ঢাকা, বুধবার, ১ আশ্বিন ১৪৩২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

পদ্মার ভাঙনে চর আষাড়িয়াদহ ছাড়ল ১৫০ পরিবার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:১৮, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫
পদ্মার ভাঙনে চর আষাড়িয়াদহ ছাড়ল ১৫০ পরিবার

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন প্রতিবছরই পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবারের বর্ষায়ও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

নদীর পানি কিছুটা কমলেও শুরু হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। এতে অন্তত চারটি গ্রামের প্রায় ১৫০ পরিবার চর ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।

প্রায় ৩৬ বর্গকিলোমিটারের এ চরের পরেই ভারতীয় সীমান্ত। চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম জানান, পানি বৃদ্ধির সময় চর আষাড়িয়াদহের কয়েকটি ওয়ার্ড তলিয়ে যায়। তখন অনেকে চর ছেড়ে আশপাশের এলাকায় চলে যান। পানি নামার পর ভাঙন শুরু হওয়ায় আর ঘরে থাকার উপায় নেই, ফলে অনেকেই ঘরবাড়ি ভেঙে পাড়ে চলে যাচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হঠাৎপাড়া, চর বয়ারমারি, কামারপাড়া, জামাইপাড়া ও আমতলা খাসমহল গ্রামে ভাঙন চলছে। জামাইপাড়ার সাইদুর রহমানের বাড়ির অর্ধেক নদীতে ভেঙে পড়েছে, বাকিটা নৌকায় তোলার চেষ্টা করছেন তিনি। এর আগে দুবার বাড়ি সরালেও এবার আর চরে থাকার জায়গা না থাকায় তিনি নদীর ওপাড়ে ভাইয়ের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন।

একইভাবে হঠাৎপাড়ার জহুরুল ইসলাম জানান, ১৫ বছর আগে একবার ভাঙনের কারণে বাড়ি সরাতে হয়েছিল। এবার আর চরে থাকার সুযোগ নেই। তিনি চম্পকনগরে জমি কিনে সেখানে যাচ্ছেন। তার ভাষায়, নদীর পানি নামছে, কিন্তু ভাঙন ভয়াবহ। ইতিমধ্যে অন্তত ১৫০ পরিবার চরে থেকে চলে গেছে।

নৌকায় ছোট্ট সন্তানকে নিয়ে বসেছিলেন বয়রামারি থেকে আসা গৃহবধূ তাহেরা খাতুন।

তিনি বলেন, ‘ছ বছর আগে একবার বাড়ি ভাইঙতে হয়েছিল। এখুন আর অন্য জাগা নাই যে বাড়ি কইরব। জন্মের থেকেই চরে থাকি, আর থাকা হলো না। এপাড়ের কানাইডাঙ্গা গ্রামে ভাসুরের বাড়ি। সেখানেই চলে যাচ্ছি। ভাসুরের বাড়িতে থাইকব। জমিটমি দেখে পরে বাড়ি কইরব। ’

চর আষাড়িয়াদহ এলাকায় পদ্মার পানির বিপৎসীমা কত, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে রাজশাহী শহরসংলগ্ন এলাকায় বিপৎসীমা ১৮.০৫ মিটার। সম্প্রতি পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল ১৭.৪৯ মিটার, যা শনিবার দুপুরে নেমে দাঁড়ায় ১৬.৮৫ মিটারে। তবুও চরের বহু এলাকা এখনও পানিতে তলিয়ে আছে।

চর আষাড়িয়াদহ ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা খুব অসহায় অবস্থায় আছি। মাত্র ১০ কেজি করে চাল দিতে পেরেছি। যার ঘরবাড়ি ভেঙে যাচ্ছে, তার কাছে এটা কিছুই নয়। সরকারকে এখনই এগিয়ে আসতে হবে। নয়তো প্রতিবছরের ভাঙনে একসময় এ চর মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। ’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহমেদ জানান, তার কাছে ১১০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য আছে।  

তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করছি। সরকারের পক্ষ থেকে ঢেউটিনসহ সহায়তা দেওয়া হবে। ’

আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।