়া, বন্নি, বড় কয়ড়া গটিয়ার চর ঘুরে আধুনিকতার ছোঁয়া বঞ্চিত মানুষগুলোর সাথে কথা বলে তাদের ইফতার-সাহরি ও রমজানের দৈনন্দিন জীবন প্রসঙ্গে জানা যায় এমন তথ্য।

বেড়াবাড়ী গ্রামের দিনমজুর গুটু শেখ, আবদুর রশিদ, ফারুক ও খোদেজা বেগম, ছোট কয়ড়া গ্রামের রেজাউল করিম, দুধ বিক্রেতা ফারুক, কৃষি দিনমজুর শামছুল, বন্নির চরের কৃষক আবু বক্কার, আবদুল করিমসহ কথা হয় অর্ধ শতাধিক চরাঞ্চলবাসীর সাথে।
চরাঞ্চলের দু’একজন জোতদার কৃষক ছাড়া প্রায় সবাই ইফতারের সুস্বাদু ও আধুনিক খাবার থেকে বঞ্চিত
তারা জানান, চরাঞ্চলের দু’একজন জোতদার কৃষক ছাড়া প্রায় সবাই ইফতারের সুস্বাদু ও আধুনিক খাবার থেকে বঞ্চিত। এসব মানুষ ইফতারে খেঁজুর, ফল-ফলাদি, ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, নিমকী ও জিলাপীর মুখরোচক খাবার কোনোদিনই খেতে পান না।

অন্যান্য দিনে যেমন সকালে পান্তাভাত খেয়ে এরা কাজে বের হন। রমজানের দিনও পান্তা দিয়েই সাহরি করেন।

চরাঞ্চলবাসীর সাথে কথা বলে আরও জানা যায়, চরে বিত্তশালী বা মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যা খুবই কম। এখানকার ৮০ ভাগ মানুষ দরিদ্র কৃষক আর দিনমজুর। শহর থেকে বেশি দামের মুখরোচক ইফতারি এরা কখনোই সংগ্রহ করতে পারেন না।

তাছাড়া চরাঞ্চলে কোনো বৃহৎ হাট বা বাজার নেই। দু’একটি ছোটখাট মুদি দোকানে ছোলা আর বুন্দিয়া পাওয়া গেলেও দাম বেশির কারণে সবাই তা কিনতে পারেন না। অপরদিকে দারিদ্র্যতার কারণে সাহরিতেও ভালোমন্দ খেতে পান না অধিকাংশ মানুষ।

মেছড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ মাস্টার বাংলানিউজকে জানান, চরের প্রায় ৭৫ ভাগ মানুষ হতদরিদ্র। এদের দৈনন্দিন জীবন চালানোই কষ্টকর। উন্নতমানের খাবার পাবে কোথায়? অধিকাংশ মানুষ দু’বেলা পান্তা একবেলা গরম ভাত খেয়ে দিনাতিপাত করে।

কাওয়াকোলা ইউনিয়নন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুদল আলীম বাংলানিউজকে বলেন, কাওয়াকোলা ইউনিয়নের ১৭টি গ্রামই যমুনার চরাঞ্চলে অবস্থিত। এ অঞ্চলের প্রায় ৬০ ভাগ মানুষই দরিদ্র।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২১২১ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।