ঢাকা: ২০১৩’র ১০ ডিসেম্বরকে জাতিসংঘ নাকি ‘বিশ্ব ডজ’ দিবস ঘোষণা করার কথা ভাবছে! অনুজ এক রিপোর্টারের রসিকতা এটি। এই রসিকতার আড়ালে তার গভীর আক্ষেপও আছে।
দেশের সকল মিডিয়া একযোগে ‘ডজ’র ফাঁদে পড়ায়, অনুজ এই রিপোর্টার লজ্জিত। মিডিয়াকে ‘ডজ’টি কে দিলো? এখানে অবশ্য একটু ইজ্জতের বিষয় আছে! কারণ জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তার কাছে এই ‘ডজ’ খাওয়া। সরকার ও প্রধান বিরোধী দলকে আলোচনার টেবিলে বসাতে জাতিসংঘ মহাসচিব তার প্রতিনিধি অস্কার ফার্ণান্দেস তারানকোকে ৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাঠান।
ঢাকায় বিমান থেকে নামামাত্র মিডিয়ার নজরে চলে যান তারানকো। ঢাকায় এসে তিনি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতের নেতাদের পাশাপাশি সুশীল সমাজ, কূটনীতিক এবং নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকে বসেন। গোপন বৈঠকগুলোতে দেরিতে হলেও গিয়ে হাজির হয়েছে মিডিয়া; এমনকি রাতের বৈঠকও মিডিয়ার নজরের বাইরে গিয়ে তিনি করতে পারেননি। কিন্তু তারানকো বাংলাদেশের সব মিডিয়াকে ফাঁকি দিয়েছেন একেবারে দিন—দুপুরে।
১০ ডিসেম্বর সাড়ে বারোটার দিকে তারানকো হর্ঠাৎই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের সংগে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেন। এর আগে সকালে হোটেল সোনারগাঁওতে ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের সংগে তার বৈঠকে বসার কথা ছিল। কিন্তু সেই বৈঠকটি বাতিল করে তিনি গুলশান অভিমুখে রওনা হয়ে যান। সোনারগাঁও’র বৈঠকটি অনুসরণ করতে যে রিপোর্টাররা উপস্থিত ছিলেন, তাদের কেউ কেউ তারানকোর পিছু নেন। তারানকো ফার্মগেট হয়ে বারিধারার পথ ধরেন। অবরোধ থাকায় পথে যানজট না থাকলেও, তারানকোর গাড়ি বহরের ছল-চাতুরীর কাছে পথেই হার মেনে বসেন পিছু নেওয়া রিপোর্টাররা।
তাদের ফাঁকি দিয়ে তারানকোর গাড়ি চলে যায় গুলশান ১৯৪ রোডে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধিনি নিল ওয়াকারের বাড়িতে। অন্য দুটি গাড়ি এসে ঢোকে বারিধারায় সাত নম্বর রোডের ২৭ নম্বর বাড়িতে। সেখানে থাকেন জাতিসংঘের ঢাকায় নিযুক্ত সিকিউরিটি ইনচার্জ। ঐ এলাকাতেই আছে বাংলাদেশের জাতীয় পাটি’র চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থর বাড়ি। কিন্তু রিপোর্টাররা ধরে নেন ঐ বাড়িটিই আন্দালিব পার্থর। তারা আরো ধরে নেন যে, যেহেতু বাড়িটি পার্থর তাই তার সঙ্গেও তারানকো বৈঠক করতে পারেন। ব্যস, সব টেলিভিশনে ব্রেকিং এবং সদ্য সংবাদ দেওয়া শুরু হয়ে যায়: বারিধারায় পার্থর বাড়িতে তিন দলের সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন তারানকো।
এর মধ্যে কোনো কোনো গণমাধ্যম বলেছে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগে থেকেই বাড়িটিতে অবস্থান করছেন।
দেড়টা থেকে সবাই ব্রেকিং দিতে থাকে আশরাফ-ফখরুল-তারানকো বৈঠক শুরু হয়েছে। টেলিভিশন, অনলাইন পত্রিকা, সংবাদপত্র সবাই নিশ্চিত (!) যে বারিধারাতেই বৈঠকটি হচ্ছে। টেলিভিশন রিপোর্টাররা ঐ বাড়ির সামনে থেকে দফায় দফায় লাইভ খবর দিয়ে যাচ্ছিল। দুই-একজন রিপোর্টারের বক্তব্যে বৈঠকটিতে যোগ দিতে সৈয়দ আশরাফ এবং ফখরুল ঐ বাড়িতে এসেছিলেন কিনা সে ব্যাপারে বিষয়ে সন্দেহ ছিল।
তারা বিভিন্ন অসমর্থিত সূত্রের কথা বলছিলেন। বাকিরা নিশ্চিত করেই বৈঠকে কি ধরনের আলোচনা চলছিল তারও একটা ধারণা দর্শকদের দিয়ে যাচ্ছিলেন।
দুপুর আড়াইটায় বারিধারার বাড়িটি থেকে যখন তারানকোর গাড়ি বের হয়, তখন রিপোর্টাররা বৈঠক হওয়ার বিষয়ে আরো নিশ্চিত দাবি করতে থাকেন। গাড়িটিতে তারানকো’র প্রটোকল কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি গাড়ি নিয়ে সোনারগাঁও হোটেলে চলে আসেন। সাড়ে তিনটা’র দিক থেকে রিপোর্টাররা যখন দেখেন যে বারিধারা’র বাড়ি থেকে কেউ বের হচ্ছেন না, তখন তাদের মধ্যে প্রথমবারের মতো সংশয় তৈরি হতে থাকে। তারা বাড়িটির দারোয়ানের কাছে গিয়ে জানতে চাইলেন যে, তারানকো এবং আওয়ামী লীগ, বিএনপি’র নেতারা কখন বাড়িটিতে ঢুকেছেন, মিটিং শুরু হয়েছে কিনা, কতোক্ষণ পর বের হবেন? তাদের এই প্রশ্নবাণে অবাক হয়েছেন দারোয়ান মহোদয়।
তিনি এতোক্ষণ মিডিয়ার এই ‘লাইভ উৎসব’, সমাবেশ বেশ উপভোগই করছিলেন। মৃদু হেসে তিনি জানালেন, তারানকো নামের কোন ব্যক্তি’র খবর তার কাছে নেই। আশরাফ-ফখরুলকেও এই তল্লাটে দেখা যায় নি। টনক নড়লো রিপোর্টারদের।
লজ্জায় মূর্চ্ছা যাবার যোগাড়। তাহলে বারিধারা’র এই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পাঠক, দর্শকদের যা জানানো হলো, তা কি কেবলই নাটিকা? তারানকো মহোদয় তাহলে কই উধাও হলেন, আর বৈঠক? রিপোর্টারদের ধরণী দ্বিধা হও দশা। রিপোর্টারদের ধোঁকা খাওয়ার বিষয়টি আরো নিশ্চিত হলো যখন তারানকো বিকেলে সোনারগাঁওয়ে প্রেস ব্রিফিং ডেকে বসেন। এই ব্রিফিংটি একবার স্থগিত করা হয়েছিল।
সব মিডিয়া যখন বারিধারা’র বাড়ি’র সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে, তখন তারানকো মিডিয়া’র যন্ত্রণা ছাড়াই নির্বিঘ্নে আশরাফ-ফখরুলের সংগে বৈঠক শেষ করেছেন। রিপোর্টারদের চোখে ধুলো দিতে শতভাগ সফল তিনি।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, চোখের ধুলো কোনো মিডিয়াই কেন ঝেড়ে ফেলতে পারে নি। তারানকো’র সঙ্গে আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকটি কোথায় হচ্ছে, তা একজন রিপোর্টার বা সংবাদকর্মীও জানতে পারবেন না, রিপোর্টারদের সোর্সে’র এতো দৈন্যদশা? সচরাচর দেখা যায়, অনেক গোপন বৈঠক বা ঘটনার খবর সব মিডিয়ার কাছে পৌঁছে না।
এমন অনেক ঘটনা আছে যেখানে দেখা যায় একটি-দু’টি টেলিভিশনের রিপোর্টার বা পত্রিকার ফটো সাংবাদিক আগেভাগে খবর পেয়ে চলে আসেন। পরে অন্যরাও খবর পেয়ে ভিড় করতে থাকে। আবার কোনো কোনো সময় এমনও দেখা যায় যে,একটি-দু’টি টেলিভিশন ও পত্রিকার বাইরে আর কারো কাছে খবরটি পৌঁছায় না।
অনেক গোপন বৈঠক হয় যার খবর কেবল দুই-একজন রিপোর্টারের কাছেই পৌঁছায়। বাকিরা পরে তাদের কাছ থেকে খবরটি নিয়ে নেন। কিন্তু ১০ ডিসেম্বরের বৈঠকটি কোথায় হচ্ছে, সেই খবরটি একজন রিপোর্টারের কাছেও পৌঁছবে না এটা সংবাদ কর্মী হিসেবে আমিও মেনে নিতে পারছি না।
কেন সকল সংবাদকর্মী’র চোখে ধুলো পড়লো? সেদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমের যে রিপোর্টার সহকর্মীরা বারিধারার ঐ বাড়িটি’র সামনে ছুটে গিয়েছিলেন, কথা বলেছি তাদের সঙ্গে। কথা বলে যা জানতে পেরেছি তাহলো-এটিএন নিউজের রিপোর্টার প্রথমে তারানকো’র গাড়ি তাড়া করে বারিধারার বাড়িটি’র সামনে আসেন। তিনি তারানকো’র গাড়িটি ঐ বাড়িতে ঢুকতে দেখে নিজে থেকেই নিশ্চিত হয়ে যান যে, এখানে কোনো একটি বৈঠক বসবে। তারপর বারিধারায় যে মিডিয়াকর্মীরা গিয়েছেন, তিনি তাদেরকে বলেছেন নিজ চোখে তারানকোকে এই বাড়িতে ঢুকতে দেখেছেন। যার ফুটেজ তার কাছে আছে এবং সেই ফুটেজ এটিএন নিউজে প্রচার হয়েছে। তাকে বিশ্বাস করে বসেন সব মিডিয়াকর্মীই। তবে হাস্যকর ও ভর্ৎসনা করার মতো বিষয় হলো, সন্ধ্যায় যখন মিডিয়াকর্মীরা এটিএন নিউজের ঐ রিপোর্টারকে ছেঁকে ধরলেন, জানতে চাইলেন নিজ চোখে দেখার বিষয়টি, তখন তার উত্তর: ‘আমি দেখি নি। ’
আমার ক্যামেরাম্যান তারানকোর ছবি তুলেছেন। যখন জানতে চাওয়া হলো আপনার ক্যামেরাম্যান কি তারানকোকে চেনেন? তখন উত্তর এলো, ক্যামেরাম্যান একজন বিদেশিকে দেখেছিলেন। যাই হোক এটিএন নিউজের রিপোর্টারের উপর আস্থা রেখেই অন্য রিপোর্টাররা আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র বিভিন্ন সূত্রে(!) খবর নিয়েও জানেন যে তারানকো’র সঙ্গে একটি বৈঠক হবে বা হবার পথে। কিন্তু কোথায় হবে বা হচ্ছে এবিষয়ে দলীয় সূত্রগুলো নিশ্চিত করে নি।
বৈঠক হবে এই নিশ্চয়তা পাওয়া এবং তারানকো’র গাড়ি এই বারিধারা’র বাড়িতে ঢোকাতে তারা দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়েছেন। অনেকে আবার চার না মিলিয়ে হাজির হয়েই লাইভ দিতে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন। আসলেই বৈঠক হচ্ছে কিনা, তারানকো ঐ বাড়িতে আছেন কিনা—তা যাচাইয়ের ফুরসত তারা পান নি।
যেহেতু টেলিভিশন রিপোর্টাররা বৈঠক হচ্ছে বলে নিশ্চিত করে কথা বলছেন, তাই অনলাইন পত্রিকা এবং সংবাদপত্রের রিপোর্টাররাও নিজে থেকে ঘাম ঝরাতে চান নি। অবাক করার বিষয় হলো, ঐ মুহূর্তে তারানকোর সঙ্গে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নেতাদের গুলশানের যে বাড়িতে বৈঠক চলছিল, তার পাশেই মানবকণ্ঠ পত্রিকার অফিস। মানবকণ্ঠ পত্রিকার বার্তাকক্ষ থেকে তাদের রিপোর্টারকে জানানো হয়েছে, বৈঠকটি সম্ভবত তাদের অফিসের পাশে নিল ওয়াকারের বাড়িতে হচ্ছে। কিন্তু রিপোর্টার তা কানে তোলেন নি। তিনি আর সবার সঙ্গেই ঝাঁপ দিয়েছেন। রয়ে গেছেন বারিধারার ঐ বাড়িটির সামনেই। রিপোর্টাররা তারানকোর ধুলো থেকে চোখ রক্ষা করতে পারেন নি প্রথমত তাদের অতি আত্মবিশ্বাসের জন্য। দ্বিতীয়ত সিন্ডিকেট সাংবাদিকতার চর্চা এবং তৃতীয়ত সোর্সের ঘাটতির কারণে।
রিপোর্টারদের মধ্যে শমসের সাহেব(সব জান্তা শমসের) হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। তারা ভাবেন সবকিছুই তারা এতোটেই জানেন যে, অন্যের সহায়তা নেবার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন বোধ করেন না বলেই তারা সেদিন যতোটা তথ্যের যাচাই-বাছাই করার দরকার ছিল সেটি করেন নি। অবহেলা করেছেন। তাদের উচিত ছিল, বাড়িটির সিকিউরিটি গার্ডের সঙ্গে কথা বলে সঠিক তথ্য খুঁজে বের করা সেখানে উপস্থিত রিপোর্টারদের কেউ কেউ দাবি করছেন তারা বাড়িটির সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। সিকিউরিটি গার্ড নাকি তাদের জানিয়েছে, তারানকো ঐ বাড়িতে ঢুকেছেন। আওয়ামী লীগ–বিএনপি’র কেউ এই বাড়িতে এসেছেন কিনা সেই প্রশ্নের উত্তরে সিকিউরিটি গার্ড নাকি জানিয়েছে, যাকে দেখা গেছে তিনি কোন দলের সে ব্যাপারে সে নিশ্চিত নয়। তবে তাকে রাতের টকশোতে দেখা যায়। ব্যস, এতে আবারো দুইয়ের সঙ্গে দুই মিলিয়ে নেওয়া হলো। ঐ বাড়ির ভেতর থেকে কেউ বের হচ্ছেন কিনা, নজর রাখার দরকার ছিল সেদিকে। কিন্তু এই কাজটি খুব গা লাগিয়ে কেউই করেন নি। ফ্ল্যাটবাড়িতে এক ফ্ল্যাটের খবর আরেক ফ্ল্যাটে বাসিন্দার কাছে পৌঁছায় না। এক্ষেত্রেও তেমনটি হবার কথা। তাই যারা বাড়িটি থেকে বের হয়েছেন তারা রিপোর্টারদের প্রত্যাশিত উত্তর দিতে পারেন নি। রিপোর্টাররা ঐ ফ্ল্যাটের নির্দিষ্ট কোনো বাসিন্দার দেখা পান নি। জোগাড় করতে পারেন নি সেই ফ্ল্যাটের কোনো ল্যান্ডফোন নম্বর(বিষয়টি তাদের ভাবনায় এসেছিল কিনা, সন্দেহ রয়েছে)।
ল্যান্ডফোন নম্বরটি পেলে সেখানে ফোন করে একটা কিছু আঁচ করা যেতো নিশ্চিত। রিপোর্টারদের কৌশলে বাড়িটির ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করার প্রয়োজন ছিল। আর সিন্ডিকেট সাংবাদিকতার ভয়াল গ্রাসে নিজেদের সঁপে দেয়ার কারনে, একযোগে চলতে গিয়ে কেউ দলছুট হয়ে আলাদাভাবে তারানকোর অবস্থান নিশ্চিত করার চেষ্টা করেন নি। সিন্ডিকেট সাংবাদিকতাকে বার্তাকক্ষগুলোও প্রশয় দিয়ে গেছে। যার মাশুল এবার দিতে হয়েছে গণমাধ্যমকে। সবচেয়ে বড় যে কারণটি, তাতো গণমাধ্যমের দিকে বিশেষ করে টেলিভিশন পর্দায় তাকালেই বোঝা যায়। রিপোর্টাররা যদি সোর্সের নেটওয়ার্কের সংগে যুক্ত থাকতেন, তাহলে সেদিন তারানকো’র অবস্থান সম্পর্কে একজন হলেও রিপোর্টার অবহিত হতেন। তাহলে সবার চোখে ধুলো দিতে পারতেন না তারানকো। রিপোর্টাররা রাজনৈতিক দলগুলোতে নির্ভরযোগ্য সোর্স তৈরি করতে পারেন নি। যদি সোর্স নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত থাকতেন তারা, তাহলে যে কোনো উপায়েই হোক বৈঠক কোথায় হচ্ছে সেই খবরটি চলে আসতো। সোর্স থাকতে পারতো কূটনৈতিক অঙ্গনেও। ঐদিন যারা তারানকো’র বৈঠক ফলো করছিলেন তাদের এক-দুইজন ছাড়া কেউ কূটনৈতিক বিটের রিপোর্টার ছিলেন না। কিন্তু তাদের মিডিয়ায় কূটনৈতিক বিটের যে রিপোর্টাররা ছিলেন, তারাও এই খবরটির সংগে ছিলেন না। আমি বলতে চাই, বার্তাকক্ষগুলোও দলবদ্ধ প্রয়াসের নিদর্শন দেখাতে পারে নি। তারা মাঠের রিপোর্টারের উপরই ভরসা করে ছিল। সাংবাদিকতায় ‘ক্রসচেক’ বলে যে কথাটি রয়েছে, সেই ফর্মুলাটি অনুসরণ করে নি বার্তাকক্ষ। ফলে পাঠক-দর্শকের কাছে নিজেদের হাজির করেছে নির্বোধ গণমাধ্যম হিসেবে। নির্বোধ সেই ক্ষণটির সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন তারানকো। ২০১৩’র সেই ধুলো চোখ থেকে মুছে ফেলে, ২০১৪’তে গণমাধ্যম এবং সকল সংবাদকর্মী পাঠক-দর্শকের কাছে বিশ্বস্ত হয়ে উঠুক, এই প্রত্যাশা বা শপথ করার সময় এখনই।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টেলিভিশন। ইমেল: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৩