মূলত শতবর্ষাধিক বছর আগে এই মাঠে সোয়া লাখ লোকের জামাত হওয়ার কারণে মাঠ ও সংশ্লিষ্ট এলাকার নাম হয়েছে সোয়ালাখিয়া. যা বর্তমানে শোলাকিয়া নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুয়ায়ী, ১৭শ’ শতাব্দীর শেষার্ধে আধ্যাত্মিক সাধক ও ধর্ম প্রচারক সৈয়দ আহাম্মদ কিশোরগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার বর্তমান পৌরসভাস্থ কোর্ট শোলাকিয়ার একটি সম্পন্ন মুসলিম বাড়িতে এসে উপস্থিত হন।
সাধক সেখানে পৌঁছে ইসলাম প্রচার-প্রসারে মানুষের সহযোগিতা কামনা করেন। কিন্তু উক্ত স্থানটি ছিলো- গভীর অরণ্যে ঢাকা জনমানবহীন ভয়ানক জীবজন্তুর আবাসস্থল। ফলে এলাকাবাসী তাকে সেখানে যাওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু তাকে কিছুতেই ফেরানো যাচ্ছিল না। বাধ্য হয়ে পাড়াপ্রতিবেশীগণ দা, বল্লম ইত্যাদি অস্ত্র নিয়ে সকলে মিলে সৈয়দ আহাম্মদকে সঙ্গে করে রাজাবাড়িয়ায় পৌঁছে বন-জঙ্গল কেটে ক্রমাগত অরণ্যের ভেতরে প্রবেশ করতে থাকেন। হঠাৎ দেখা গেল গোলাপী পাঁচ পাপড়ীযুক্ত একপ্রকারের ফুলগাছ দ্বারা বেষ্টিত একখানা কবর, যা বনের নির্জনেও সুরক্ষিত।
সৈয়দ আহাম্মদ লোকদের জানালেন এখানেই তিনি অবস্থান করবেন। তার সাথীগণ এই গভীর অরণ্যে হিংস্র জন্তু জানোয়ারের আক্রমণের আশঙ্কা করছিলেন। তাই তারা তাকে সেখানে রেখে যেতে চাননি। কিন্তু সৈয়দ আহাম্মদকে কোনোভাবেই তাদের সঙ্গে আনতে না পেরে অবশেষে কবরখানার পাশে বাঁশ ও গাছের পাতা দ্বারা একটি ঘর তৈরি ও আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা করে দেন স্থানীয় লোকজন।
সঙ্গীগণ সৈয়দ আহাম্মদকে একা রেখে চলে এলে ওই রাতেই শুরু হয় প্রচণ্ড ঝড় বৃষ্টি। অনেক গাছপালা ভেঙ্গে যায়। ঝড়ের পর উদ্বিগ্ন এলাকাবাসী জঙ্গলে প্রবেশ করে দেখতে পেলেন সৈয়দ আহাম্মদ ও তার কুড়েঘর সম্পূর্ণ অক্ষত ও তিনি জিকিরে মশগুল। এমন দৃশ্য দেখে সকলে তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তার কারামত ও আধ্যাত্মিকতার কথা ক্রমশঃ ছড়িয়ে পড়তে থাকে ও বন-জঙ্গলে পূর্ণ এলাকাটি ক্রমে ক্রমে জনবসতিতে পরিণত হয়।
মসনদে আলা বীর ঈসা খাঁর অধঃস্তন বংশধর জঙ্গলবাড়ীর জমিদার ও হয়বতনগর জমিদার সে সময় সৈয়দ আহাম্মদের কাজে নানাভাবে সহযোগিতা করেন। তাদের সহযোগিতায় তিনি সেখানে ভূসম্পত্তির মালিক হন। উক্ত সম্পত্তির মালিক হওয়ার পর তিনি নিজ হুজরার নিকটে একটি বাড়ি তৈরি করেন। বর্তমানে শোলাকিয়া সাহেব বাড়ি জামে মসজিদটি সে সময় সৈয়দ আহাম্মদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। তিনিই এ অঞ্চলে সর্বপ্রথম জুমার নামাজের জামাতের ব্যবস্থা করে ইমামতি করেন বলেও লোকশ্রুতি রয়েছে।
১৮২৮ সালে সৈয়দ আহাম্মদ জঙ্গলবাড়ীর জমিদার ও হয়বতনগর জমিদারের সহযোগিতায় ও তাদের উপস্থিতিতে তার নিজের মালিকানাধীন সম্পত্তিতে ঈদের জামাতের মাঠ প্রতিষ্ঠা করে তিনিই সর্বপ্রথম ঈদের জামাতের ইমামতি করেন সে দিনই তিনি ঈদের জামাতের মুনাজাতে বলেছিলেন, ‘হে খোদা! এই ঈদগাহ মাঠে যেন ভবিষ্যতে সোয়ালাখ মুসুল্লির সমাগম হয়। এই সোয়ালাখ শব্দ অনুসরণে অনেকের মতে বর্তমানে ঈদগাহ মাঠ ও তার পার্শ্ববর্তি এলাকার নামকরণ করা হয়েছে।
দিন দিন এই মাঠের মুসল্লিদের সমাগম বাড়তে থাকে এবং মাঠের জায়গা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তাই হয়বতনগরের জমিদার উক্ত মাঠ সংলগ্ন তার নিজস্ব সম্পত্তি ঈদগাহ মাঠের জন্য ওয়াকফ করেন। ব্যক্তিগত দান, প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠনিক ও সরকারি সহযোগিতায় এই ঈদগাহ মাঠের বিশালতা ক্রমেই বাড়ছে। সেই সঙ্গে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের সুনাম ও সুখ্যাতি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০১৭
এমএইউ/