আর মাত্র দুদিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। শেষ সময়ে পশু কিনতে ভিড় বেড়েছে হাটগুলোতে।
সবকিছু ছাপিয়ে এবার যশোরে কোরবানির ঈদের প্রধান আলোচ্য হয়ে উঠেছে গরুর সাইজ (আকৃতি)। ব্যক্তিগত খামার থেকে শুরু করে পশুর হাট সব স্থানেই মাঝারি সাইজের গরুর প্রতি আগ্রহ বেশি ক্রেতাদের। হাট মালিকদের তথ্য এবার ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে গরু কিনতে চাচ্ছেন বেশিরভাগ ক্রেতারা।
যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের হিসেব মতে জেলায় চাহিদার অতিরিক্ত কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে। তবে, সেই হিসেবের খুব একটা প্রয়োজন পড়ছে বলে মনে হয় না। কারণ, গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানি দেওয়ার মানুষের সংখ্যা কমেছে বেশ। যা নিয়ে খামারিরা রীতিমতো দুশ্চিন্তায়।
যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার মো. রাশেদুল হক বাংলানিউজকে জানান, এবারের ঈদুল আজহায় জেলায় মোট ৯৫ হাজার ৮১২টি পশুর চাহিদা রয়েছে। সেখানে পশু প্রস্তুত রয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার ৫৭৪টি। এর মধ্যে রয়েছে গরু ৩৫ হাজার ৩৩৮, মহিষ ৯৫, ছাগল ৩৮ হাজার ৫৫৮ এবং ভেড়া ৫৮৩টি।
জেলার ১৩ হাজার ১৪৬ জন খামারি ও ব্যক্তিগতভাবে লালন-পালন করা পশু মালিকদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ডাক্তার রাশেদুল হক বলেন, যশোর জেলায় এবার ১৮ হাজার সাতশ’ ৬২ কোরবানির পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে।
খামারি এবং বাড়িতে লালন করা পশুর মালিকদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, প্রতি বছর কোরবানির এক-দুই মাস আগে থেকে ক্রেতাদের আসা-যাওয়া শুরু হয়। এবার সে অবস্থা কিছুটা দেখা যাচ্ছে। তিন থেকে সাড়ে তিন মণ সাইজের গরু ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে কিনতে চান ক্রেতারা। এর বেশি ওজনের গরুর ক্রেতা খুবই কম।
যশোর সদর উপজেলার ভায়না গ্রামের শফিউল ইসলাম শফি নিজস্ব খামারে বড় সাইজের গরু প্রস্তুত করেছিলেন বেশি লাভের আশায়। তার খামারের গরুর ওজন প্রায় ১৪ মণ। দাম হাঁকিয়েছিলেন পাঁচ থেকে-সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। শফির স্ত্রী বিউটি খাতুন জানান, মাত্র কয়েকজন খামারে গরুর জন্য এসেছিলেন। তারা বড় সাইজের গরু আর দাম শুনে দ্রুত চলে গেছেন।
যশোর শহরতলীর শেখহাটি কালিতলার খামারি সুজন রায় বলেন, এবার যেকোনো সময়ের তুলনায় গো খাদ্যের দাম বেশি। সেই তুলনায় গরুর দাম পাওয়া যাচ্ছে না। আগে যে সাইজের গরু এক লাখ ২০ হাজার থেকে এক লাখ ৩০ হাজারে বিক্রি করেছিলাম এবার তার দাম ৭০-৮০ হাজারের বেশি বলছেন না কাস্টমার।
তিনি বলেন, এবার সব গরু বিক্রি হবে না বলেই মনে হচ্ছে। একই অবস্থা অন্যান্য খামারিদেরও।
মঙ্গলবার (৩ জুন) যশোরের সর্ববৃহৎ গরুর হাট শার্শা উপজেলার সাতমাইল জমে উঠেছিল। এদিন হাটে প্রচুর গরু তোলা হয়। ক্রেতাও ছিল পর্যাপ্ত। বিক্রিও হয়েছে বেশ। দূর-দূরান্ত থেকে মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ভরে মানুষজন এসেছিলেন হাটে। তারা দরদাম করে গরু কেনার পর অন্য বাহনে চাপিয়ে ফিরে গেছেন।
যশোর শহর থেকে হাটে যাওয়া নাজিম উদ্দিন বলেন, সাতমাইলে মঙ্গলবার ছিল ভিআইপিদের মেলা। তবে দাম নিয়ে অসন্তুষ্টি দেখা গেছে ক্রেতাদের মধ্যে। বিক্রেতারাও দাম নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, যে গরুর দাম হওয়ার কথা এক লাখ, খরিদ্দার তার দাম ৭০ হাজারের ওপরে উঠতেই চান না।
যশোর রাজারহাট এলাকার অস্থায়ী কোরবানির হাটের অন্যতম ইজারাদার খুরশিদ আলম বাবু বাংলানিউজকে জানান, গত পাঁচ দিনে এই হাটে ৭০ থেকে ৮০টি গরু বিক্রি হয়েছে। যার অধিকাংশই বিক্রি হয়েছে শেষ দুই দিনে।
শেষ মুহূর্তে হাট জমতে শুরু করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা মাঝারি সাইজের গরু বাজারে তুলবেন তাদের বিক্রির সম্ভাবনা বেশি।
আরএ