ঢাকা, রবিবার, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০১ জুন ২০২৫, ০৪ জিলহজ ১৪৪৬

সারাদেশ

রাঙামাটিতে বাড়ছে পাহাড় ধস, আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১:২৩, মে ৩১, ২০২৫
রাঙামাটিতে বাড়ছে পাহাড় ধস, আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছে মানুষ

রাঙামাটি: বঙ্গোসাগরের সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে রাঙামাটিতে গত তিনদিন ধরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে । যে কারণে বেড়েছে পাহাড় ধসের ঘটনা।

 বিভিন্ন স্থানে ভেঙে পড়ছে গাছ-পালা। তবে পাহাড় ধস হলেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

বৃষ্টি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীরা দ্রুত সময়ে ছুটে যাচ্ছেন আশ্রয় কেন্দ্রে। এ পর্যন্ত জেলা শহরের লোকনাথ মন্দির আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ২০টি পরিবারের ৮০জন মানুষ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রাঙামাটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, রাঙামাটি শহরের ভেদভেদী যুব উন্নয়ন এলাকা এবং রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মনিকছড়ি এবং কলাবাগান এলাকাসহ বেশ কিছু স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। রাঙামাটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্তৃপক্ষ সড়ক থেকে মাটি সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করেছে। শহরের সার্ভার স্টেশন এলাকা এবং কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বড় গাছ ভেঙে পড়েছে।

রাঙামাটি সদর উপজেলা প্রশাসনের তথ্য মতে  জেলা শহরে ২৯টি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো হলো- চম্পানিরমার টিলা, চেঙ্গীর মুখ, আব্দুল আলী একাডেমি সংলগ্ন ঢাল, মাতৃমঙ্গল, কাঠালতলী মসজিদ কলোনী, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সংলগ্ন ঢাল, আলম ডকইয়ার্ড, গর্জনতলী মুখ, পুলিশ লাইন স্কুল সংলগ্ন ঢাল, অফিসার্স কলোনী, এডিসি হিল সংলগ্ন রাস্তার ঢাল, ওয়াপদা কলোনীর বিএডিসি পাহাড়ের ঢাল, দুদক অফিসের ঢাল, দেওয়ানপাড়া পাহাড়ের ঢাল, স্বর্ণটিলা পাহাড়ের ঢাল, রাজমনি পাড়া পাহাড়ের ঢাল, মুসলিম পাড়া পাহাড়ের ঢাল, পোস্ট অফিস কলোনি পাহাড়ের ঢাল, চম্পকনগর পাহাড়ের ঢাল, গৌধূলি আমানতবাগ স্কুলের পাহাড়ের ঢাল, কাদের ম্যানশন এলাকা, নতুন পাড়া পাহাড়ের ঢাল, আনসার ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ের ঢাল, উলুছড়া, শিমুলতলী, রূপনগর ও লোকমন্দির এলাকা।

কাউখালীর ঘাগড়া ইউনিয়নের কলাবাগান, জুনুমাছড়া, আনসার ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকা, কাশখালীর পাহাড়ি এলাকা, নানিয়ারচর উপজেলার বগাছড়ি, বুড়িঘাট, সাবেক্ষং, কাপ্তাই উপজেলার নতুন বাজার, ঢাকাইয়া কলোনী, রাইখালী, ওয়াগ্যা ও চিৎমরম ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করেছে প্রশাসন।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, জেলায় পাঁচ হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস করছেন। জেলায় অস্থায়ী ২৬৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে খোলা হয়েছে। এরমধ্যে জেলা শহরে ২৬টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

রাঙামাটি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ক্যাচিংনু মারমা বলেন,  বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুকত্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রাঙামাটিতে ১৮৮মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

রাঙামাটি জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) শিব শংকার বসাক বলেন, আপদকালীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এক হাজার ৩শ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১৫লক্ষ টাকা মজুদ রাখা হয়েছে।  

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ  হাবিব উল্লাহ  (মারুফ) বলেন, শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত আগামী পাঁচদিনের জন্য জেলা প্রশাসন কন্ট্রোল রুম চালু রেখেছে। দিন-রাত এ কন্ট্রোলরুমে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বরতরা দায়িত্ব পালন করবেন। সেখানে টেলিফোন নাম্বার দেওয়া হয়েছে। যেকোনো তথ্য সেখান থেকে পাওয়া যাবে এবং যেকোনো তথ্য সেখানে জানানোর জন্য বলেছেন তিনি। সংকট বা বিপদের খবর আসলে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।

পাহাড় ধসে ২০১৭ সালে দুই কর্মকর্তা ও পাঁচ সেনাসদস্যসহ ১২০ জন, বেসরকারি হিসেব মতে আরও বেশি এবং ২০১৮ সালে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিলো। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মানিকছড়ি শালবাগান অংশে ১০০ মিটার রাস্তা সম্পূর্ণ ধসে গিয়ে দীর্ঘ ৯দিন সারাদেশের সঙ্গে রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে।


জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।