ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩২, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৭

সারাদেশ

বগুড়ায় আসামি ছিনিয়ে নেওয়া মামলায় ২১ নারী-পুরুষ গ্রেপ্তার, এসআই প্রত্যাহার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:২৪, অক্টোবর ৬, ২০২৫
বগুড়ায় আসামি ছিনিয়ে নেওয়া মামলায় ২১ নারী-পুরুষ গ্রেপ্তার, এসআই প্রত্যাহার বগুড়া, আসামি, পুরুষ গ্রেপ্তার, এসআই, প্রত্যাহার

বগুড়ার শিবগঞ্জে পুলিশের ওপর গোবর ও কাদা নিক্ষেপ করে হাতকড়াসহ আওয়ামী লীগ নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ২১ জন নারী-পুরুষকে আটক করেছে পুলিশ।  

এদিকে এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে শিবগঞ্জ থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল্লাহ আল মামুনকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে।

 

অপরদিকে এসআই মামুন আওয়ামী লীগ নেতা রেজ্জাকুল ইসলাম রাজুকে গ্রেপ্তার না করার আশ্বাস দিয়ে এক লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আসাদুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা।  

শনিবার রাতে শিবগঞ্জ উপজেলার চক ভোলাখাঁ গ্রামে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রেজ্জাকুল ইসলাম রাজুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসময় গ্রামের নারী-পুরুষ পুলিশের ওপর গোবর ও কাদা নিক্ষেপ করে রাজুকে হাতকড়াসহ ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় শনিবার রাতেই এসআই আব্দুল্লাহ আল মামুন বাদী হয়ে রেজ্জাকুল ইসলাম রাজুসহ দুই শতাধিক নারী-পুরুষের নামে থানায় মামলা করেন। রোববার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ওই গ্রামে পুলিশ কয়েক দফা অভিযান চালায়। এসময় গ্রেপ্তার করা হয় ১১ জন নারী ও ১০ জন পুরুষকে। গ্রেপ্তারকৃতরা চক ভোলাখাঁ গ্রামের বাসিন্দা। তারা পেশায় ভ্যান চালক ও দিনমজুর। আর নারীরা গৃহিণী। তবে আওয়ামী লীগ নেতা রেজ্জাকুল ইসলাম রাজুকে সোমবার পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের সোমবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে শিবগঞ্জ থানার ওসি শাহিনুজ্জামান।  

এদিকে সোমবার চক ভোলাখাঁ গ্রামে গিয়ে দেখা যায় অধিকাংশ বাড়িতে তালা। কাউকে গ্রেপ্তার আবার কেউ গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাড়িতে নেই। শিশু আর বৃদ্ধ ছাড়া গ্রামে কেউ নেই।

শনিবার রাতে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন স্কুলছাত্র জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা রেজ্জাকুল ইসলাম রাজুর বাড়ি সংলগ্ন বাড়িতে তার মামাত ভাই শাহ আলমের বিবাহোত্তর বউ ভাত অনুষ্ঠান শেষ হয় শনিবার সন্ধ্যায়। এ কারণে বাড়িতে আত্মীয় স্বজনের ভিড় ছিল। রাত ৮টার দিকে রাজু বাড়ির পেছনে একটি মুদিদোকানে বসেছিলেন। এসময় মোটরসাইকেলে করে সাদা পোশাকে এক ব্যক্তি এসে রাজুকে আটক করে এক হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে মোটরসাইকেল ওঠায়। এমন সময় আসিফ নামে এক যুবক এসে পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে মোটরসাইকেলের চাবি কেড়ে নেন এবং রাস্তায় বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এতে ওই মহল্লা অন্ধকার হয়ে গেলে রাজু এক হাতে হ্যান্ডকাপ নিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যান।  রাজুর চিৎকারে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা এসে ওই ব্যক্তির চোখে মুখে গোবর এবং কাদা নিক্ষেপ শুরু করে। কিছুক্ষণ পর থানা পুলিশের গাড়ি এসে তাকে উদ্ধার করে।

শিবগঞ্জ থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আওয়ামী লীগ নেতা রাজু বিয়ের অনুষ্ঠানে আছেন এমন তথ্য পেয়ে তাকে গ্রেপ্তার করতে থানার এসআই রাজীব কৃষ্ণ ধরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম পুলিশের গাড়িতে করে চক ভোলাখাঁ গ্রামের দিকে রওনা দেয়। কিন্তু তার আগেই এসআই মামুন থানার কাউকে না জানিয়ে সাদা পোশাকে একাই মোটরসাইকেলে করে সেখানে গিয়ে রাজুকে আটক করে।
 
 প্রতিবেশীরা জানান, রাজু বাড়িতেই থাকতেন। থানা পুলিশের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। গ্রেপ্তার না করার জন্য এক সপ্তাহ আগেই এসআই মামুন রাজুর কাছ থেকে এক লাখ নিয়েছেন। তারপরে এসআই মামুন একাই এসে রাজুকে আটক করায় রাজুর বাড়ির লোকজন ক্ষুদ্ধ হয়ে পুলিশের ওপর গোবর ও কাদা মাটি নিক্ষেপ করে রাজুকে হাতকড়াসহ পালাতে সুযোগ করে দেন।

বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, এসআই আব্দুল্লাহ আল মামুনকে থানা থেকে প্রত্যাহার করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।