জীবনযুদ্ধের প্রতিটি ঢেউয়ে অভ্যস্ত বরগুনার উপকূলীয় জেলেরা আজ দিশেহারা। বঙ্গোপসাগরে মাছের প্রজনন মৌসুমে ৫৮ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে ১৫ এপ্রিল থেকে।
এই সময়টুকুতে মাছ ধরার একমাত্র জীবিকা বন্ধ থাকায় বহু পরিবার পড়েছেন খাদ্য সংকটে। নদীতে নেমেও খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। সাগরে নৌকা-ট্রলারগুলো অলস পড়ে আছে, কেউ জাল বুনছেন, কেউ ঘাটে সময় কাটাচ্ছেন, কেউবা বাড়ি ফিরে গেছেন, ঘাটে নেই সেই চিরচেনা কোলাহল।
সরকার প্রতিবছরের মতো এবারও নিবন্ধিত জেলেদের প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা জানিয়েছে। কিন্তু কাগজপত্র আর দাপ্তরিক জটিলতার বেড়াজালে আটকে আছে সেই চাল।
জেলেরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এনজিও ও সমিতি থেকে নেওয়া সাপ্তাহিক ঋণের কিস্তির চাপ, এমন পরিস্থিতিতে জেলেদের ঋণের কিস্তি বন্ধ রাখাসহ নিষেধাজ্ঞার সময় চাল সহায়তা সঠিকভাবে পেলে কষ্ট কিছুটা হলেও দূর হতো দাবি জেলেদের। তবে দ্রুত জেলেদের নিষেধাজ্ঞার সময় চাল সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস জেলা মৎস্য বিভাগের।
উপকূলের সমুদ্রে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে বরগুনার কয়েক হাজার জেলে। জেলেদের অধিকাংশের রোজগার দিয়েই চলে পরিবারের ভরণপোষণ। মাছের প্রজনন বৃদ্ধির জন্য বঙ্গোপসাগরে ১৫ এপ্রিল খেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। আর এ কারণে বেকার হয়ে পড়েছে উপকূলীয় এলাকার জেলেরা।
আয় বন্ধ, তাই অতিকষ্টে চলছে পরিবার। তার ওপর আবার কিস্তি পরিশোধের চাপ। এই সময় টুকু ঋণের কিস্তি বন্ধ রাখার দাবি জেলেদের।
বরগুনা জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৪৬ হাজার ৪২১ জন। অনিবন্ধিত প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক।
বরগুনা সদর উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের জেলে নাসির বলেন, গত বছরের মতো এবারও নিষেধাজ্ঞা, কিন্তু চাল পাই নাই এখনো। ঘরে খাবার নাই, বাচ্চাগুলোকে কী দিমু? ঋণের কিস্তির টান তো আছেই।
বহু জেলে এনজিও বা সমিতি থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি দিতে পারছেন না। আয় নেই, অথচ কিস্তির চাপ আছে আগের মতোই। তারা চাচ্ছেন অন্তত এই নিষেধাজ্ঞার সময়টায় কিস্তি বন্ধ রাখার বিশেষ ব্যবস্থা হোক।
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসিন বলেন, গত বছরের থেকে হঠাৎ করে ১ মাস ৫ দিন ভারতের সঙ্গে মিল রেখে সাগরে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় দাপ্তরিক জটিলতার কারণে এখনো চাল পাননি জেলেরা তবে দ্রুতই জেলেদের মধ্যে সহায়তার চাল বিতরণ শুরু করব।
আরএ