ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৩ জুন ২০২৫, ০৬ জিলহজ ১৪৪৬

সারাদেশ

কোরবানি

রাঙামাটিতে ৫৫০ কোটি টাকার ব্যবসার সম্ভাবনা, পছন্দের শীর্ষে ‘লাল বিরিষ’

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৪১, জুন ১, ২০২৫
রাঙামাটিতে ৫৫০ কোটি টাকার ব্যবসার সম্ভাবনা, পছন্দের শীর্ষে ‘লাল বিরিষ’

রাঙামাটি: আগামী ৭ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা। এ উপলক্ষে মুসলিমরা পশু কোরবানি দেবেন।

পশু কোরবানিতে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে গরুর।
গরুর বিভিন্ন জাত থাকলেও রাঙামাটিতে পাহাড়ি গরুর সবচেয়ে বেশি চাহিদা বাড়ে কোরবানি ঈদে। এ গরুর মাংসের স্বাদ অনন্য এবং দামও সাধ্যের মধ্যে থাকায় পাহাড়ি গরু জনপ্রিয়তা পেয়েছে।  পাহাড়ি গরুগুলো ‘লাল বিরিষ’ বা ‘রেড চিটাগাং’ নামে বেশ পরিচিতি পেয়েছে।

প্রাণিসম্পদ দপ্তর রাঙামাটি জেলা কার্যালয় থেকে জানা গেছে, জেলায় এবার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ৬৮ হাজার ৮৬৫টি আর জেলায় চাহিদা রয়েছে ৬২ হাজার ৮৮২টি পশুর। এর মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার ছাগল ও ভেড়া রয়েছে। বাকিগুলো গরু, মহিষ। উদ্বৃত্ত রয়েছে পাঁচ হাজার ৯৮৩টি পশু।  
কার্যালয়টি থেকে আরও জানা গেছে, পুরো ১০ উপজেলার ১৯টি হাটবাজারে পশু বিকিকিনি শুরু হয়েছে। এসব হাটে ১৯টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করবে। এতে সহযোগিতা করতে কাজ করবে দুটি মনিটরিং টিম। বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে একটি কেন্দ্রীয় বুথ থাকবে বলে জানানো হয়।

এদিকে আসন্ন কোরবানি ঈদ উপলক্ষে শনিবার (৩১ মে) রাঙামাটিতে পশুর হাট না বসতে শুরু করেছে। তবে বৃষ্টির কারণে বাজার এখনো জমেনি। জেলার উপজেলাগুলো থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা পশু সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ গরু ট্রলারে করে এনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে।

চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, চন্দনাইশসহ বিভিন্ন জেলার গরু ব্যবসায়ীরা রাঙামাটির এ পাহাড়ি গরু কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন। প্রাকৃতিকভাবে পাহাড়ি ঘাস, লতা-পাতা খেয়ে বড় হওয়ায় লাল বিরিষ গরুগুলো স্বাস্থ্যবান ও সুস্থ-সবল হয়। মাংসের স্বাদ অনন্য এবং চর্বিও কম হওয়ায় এসব গরুর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

চট্টগ্রাম থেকে আসা গরুর ব্যবসায়ী আব্দুল জব্বার বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশে খাবার ও যত্নে লালিত হওয়ায় পাহাড়ি গরুর স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং এগুলো তুলনামূলক বেশি মাংস দেয়। যে কারণে ক্রেতাদের কাছে গরুগুলোর চাহিদা বেশি। এজন্য আমরা দ্রুত পাহাড়ে এসে গরুগুলো সংগ্রহ করে থাকি।

তবে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গরু পরিবহন ও বিক্রির সময় নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। রাস্তাঘাটে বিভিন্ন টোল আদায়কেন্দ্রে অতিরিক্ত চাঁদা ও অনৈতিকভাবে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এবং নির্দিষ্ট গন্তব্যে গরু পৌঁছাতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গরু পরিবহন ও বাজারে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে মনিটরিং টিম কাজ করছে। তবে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখা হবে।

রাঙামাটির উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রতন কুমার দে বলেন, রাঙামাটির ১৯টি হাটে আমাদের ১৯টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করবে। উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা এসব কাজের সমন্বয় করবেন। পশুর হাট কার্যক্রমে আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।
রাঙামাটি জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. তুষার কান্তি চাকমা বলেন, জেলার বাঘাইছড়ি, বরকল, বিলাইছড়ি এবং লংগদু উপজেলার গরুগুলোর চাহিদা ব্যাপক। প্রাকৃতিক পরিবেশে গরুগুলো বেড়ে ওঠায় গরুর মাংসের স্বাদ খুব ভালো। গরুগুলো কম চর্বিযুক্ত এবং মাংসও সুস্বাদু। যে কারণে দিন দিন পাহাড়ি গরুর চাহিদা বাড়ছে। এ জাতের গরুগুলো মাঝারি এবং ছোট আকারের হলেও দাম কিন্তু কম নয়। মাঝারি আকারের গরুগুলোর বাজার দর দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা এবং ছোটগুলোর দাম ৬০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকার মধ্যে।

প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আরও বলেন, জেলায় এবার পশু মজুদ রয়েছে ৬৮ হাজার ৮৬৫টি। এ মৌসুমে রাঙামাটিতে প্রায় ৫৫০ কোটি টাকার গরু-ছাগল বিক্রি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।