ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

কখন রোজা রাখা যাবে না

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৫ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৮
কখন রোজা রাখা যাবে না কখন রোজা রাখা যাবে না

আল্লাহ তায়ালা রমজানের রোজা প্রত্যেক সক্ষম মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ করেছেন। তবে এ থেকে সাময়িকভাবে হলেও ছাড় দেওয়া হয়েছে রোগী ও মুসাফিরকে। অসুস্থতা যেমন সিয়াম পালন থেকে ছাড় পাওয়ার একটি কারণ, তেমনি আরেক কারণ সফর। 

এ প্রসঙ্গে কুরআন মজিদে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি এ মাস প্রত্যক্ষ করবে, তাকে রোজা রাখতে হবে। আর যে ব্যক্তি অসুস্থ হয়, কিংবা সফরে থাকে সে অন্যান্য দিন থেকে এ সংখ্যা পূরণ করবে।

(সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫) 

তবে সালাত ও সিয়ামে ছাড় পাওয়ার জন্য সফরের দূরত্ব ও মেয়াদ বিবেচ্য বিষয়। নামে মাত্র ভ্রমণ ও প্রবাসজীবনকে যেন ইবাদতে বিশেষ সুবিধা লাভের কারণ হিসেবে কেউ ব্যবহার করতে না চায়, সে জন্য এসব শর্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।
উল্লেখযোগ্য দূরত্ব একটি শর্ত হিসেবে গণ্য। হেঁটে স্বাভাবিক গতিতে তিনদিনে যে পরিমাণ পথ অতিক্রম করার রীতি তখনকার আরবে প্রচলিত ছিল, সেটাকে এ ব্যাপারে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এই তিনদিনের পথ বা তিন মঞ্জিল পরবর্তীকালের পরিমাপে ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার সাব্যস্ত করা হয়। তাছাড়া কুরআন মজিদের ‘আলা সফর’ শব্দ থেকে অনুমিত হয়, নিছক প্রবাসজীবন নয়, বরং চলমান অবস্থা শর্ত।  

তাই সফরকালে উল্লেখযোগ্য সময় বা কমপক্ষে ১৫ দিন যাত্রাবিরতির কারণে সালাতে কসর ও সিয়ামে ছাড়ের হুকুম রহিত হয়ে যায়। সফর ক্লান্তিকর হওয়াই স্বাভাবিক। জাগতিক ক্রিয়াকলাপের প্রয়োজনে মানুষকে সফরে যেতেই হয়।  

তাই ইসলামী শরিয়তে মুমিন বান্দাদের জন্য সফরকালে সালাত ও সিয়াম আদায়ে ছাড় দেওয়া হয়েছে। যদি কারো সফর ব্যতিক্রমী হিসেবে আরামদায়ক হয়ও, তবু তার জন্য এ সুবিধা রহিত হবে না। একজন তাবেয়ী (যারা নবুয়তি যুগের পরে এসেছেন) এ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন হজরত ওমর ফারুককে। জবাবে হজরত ওমর ফারুক (রা.) বলেন, তুমি যেমন আমাকে প্রশ্ন করেছ, আমিও তেমনি আল্লাহর রাসুলকে এ প্রশ্ন করেছিলাম।  

বলেছিলাম, হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, যখন তোমরা সফরে থাকবে, তখন তোমরা যদি আশঙ্কা করো যে কাফেররা তোমাদের বিপদে ফেলবে, তাহলে নামাজে কসর করায় তোমাদের কোনো অন্যায় হবে না। এখন তো আমরা নিরাপদ হয়ে গেছি। জবাবে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, এটা আল্লাহ তায়ালার দান। এ দান তোমরা গ্রহণ করো।  

এ জন্য ইমাম আবু হানিফার মতে সফরে নামাজের কসর করা বাধ্যতামূলক। অবশ্য অন্য ইমামরা তা ঐচ্ছিক বলেছেন। কিন্তু সফরে রোজা রাখা না রাখা দু’টিরই অনুমতি আছে, এ ব্যাপারে সবাই একমত। কোনটি ভালো, রাখা নাকি না রাখা, সে সম্পর্কে দুই ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়।  

এক হাদিসে দেখা যায়, আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, সফরে রোজা রাখা খুব ভালো। কিন্তু আরেক হাদিসে তিনি ইরশাদ করেন, সফরে রোজা রাখা নেক কাজ নয়।  

মহানবী (সা.) এর এ উক্তির প্রেক্ষাপট থেকে বিষয়টি পরিষ্কার হয়। তা হলো এক সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.) এক জায়গায় লোকজনের ভিড় দেখে কারণ জিজ্ঞেস করলেন। সেখানে একজনকে ছায়ায় রেখে সেবা করা হচ্ছে। তার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলেন লোকটি রোজা রাখার কারণে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।  

তখন তিনি বললেন, সফরে রোজা রাখা নেক কাজ নয়। আরেক সফরে সাহাবায়ে কেরামের কেউ কেউ রোজা রাখলেন, আবার কেউ কেউ রোজা রাখলেন না। এক জায়গায় যাত্রাবিরতি করলে রোজাদাররা ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। আর যারা রোজা রাখেননি, তারাই তাবু টানানো, বাহনগুলো সামলানো ইত্যাদি সব কাজ করলেন।  

তখন মহানবী (সা.) ইরশাদ করলেন, বেরোজাদারেরা সব পূণ্য হাসিল করল। দ্বিতীয় হিজরির রমজান মাসে সংঘটিত হয় বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধগুলোর একটি, যা বদরের যুদ্ধ নামে পরিচিত। যে  যুদ্ধ প্রসঙ্গে সাহাবায়ে কেরাম বর্ণনা করেন, আমরা রোজা রেখেই রওনা হয়েছিলাম। চলতে চলতে যখন শত্রু বাহিনীর একেবারে কাছে পৌঁছলাম, তখন আল্লাহর রাসুল আমাদের রোজা না রাখার আদেশ দিলেন। তিনি নিজেও রোজা রাখলেন না। আরেক জিহাদ প্রসঙ্গে সাহাবায়ে কেরাম বলেন, আমরা রোজা রেখেই রওনা হলাম। কয়েকদিনের সফর শেষে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ অবসন্ন হয়ে পড়লো। এ খবর আল্লাহর রাসুলের কাছে গেলে তিনি রোজা ভেঙে ফেললেন এবং সবাইকে রোজা ভেঙে ফেলার আদেশ করলেন। এরপরও কেউ কেউ দিনটি শেষ করতে চাইলেন।  

মহানবী (সা.) এতে অত্যন্ত অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। মোটকথা সফরে রোজা না রাখার অনুমতি আছে। তবে যদি কারো কষ্ট না হয়, তাহলে রোজা রাখা ভালো। আর যদি রোজা রাখার কারণে বেশি কষ্ট হয়, এমন কি সফরের উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে না রাখাই ভালো।  

পরে এই রোজাগুলো আদায় করতে হবে। কিন্তু রোজা না রাখার অনুমতি থাকলেও রমজান মাসের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। এ জন্য প্রকাশ্যে পানাহার করা চলবে না, বরং তা আড়ালে সারতে হবে। ঠিক এই হুকুম কোনো কারণে রোজা নষ্ট হয়ে গেলেও। সে ক্ষেত্রেও দিনের বাকি সময়টুকু রোজাদারের মতোই কাটাতে হবে।

লেখক: বিশিষ্ট মুফাসসিরে কুরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।
চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি


বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৮
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।