চাঁদপুরের মতলব উত্তরে মেঘনা সংযুক্ত ধনাগোদা নদীর ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। এতে আতঙ্কে দিনযাপন করছেন উপজেলার সুলতানাবাদ চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দা।
বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে গ্রামের একমাত্র চরলক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। গ্রামের একমাত্র মাদরাসা ও মাজার প্রায় বিলীন হওয়ার পথে।
ভাঙন এলাকায় গিয়ে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে ধীরে ধীরে ধনাগোদা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে চরলক্ষ্মীপুরের কয়েকশত একর ফসলি জমি। নদীবেষ্টিত চরলক্ষ্মীপুরের অধিকাংশ মানুষই কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এই নদী ভাঙনের কারণে এখানকার কৃষকরা প্রায় সর্বশ্রান্ত হয়ে পড়েছে। তাদের দাবি যত দ্রুত সম্ভব কোনো রকমভাবে হলেও গ্রামবাসীকে নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করা।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসীর মধ্যে সেলিম প্রধান ও কামরুজ্জামান রিপন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নদীর ভাঙনের শিকার হচ্ছি। গত তিন মাস ধরে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। অনেক ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন বসতভিটা নিয়ে আমরা আতঙ্কে দিনযাপন করছি।
জমিতে ফসল আবাদ করে আমাদের সংসার চলে। সেই ফসলি জমিটুকুও নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছি। এই অবস্থায় সরকার যদি আমাদের বসতভিটা টুকু রক্ষা করার ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে মাথা গোঁজার মতো একটু ঠাঁই হবে। এখানকার মানুষের শহরে বা অন্য কোথাও গিয়ে জমি কিনে বসতি করার সামর্থ্য নেই বলেন তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা কাজি নাসির উদ্দীন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস প্রধান ও আব্দুল কাদির বলেন, চরলক্ষ্মীপুর গ্রামটি একেবারে নদীবেষ্টিত। গ্রামের চারদিকে নদী। এখানে প্রায় চার থেকে সাড়ে চার হাজার মানুষের বসবাস। একটি স্কুল, মাদরাসা, মসজিদ, মাজার ও ঈদগা রয়েছে। নদী ভাঙনের যে তীব্রতা দেখা দিয়েছে তাতে গ্রামের সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। মাদরাসা ও ঈদগাহের একেবারে পাশেই নদী চলে এসেছে। যেকোনো সময় গ্রামের ঈদগাহ ময়দানটি নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। এই ভাঙন প্রতিরোধে আমরা উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট অফিসে বহুবার আবেদন করেছি। কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সুলতানাবাদ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী প্রধান বলেন, আমি চেয়ারম্যান থাকাকালীন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সংসদ সদস্য ছিলেন। ওনাকে একাধিকবার বলার পরেও উনি শুধু আশ্বাস দিয়ে গেছেন। কিন্তু নদী ভাঙন প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এভাবে ভাঙতে থাকলে গ্রামটি প্রায় বিলীন হয়ে যাবে।
চরলক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি এ এইচ এম জামাল সাকিব বলেন, পুরো গ্রামের শিশুদের জন্য একটিমাত্র স্কুল। নদী ভাঙতে ভাঙতে প্রায় স্কুলের কাছে চলে এসেছে। স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। নদী ভাঙন প্রতিরোধে এখনই ব্যবস্থা না নিলে স্কুল ও গ্রামবাসীকে রক্ষা করা যাবে না। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ যত দ্রুত সম্ভব এই গ্রামটিকে রক্ষা করতে নদী ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম শাহেদ বলেন, ভাঙনের বিষয়টি আমি জেনেছি। সরেজমিন সেখানকার পরিস্থিতি দেখে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরএ