ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

আসুন, জবান ও মনের রোজার খবর নিই

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৪ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৭
আসুন, জবান ও মনের রোজার খবর নিই আসুন, জবান ও মনের রোজার খবর নিই

রোজাদারের জবানও যেন রোজা থাকে এটা নিশ্চিত করা দরকার। জবানকে যাবতীয় অন্যায় ও বাজে কথা বলা থেকে সংযত রাখা। জবান দ্বারা মিথ্যা কথা, চোগলখুরি, গিবত, কটূ বাক্য, অনৈতিক ও অশ্লীল কথা ইত্যাদি যেন বের না হয়- সেদিকে খেয়াল রাখা।

মিথ্যাকে সকল পাপের মূল বলা হয়েছে। রোজাদারকে অবশ্যই মিথ্যা কথা পরিহার করার অভ্যাস গড়ে তোলতে হবে।

একজন মুসলমান অপর মুসলমানকে কষ্ট দিতে পারে না। হাদিসে আছে, সেই প্রকৃত মুসলিম যার জবান ও হাত দ্বারা অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে।

ঝগড়া করা মুমিনের কাজ নয়। বিশেষত রোজাবস্থায় এটি মোটেও শোভনীয় নয়। হাদিসে আছে, রোজা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ। সুতরাং যখন তোমাদের কারও রোজার দিন আসে তখন সে অশ্লীল কথা-বার্তা বলবে না এবং গণ্ডগোল করবে না। তাকে যদি কেউ কটূ কথা বলে অথবা তার সাথে লড়াই করতে চায়- তথন সে যেন তাকে বলে, আমি রোজাদার। এ বলে ঝগড়া থেকে বিরত থাকবে। -সহিহ বোখারি ও সহিহ মুসলিম

গিবত একটি সমাজ বিগর্হিত অনৈতিক কাজ। এতে সমাজের মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ নষ্ট হয়। এটি একে অপরকে বিদ্বেষ ভাবাপন্ন করে তোলে। পরিণতিতে একে অপরে মারামারি-কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়ে। ইসলামি শরিয়তে এটি চরমভাবে নিন্দিত।  

নবী করিম (সা.)-এর যুগে দু’জন নারী রোজা রেখে ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে। তাদের মৃতপ্রায় অবস্থা দেখে সাহাবিরা নবী করিম (সা.)-এর নিকট তাদের বিষয়টি জানতে চাইলেন। নবী করিম (সা.) তাদের (মহিলা) কাছে একটি পেয়ালা পাঠিয়ে বললেন, তারা যেন এতে বমি করে। বমি করার পর দেখা গেল তাতে গোশতের টুকরা ও তাজা রক্ত। এর কারণ ব্যাখ্যা করে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তারা হালাল রুজি দ্বারা রোজা রেখেছে বটে কিন্তু গিবত করে হারাম ভক্ষণ করেছে। তাই তাদের এ কঠিন অবস্থা। বাস্তবেও তাই দেখা যায় যে, রোজা মুত্তাকিদের জন্য কোনো কষ্টের বিষয় নয়- কিন্তু ফাসিকদের জন্য রোজা বড়ই কষ্টের।
 
আল্লাহতায়ালা গিবতকে আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সাথে তুলনা করে সূরাতুল হুজুরাতের ১১ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘তোমাদের কেউ যেন অপরের গিবত না করে। তোমাদের কেউ কি অপর মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? এটা তোমরা ঘৃণা করবে। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ তওবা কবুলকারী এবং অতীব দয়াবান। ’

একদা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কয়েকজন লোককে দাঁত খিলাল করতে বললেন। তারা বলল, আমরা তো আজ গোশত খাইনি। নবী করিম (সা.) বললেন, অমুকের গোশত তোমাদের দাঁতে বিদ্ধ হয়েছে। (পরে) জানা গেল, তারা সেই লোকের গিবত করেছিল।
 
রমজান মাসের রোজার ফজিলত অর্জন করতে হলে একজন মুমিনকে অবশ্যই গিবত পরিত্যাগ করতে হবে। ইসলাম মনে করে, শুধুমাত্র রমজান মাসেই গিবত পরিত্যাগ করবে তা নয় বরং রমজান মাসে এটি পরিত্যাগের চর্চা করে পরবর্তী ১১ মাসে তথা সারা জীবনে তা বাস্তবায়ন করবে।

মনের রোজা
মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রাজা হলো- হৃদয় বা মন। এ মূল অঙ্গ রোজা রাখলে অন্যসব অঙ্গের রোজা রাখা সহজ হয়ে যাবে। কেননা দেহের রাজা নামক হৃদয়ের নির্দেশ মোতাবেক অন্যসব অঙ্গ পরিচালিত হয়।  

হজরত নুমান ইবনে বাশির থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘জেনে রাখো, দেহের মধ্যে এমন একটি গোশতের টুকরা আছে যা ভালো হলে সারাদেহ ভালো হয়ে যাবে এবং তা খারাপ হলে সারাদেহ খারাপ হবে। শোন! তা হলো হৃদপিণ্ড তথা অন্তর। ’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম

সুতরাং মুমিনের অন্তর সর্বদা ঈমান বিধ্বংসী শিরক, ভ্রান্ত বিশ্বাস, নোংরা চিন্তা-ভাবনা, হীন পরিকল্পনা ইত্যাদি নিকৃষ্ট উপাদান থেকে মুক্ত থাকবে।

মুমিনের অন্তর অহংকার থেকে মুক্ত থাকবে এবং সর্বদা বিনয়ী থাকবে। কারণ, বিনয়ী মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে এবং তাকে শ্রদ্ধার পাত্র করে। অহংকার ন্যায়, হক ও সত্য প্রত্যাখ্যান করতে এবং মানুষকে অবজ্ঞা ও ঘৃণা করতে শেখায়। ফলে সে সমাজে ঘৃণার পাত্র হিসেবে পরিগণিত হয়। অহংকারী ব্যক্তি ইহকালেও ঘৃণিত এবং পরকালেও ঘৃণিত।

এ প্রসঙ্গে নবী করিম (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক দাম্ভিক অহংকারী জাহান্নামবাসী হবে। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম

অপর এক হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি মনে মনে গর্বিত হয় এবং চলাফেরায় অহংকার প্রদর্শন করে সে ব্যক্তি যখন আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে তখন আল্লাহ তার প্রতি ক্রোধান্বিত থাকবেন।

মুমিনের অন্তর হিংসা থেকে মুক্ত থাকবে। কেননা একজন মুমিনের অন্তরে ঈমান ও হিংসা একত্রিত হতে পারে না। রোজাদারের অন্তরে বিদ্বেষ থাকতে পারে না। হাদিসে আছে, বিদ্বেষ হল মুণ্ডনকারী। তা দ্বীন মুণ্ডন (ধ্বংস) করে ফেলে। মুমিনে অন্তরে কৃপণতার স্থান থাকবে না। কারণ একজন মুমিনের অন্তরে কখনই ঈমান ও কৃপণতা একত্রিত হতে পারে না।
মুমিনের অন্তরে অপর মুমিন সম্পর্কে সর্বদা ভালো ধারণা থাকবে। অপর মুমিন সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করবে না। কোনো মানুষের অনিষ্টের চিন্তা রোজাদারের মনোজগতে কখনো উদিত হতে পারে না।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৪ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।