কদরের রাতের মর্যাদা প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমের সূরা কদরে বলা হয়েছে, ‘হাজার মাস (৮৩ বছর ৪ মাস) ইবাদতে যে পূন্য হয়, কদরের এক রাতের ইবাদতে তার চেয়ে উত্তম বিনিময় পাওয়া যায়। ’
এই রাতে মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে মাগফিরাত, নাজাত ও ক্ষমা পাওয়ার পরম সুযোগ লাভ করে।
শবেকদর শুধু ভারতীয় উপমহাদেশে নয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হয়।
মরক্কো
মরক্কোতে এই রাতে বাচ্চারাই সবচেয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। অভিবাবকরা এই রাতে বাচ্চাদের জীবনের প্রথম রোজা রাখতে উদ্বুদ্ধ করেন। উৎসাহিত করতে তাদের নতুন পোশাক কিনে দেন, মেহেদি দ্বারা তাদের হাত সজ্জিত করে দেন।
এমনও প্রচলন আছে, রোজা রাখে না বলে বাচ্চাদেরকে রমজানে আস্ত একটি ডিম খেতে দেওয়া হয় না। ব্যতিক্রম শুধু এ রাতে। এ রাতে তাদেরকে পুরো একটি ডিম খেতে দেওয়া হয়। তারা রোজা রেখেছে বলে এটি তাদের প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন।
তাছাড়া বাচ্চাদের প্রথম রোজার কারণে ‘কুসকুস’ নামে এক ধরনের খাবার তারা রান্না করে মসজিদের গেটে গরিব মিসকিনদের মাঝে বিতরণ করেন। কুসকুস হচ্ছে, উত্তর আফ্রিকার জনপ্রিয় খাবার। সুজির ছোট ছোট সিদ্ধ বল দিয়ে তৈরি করা হয় এই খাবার। সাধারণত তরকারির ওপরে এটা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সমগ্র উত্তর আফ্রিকার রন্ধনশৈলীতে কুসকুসের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে আসন দখল করে আছে।
মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, মৌরিতানিয়া ও লিবিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের একটা ক্ষুদ্র অংশ এবং সিসিলির তরাপানিতে কুসকুস খুবই জনপ্রিয়।
কদরের রাতে ধূপ, পারফিউম, আতর ও পোশাকের ব্যবসা বেশ জমজমাট হয়। মরক্বোবাসী কদরের রাতে মৃত আত্মীয়-স্বজনের কবর জিয়ারত করেন। আত্মীয়দের নামে দান-সদকাও করা হয়।
আলজেরিয়া
আলজেরিয়াতে শবেকদরে বাচ্চাদের প্রথম রোজা পালন করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়। এ রাতে প্রতি ঘরে ঘরে বিশেষ ধরনের শরবত বানানো হয়। যেসব বাচ্চা প্রথম রোজা রেখেছে তাদেরকে তা খাওয়ানো হয়।
পানি, মিষ্টি ও ফুলের পানি দ্বারা তৈরি এই বিশেষ শরবতের পাত্রে রেখে দেওয়া হয় একখানা স্বর্ণ বা রূপার টুকরো। এটা তাদের রীতি।
শবেকদরে বিভিন্ন কল্যাণ সমিতি ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যৌতুকবিহীন গণ বিয়ের আয়োজন করা হয়। এ কাজটি করা হয় খুব গুরুত্বের সঙ্গে। অর্থাভাবে যাদের বিয়ে হয় না, তাদেরকে গণ বিয়েতে শামিল করা হয়। বিয়েতে বর ও কনের পরিবারের মেহমানসহ উপস্থিত অতিথিতিদের আপ্যায়ন হয়।
খাবারের তালিকায় থাকে হরেক রকম মূল্যবান খাবার ও কোমল পানীয়। সর্বশেষ পরিবেশন করা হয় মিষ্টি।
বিয়ে শেষে নবদম্পতির হাতে তুলে দেওয়া হয় নানা ধরনের উপহারের পাশাপাশি তাদের পূনর্বাসনের জন্য দেওয়া হয় মূল্যবান বিভিন্ন সামগ্রী।
আলজেরিয়ায় যেসব বাচ্চা প্রথম রোজা রেখেছে শবেকদরে তাদেরকেও দেওয়া হয় নতুন পোশাক ও মূল্যবান উপহার সামগ্রী।
তিউনিসিয়া
তিউনিসিয়াতে শবেকদরে অনেকে বিয়ে করেন এবং এই বিয়েকে অত্যন্ত বরকতময় বলে মনে করা হয়। তিউনিসিয়ায় শবেকদরে বাচ্চাদের খতনা করানো হয় এবং বড় করে অনুষ্ঠান করে সবাইকে দাওয়াত খাওয়ানো হয়। এ উপলক্ষে বাচ্চাদের নুতন পোশাক কিনে পোশাকের পকেটে টাকা-পয়সা রেখে দেওয়া হয়। যাতে তারা নতুন পোশাক গায়ে দিয়ে পকেটে হাত দিয়ে টাকা পেয়ে দিগুণ খুশি হয়।
তিউনিসিয়ানরা শবেকদরে রাতে মৃত আত্মীয়-স্বজনদের কবর জিয়ারত করে থাকেন। তাদের জন্য ইসালে সওয়াব করে থাকেন।
লিবিয়া
লিবিয়াতে শবেকদরে ইবাদতের চেয়ে খাবারের প্রচলনই বেশি। গ্রামের মহিলারা এ রাত উপলক্ষ্যে তৈরি করেন ‘বাজিন’ নামক এক বিশেষ খাবার। যা তাদের কাছে খুবই জনপ্রিয় স্বাস্থ্যসম্মত বলে পরিচিত। আর শহরের মহিলারা রান্না করেন কুসকুস। এটিও তাদের কাছে খুব প্রিয় খাবার।
মৌরিতানিয়া
মৌরিতানিয়াবাসী শবেকদরে বিভিন্ন রকম ধূপ জ্বালায়। ঘরগুলোকে আতর দ্বারা সুবাসিত করে। অারেকটি অবাক করার মতো কাজ তারা করে। সেটা হলো- তারা শবেকদরে সুই গরম করে বাচ্চাদের শরীরে হালকা ছ্যাঁকা দেয়, যাতে বাচ্চাদেরকে (তাদের ধারণা অনুযায়ী) শয়তান ধরতে না পারে।
** হাজার মাসের চেয়ে মর্যাদার রাত লাইলাতুল কদর
-আল আরাবি আল জাদিদ অবলম্বনে
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৩ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
এমএইউ/