ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ আশ্বিন ১৪৩২, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

প্রথম আলো জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শহীদদের বিতর্কিত করছে, মানববন্ধনে দাবি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৫১, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫
প্রথম আলো জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শহীদদের বিতর্কিত করছে, মানববন্ধনে দাবি প্রথম আলো’র বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে বুধবার (১৯ সেপ্টেম্বর) যশোরে মানববন্ধন করেন জুলাই শহীদদের স্বজন ও সাধারণ মানুষ

যশোর: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যশোরের জাবির হোটেলে অগ্নিকান্ডে নিহত চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবরার মাশরুন নীলকে নিয়ে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনকে বিভ্রান্তিকর, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে অভিহিত করেছেন তার পরিবারসহ অন্যান্য নিহতদের স্বজনেরা।

জুলাই শহীদদের স্বজনেরা অভিযোগ করেন, প্রথম আলো গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের বিতর্কিত করতে এবং আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এমন বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করছে।

এ কারণে স্বজনেরা প্রথম আলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশের দাবি জানান।

প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদনে নীলের ‘শহীদ’ পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করায় ক্ষুব্ধ স্বজনেরা বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) প্রেসক্লাব যশোরের সামনে মানববন্ধন করেছেন। বক্তারা বলেছেন, এই প্রতিবেদনে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শহীদদের স্মৃতিকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা।  

মানববন্ধন শেষে বিক্ষুব্ধরা যশোরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অসত্য ও উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রকাশের কারণে প্রথম আলো পত্রিকায় অগ্নিসংযোগ করেন।  

তারা প্রশ্ন তোলেন, একজন সাংবাদিক কোনো ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা না বলে তার নামে মন্তব্য ছাপালে সেটি গুরুতর নীতিবিরোধী কাজ।  

সময় আবরার নীলের মা জেসমিন আক্তার অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার নয় বছরের বাচ্চা কিভাবে দুর্বৃত্ত হলো? সে তো গিয়েছিল মানুষকে সাহায্য করতে। আগুন নেভাতে গিয়ে পুড়ে মারা গেছে। ও ছিল নিষ্পাপ শিশু। তাকে নিয়ে আর রাজনীতি করবেন না। তাকে লুটকারির কলঙ্ক দেবেন না। ’

সম্প্রতি প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, যশোরের জাবির হোটেলে ৫ আগস্টের অগ্নিকাণ্ডে নিহত ২৪ জনের মধ্যে ১৬টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, তারা কেউ ‘শহীদ’ হিসেবে স্বীকৃতি চান না।  

তবে নিহতদের স্বজনরা এ তথ্যকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তাদের অভিযোগ, কোনো সাংবাদিক তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি, অথচ প্রতিবেদনে তাদের মতামত দেখানো হয়েছে।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের সাবেক আহ্বায়ক রাশেদ খান, শহীদ ইউসুফ আলীর মা শাহীনা খাতুন, শহীদ সোহানুর রহমান সোহানের বাবা আনোয়ার হোসেন লাল্টুসহ নিহতদের পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও স্থানীয় নাগরিকরা।

প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট যশোর শহরের জাবির হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৪ জন নিহত হন। আগুন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে গিয়েই প্রাণ হারান তারা।  

নিহতদের অনেককে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান শহীদ’ হিসেবে অভিহিত করা হলেও, প্রথম আলোর প্রতিবেদন সে দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে। এতে স্বজনদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় এবং প্রতিবাদের মাধ্যমে তারা শহীদ সন্তানের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখার আহ্বান জানান।

মানববন্ধন শেষে জুলাই শহীদদের স্বজন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ মিছিল সহকারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে যান। তারা অসত্য, বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রকাশের জন্য প্রথম আলো’র শাস্তি দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে প্রথম আলো পত্রিকায় অগ্নিসংযোগ করেন।  

জাবির হোটেল নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের যশোর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের। তিনি বিনা ভোটের নির্বাচনে যশোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের এমপি ছিলেন।

এই হোটেলকে বলা হয় আওয়ামী জমানায় যশোরের দুঃশাসন আর নিপীড়নের প্রতীক। যশোরের সকল প্রকার অন্যায়, অত্যাচার আর সমাজবিরোধী কাজের পরিকল্পনা করা হতো ১৭তলা বিশিষ্ট এই অভিজাত হোটেল থেকে। এটি ছিল সমাজবিরোধীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল।  

এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।